এভাবে জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না

গোলাম মোস্তফা

চলছে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। ১৯৫২ সালে মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার জন্য ,অবলীলায় বাংলার রাজপথে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিলো বাংলার দামাল ছেলেরা। কিন্তু এই ভাষার মাসে আজ আমরা বড়ই অসহায়। এখন রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠায় প্রতিনিয়ত দিন কাটছে আমার মত সাধারণ আমজনতার।
তবে দেশের বর্তমান যে অবস্থা তাঁতে মনে হয় না, একটি মানুষও মানসিক শান্তিতে আছে। আমি একজন শিক্ষক।কি যে মানসিক যন্ত্রনায় দিন কাঁটাচ্ছি তা আমার লেখা দ্বারা কাউকে বোঝাতে পারবো কিনা জানিনা। এ যন্ত্রনা আমাকে ভীষণভাবে কষ্ট দিচ্ছে। ২০১৪ সালের শেষের দিকে সকল শিক্ষকদের নিয়ে নানা পরিকল্পনা করি। যাতে ২০১৫ সালের শুরু হতেই শিক্ষার্থীদের ভালো সাপোর্ট দিতে পারি। এই লেসন প্লানের আঙ্গিকে মূল পাঠ্যবইকে কেন্দ্র করে নতুনভাবে ক্লাসওয়ার্কবুক, হোমওয়ার্কবুক এবং ফিডব্যাক বুক তৈরি করি।
নানা পরিকল্পনায় আমি যেমন প্রতিনিয়ত সময় দিয়েছি,তেমনি আমার সহকর্মীরা অনেক সময় ও শ্রম দিয়েছেন। আর আমাদের এই কাজটি ছিলো পরিকল্পনা মাফিক। এই কাজ করার সময় আমার সহকর্মীরা অনেক পরিশ্রম করলেও তাঁদের কাজের মধ্যে আমি অনেক উৎসাহ উদ্দিপনা দেখেছি। কারণ ২০১৫ সালে সারা বছর সাবলীল গোছানো ও পরিকল্পনা মাফিক শিক্ষা কার্যক্রম চালানো যাবে। যাতে করে আমাদের শিক্ষার্থীরা গত বছরের চেয়ে আরো ভালো ফলাফল করতে পারবে। কিন্তু বছর শুরু হতে না হতেই আমরা একি অবস্থার মুখোমুখি?
বছরের প্রথমদিন হতেই হরতাল, অবরোধ নানা সহিংসতা তথা বির্শঙ্খলা শুরু হয়েছে এবং আজ অবধি তা বিরাজমান। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের সকল পরিকল্পনা ধূলিসাৎ করে দিয়েছে। প্রায় সকল শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে পারছে না ফলে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছে জ্ঞান আরোহন থেকে। কিছু কিছু শিক্ষার্থী গ্রামে গিয়ে আটকে আছে এমনকি তাঁরা স্কুলে ভর্তি পর্যন্ত হতে পারেনী। তাঁর চেয়ে আরো বেদনার কথা হলো, আমাকে বেশ কয়েকজন অভিভাবক বলেছেন রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য এখন এমন জায়গায় উপনীত হয়েছে যে, তাঁদের সন্তানদের এখন আর ঢাকায় রেখে পড়ালেখা করানো সম্ভব নয়।
তাই তাঁরা চলে যাচ্ছেন গ্রামে। সময় তাঁর আপন গতিতে বয়ে চলে। কারো জন্যে সময় তো আর অপেক্ষা করে না। কিন্তু আমাদের ভাববার বিষয়, আমরা এটা কি করছি? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কি দিচ্ছি? প্রতিদিন ক্লাস ভিজিট করতে যাই আর মনটা খারাপ করে রুমে ফিরে আসি। শ্রেণি কক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা খুবই কম, নেহাত একপ্রকার না বললেই চলে। আবার যে সব শিক্ষার্থীরা আসে তাঁরাও নিয়মিত নয়। অনেক অভিভাবকরা এই সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে তাদের আদরের কলিজাকে স্কুলে পাঠাতে পারছেন না।
কি যে মানসিক যন্ত্রনা সেটি হয়তো কাউকে বোঝানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন ভাবি দুই এক দিনের মধ্যে মনে হয় এই অস্বাভাবিক অবস্থা স্বাভাবিক হবে। অনেক আশা নিয়ে ঘুমাতে যাই। কিন্তু সকাল বেলা পত্রিকার পাতা দেখে আবার সেই আশা ভঙ্গ হয়। মন খারাপ করতে করতে আবার স্কুলে ফিরে আসি। শুধু চিন্তা করি কবে আবার আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে? কবে আবার আমার সব শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে। সকল শিক্ষার্থীর পদচারণে ক্যাম্পাস মুখরিত হবে? শিক্ষার্থীরা কবে আবার ফিরে পাবে তাঁদের পড়ালেখার ছন্দ। কবে আমি ক্লাস ভিজিটে গিয়ে দেখতে পাবো আমার শিক্ষার্থীরা মন দিয়ে পড়ালেখা করছে। সেই আনন্দ মাখা সুখ নিয়ে কবেই বা আমি রুমে ফিরে আসবো?
দলমত নির্বিশেষে সকলের নিকট আমার বিনীত আবেদন, দেশের বর্তমান অবস্থার উন্নতির জন্য দ্রুত সবাই এগিয়ে আসুন। আমাদের এই শিক্ষার্থীরা যারা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তাঁদেরকে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দিই। সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করি নতুন প্রজন্মকে। আর এ প্রজন্মকে রেখে যাই সুন্দর ভবিষ্যৎ এর জন্য।

অধ্যক্ষ,
ক্যামব্রিয়ান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা।

৪ thoughts on “এভাবে জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *