অবাক ভালোবাসা

টেনে-হিঁচড়ে মানুষকে ভালোবাসায় বেশ সহজেই ফেলে দিতে পারে বসন্ত। আমাদের ঋতুগুলোর বড্ড ক্ষমতা। চাইলেই হুটহাট করে যে কোনো কিছু করে ফেলতে পারে, ঘটিয়ে দিতে পারে! ঋতুচক্রে ঘুরে যেই বসন্ত আসে সেই মানুষ আরও মাতাল হয়ে ওঠে। কোকিলের ডাকে মনের একান্ত গহিন গোপনের সব খেরোখাতা প্রাণ ফিরে পেয়ে বসে। মানুষ ব্যাকুল হয়ে ওঠে প্রিয় মানুষের সানি্নধ্য পেতে। একটু ছোঁয়া পেতে। আজ তারুণ্য ভার্চুয়ালে মাতাল বলে যেই ধোঁয়াশা আছে বড়দের মাঝে, সমাজে; সেই বড় মানুষ আর সমাজও সেদিন মনের জানালার গ্রিলে হাত রেখে তারুণ্যের ভালোবাসাবাসি দেখে। একসময় তাদের মনেও জাগ্রত হয় ভালোবাসার বুনো স্বাদ। এই ভালোবাসা ফেরি করে বেড়ানো বসন্তটা তাই তো আমাদের ঋতুরাজ। এই ঋতুতে সাঁই সাঁই বেড়ে চলে সদ্য জন্ম নেওয়া ভালোবাসার পরিধিও। বাড়ে আবেগ, মমতাও। এই বসন্ত প্রকৃতিতে ঢুকতেই নিয়ে আসে ভালোবাসার অমর বাণী। বিশ্ব তখন আমাদের ভালোবাসায় বুঁদ হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যায়! বসন্ত ভালোবাসা এনে বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়। তখন তা হয়ে যায় বিশ্ব ভালোবাসা দিবস! দিনটিকে ঘিরে যেমন আনন্দের বান বয়ে আনে তেমনি অনেকে আবার কষ্টের জোয়ারে ভেসে যায়। ভালোবাসার মানুষ হারানোর কষ্টে। তবে সব কিছু ছাড়িয়ে সুদূর ইতালি থেকে সূত্রপাত হওয়া এ দিবসের চাঞ্চল্য এখন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও দোলা দিয়ে যায়!

ইতিহাসের বাঁকে : ইতিহাস ঘেঁটে ভ্যালেন্টাইন ডে বা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া যায়। সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছে মুক্ত বিশ্বকোষ-উইকিপিডিয়ায়। কী লিখেছে সেখানে? উইকিপিডিয়ার তথ্যানুযায়ী, ২৬৯ খ্রিস্টাব্দে ইতালির রোম নগরীতে বাস করতেন খ্রিস্টান ধর্মপ্রচারক এবং চিকিৎসক সেন্ট ভ্যালেনটাইন। সেই সময়ে ইতালিতে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিল বলে তখনকার রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্রাডিয়াসের হুকুমে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে বন্দি এবং কারাকক্ষে নিক্ষেপ করা হয়। বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি প্রধান কারারক্ষীর দৃষ্টিহীন মেয়েকে চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলেন। এতে সম্রাট ক্রাডিয়াস ক্ষিপ্ত হন এবং সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে হত্যা করেন। আর সেই দিনটি ছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি।
তারও অনেক পরে ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে পোপ সেন্ট জেলাসিউও ১৪ ফেব্রুয়ারিকে স্মরণীয় করে তোলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে_ তিনি এ দিনটিকে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে ঘোষণা করেন ভালোবাসার প্রতিমূর্তি রূপে। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পরিচিত ও উদযাপিত হয়ে আসছে।
এই দিবসে : বাংলাদেশে তরুণ-তরুণীদের মধ্যেই ভালোবাসা দিবস নিয়ে বেশি হৈচৈ দেখা যায় এবং এর যথেষ্ট কারণও আছে। ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে যেমন তরুণ-তরুণীদের মধ্যে একটা নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে তেমনি অনেকের মধ্যে বিষাদের ছায়াও নেমে আসে। তবে সব কিছুকে পেছনে ফেলে ভালোবাসা দিবসের ইতিবাচক ব্যাপারটাই সবার মধ্যে প্রতীয়মান হয়। ফলে দিনটিকে ঘিরে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার বন্ধনই আরও জোরালো এবং অটুট থাকার সংকল্পবদ্ধ হয়।
উদযাপনের সুর : কীভাবে এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখা যায়? কীভাবে উদযাপিত হলে দিনটির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হবে? কঠিন প্রশ্ন বটেই! তবে ব্যাপারটাকে খুব সহজেই সমাধান করা যায় এভাবে_ নিজের ভালোবাসার মানুষের পছন্দটাকে গুরুত্ব দিন। কেউ সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন, কেউবা আবার পার্কে কিংবা খোলামেলা কোথাও ঘুরতে ভালোবাসেন, কেউ খেতে, কেউবা আবার বেড়াতে যেতে ভালোবাসেন। আবার অনেকেই আছেন পছন্দ করেন নিজের পছন্দের মানুষের সঙ্গে একান্ত আলাপে। সুতরাং আপনি যদি আপনার ভালোবাসার মানুষকে গুরুত্ব দিতেই এই দিনটা উদযাপন করতে চান তবে তার মতো করেই আপনাকে উদযাপন করতে হবে। তবেই কেবল দিবসটির পরিপূর্ণ সদ্ব্যবহার হয়েছে বলা যাবে।
উপহারের রঙিন দুনিয়া : সবাই উপহার পেতে পছন্দ করে। আর সেটা যদি হয় স্পেশাল ডে উপলক্ষে, তবে তো কথাই নেই। কিন্তু কেমন উপহার? কী উপহার পেলে প্রিয় মানুষটি আনন্দে উদ্বেলিত হবে? হ্যাঁ, এটা ভাবনারই। যদিও জানেন, আপনার প্রিয় মানুষটি তেমন নয়, বরং সে আপনার কাছ থেকে উপহার পেলেই খুশি। তবু যদি পারেন তার মনমতো কিছু তাকে দিতে তাহলে সে সত্যিকারভাবেই আনন্দে উদ্বেলিত হবে। আর এটাই তো করা উচিত! এই জন্য প্রিয় মানুষটির সঙ্গে কাটানো প্রিয় মুহূর্তটির কথা স্মরণ করুন পেছনে তাকিয়ে। দেখবেন আপনার মনে অনেক কিছুই ভেসে উঠবে। প্রিয় মানুষটির ভালো লাগা, মন্দ লাগা ব্যাপার চিন্তা করেই তার জন্য উপহার কিনুন। অবশ্যই নিজের সামর্থ্যের বাইরে যাবেন না। এতে আপনার প্রিয় মানুষটি বিরক্ত হতে পারে। কারণ সে আপনার সামর্থ্যকে অবহেলা করে না, বরং সম্মানই করে। তবে যতই উপহার কিনুন না কেন, সঙ্গে ফুল কিনতে ভুলে যাবেন না যেন!
নতুন যারা : ১৪ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে অনেকেই হয়তো নিজের পছন্দের মানুষকে প্রপোজ করতে অপেক্ষা করছেন। শুনুন! বেশি আবেগ দেখাতে গিয়ে যেন আবার সব ভণ্ডুল করে দেবেন না। যা কিছুই করেন না কেন, ধীরে-সুস্থে করবেন। চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব সুন্দরভাবে আপনার ব্যাপারটা তার কাছে উপস্থাপন করতে। তবে এ ক্ষেত্রে সবাই আলাদা আলাদা ভাবেন। কেউ সরাসরি কথা বলতে পছন্দ করেন আবার কেউ নীরব সম্মতিকেই সম্মান করেন। সুতরাং আপনার পছন্দের মানুষের ব্যাপার-স্যাপার আপনিই ভালো জানেন। সম্ভব হলে তার মতো করেই তাকে প্রপোজ করেন। এতে করে তিনি আপনার প্রতি মুগ্ধ হবেন তার পছন্দকে গুরুত্ব দিচ্ছেন বলে। কেননা এটা সবাই জানেন, ভালোবাসার মানুষকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই হচ্ছে তার প্রতি সবচেয়ে বড় ভালোবাসা জানানো, প্রকাশ করা।
হতাশা নয় : যদি বিফল হন, হন ব্যর্থ? মানে যাকে প্রপোজ করলেন উনি যদি আপনাকে ডিনাই করেন, রিজেক্ট করেন তবে হতাশ হবেন? নিজেকে ধ্বংস করবেন? মোটেও নয়! জীবন একটাই! সুতরাং যা-ই করবেন, ভেবে-চিন্তে করাটাই সবচেয়ে সমীচীন। হতাশ হওয়া মোটেও ভালো কিছু নয়। যদিও এটা ঠিক_ সব কিছু ভালো হয়ও না। তবুও তো আমাদের নিরন্তর চেষ্টা থাকে কিছু ভালো কাজ করার? সুতরাং হতাশা থেকে যেহেতু ভালো কিছু হয় না, তো এটাকে কেন বরণ করা? ওটা বরং দূরেই থাকুক। নতুন করে ভাবতে শেখার মাঝেই জীবনের মানে লুকিয়ে থাকে বন্ধু। আসুন, হতাশাকে মৃতের চাদরে লুকিয়ে আশা নিয়ে এগিয়ে চলি পরবর্তী সেন্ট ভ্যালেনটাইন ডের দিকে।
জীবন থেকে নেওয়া : অনেকেই এ দিনে সব গুলিয়ে ফেলেন। আবেগাপ্লুত হয়ে কেউ কেউ ভালোবাসা প্রকাশ করেন সরকারিভাবে; সবাইকে। পরিবারকেও ডেকে আনেন। বলি, পরিবারের অন্যদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের আলাদা দিবস আছে। মনে রাখবেন, সেন্ট ভ্যালেনটাইন ডে, অনলি ফর ইউর বিলাভড। নট ফর আদারস। চিয়ার্স সেন্ট ভ্যালেনটাইনস ডে! হ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *