কাজী সিরাজ
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে ২০১৫ সালের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের অন্য পরীক্ষা শুরুর দুই দিন বাতিল করেছিল সরকার। শিক্ষামন্ত্রী সাবেক কমিউনিস্ট নেতা নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম দুই দিনের পরীক্ষাই সংবাদ সম্মেলন করে বাতিল করেছেন এবং বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে এ ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। শুক্রবারসহ যেই যেই দিন হরতাল থাকবে না, সেসব দিনে পরীক্ষা নেওয়া হবে এবং সেই অনুযায়ী গত শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। অথচ পরীক্ষা বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার আগের দিনই শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, যে কোনো মূল্যে পরীক্ষা নেওয়া হবে। সব আয়োজন সম্পন্ন। এ ব্যাপারে সরকার বিএনপি-জামায়াতের কাছে নতিস্বীকার করবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কোনো ভয় নেই, সব ধরনের নিরাপত্তা দেবে তারা। আমরা ধরে নিয়েছিলাম, যারা ছেলেমেয়েদের পরীক্ষার মধ্যেও আন্দোলন কর্মসূচি থেকে পিছু হটছে না, তাদের চেয়ে সরকার অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু এটা প্রমাণ হয়ে গেল সরকারকে যতটা শক্তিশালী ভাবা হয়েছিল তারা ততটা নয় বরং আন্দোলনকারীদের চেয়ে দুর্বল। তারা পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের কপালে আরও দুঃখ আছে। সরকার যদি বিরোধী দলের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে নমনীয় না হয় তাহলে আন্দোলনের এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহতই থাকবে। এমনও বলা হচ্ছে, অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির সঙ্গে নতুন করে অসহযোগ কর্মসূচিও যুক্ত হতে পারে। তাতে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
স্রেফ ক্ষমতার জন্য লড়াইয়ে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা কোনো অবস্থাতেই রাজনৈতিক কর্মসূচির অন্তর্গত বিষয় হতে পারে না। পরীক্ষার মধ্যে এ ধরনের কর্মসূচি ছাত্রছাত্রীদের কোমল মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাদের পরীক্ষা-প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে যায়। অনিশ্চয়তায় থাকে তাদের সবকিছু। এক সময় পরীক্ষা যখন অনুষ্ঠিত হয় তখন অনেকেই প্রত্যাশিত ফলাফল পায় না। পরবর্তীকালে স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারে না। ভবিষ্যতের স্বপ্নটাই ভেঙে যায়। চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় মা-বাবার সব আশা। রাজনীতিবিদদের এসব কথা কেন যে মনে থাকে না বুঝি না। কেউ কেউ এমন সমালোচনাও করছেন, আমাদের দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রধান দুই নেত্রীর স্কুল-কলেজপড়ুয়া কোনো ছেলেমেয়ে নেই। তাদের আপন ভাইবোনদের ক্ষেত্রেও তাই। যাদের আছে তারা সাধারণ মানুষের ছেলেমেয়েরা যেসব স্কুল-কলেজে পড়ে সেখানে লেখাপড়া করে না। তারা পড়ে ইংরেজি-মাধ্যম স্কুল-কলেজে। ওই সব প্রতিষ্ঠানের ‘এ’ লেভেল, ‘ও’ লেভেলের পরীক্ষাও বর্তমান আন্দোলন কর্মসূচির মধ্যে পড়েছিল। কী বিচিত্র ব্যাপার! ‘এ’ লেভেল-‘ও’ লেভেল পরীক্ষা কিন্তু অবরোধের আওতামুক্ত ঘোষণা করেছিল বিএনপি জোট। বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমানের স্বাক্ষরে সে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। নেত্রীদের নাতি-পুতিরা দেশেই থাকে না। তারা লেখাপড়া করে বিদেশে। পাঠক, খবর নিয়ে দেখুন, জামায়াতি অনেকের ছেলেমেয়েও মাদ্রাসায় লেখাপড়া করা তো দূরের কথা, দেশের সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তারা শিক্ষা গ্রহণ করে না। তারাও লেখাপড়া করতে যায় বিদেশে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা-নেত্রীদের অনেকের ছেলেমেয়েকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদল করতে দেখবেন, দেখছেন; কিন্তু জামায়াতের কোনো দায়িত্বশীল নেতার ছেলেমেয়েকে কখনো ইসলামী ছাত্রসংঘ বা ছাত্রশিবির করতে দেখেছেন? রগ কাটা-গলা কাটা রাজনীতিতে জামায়াত নেতাদের কোনো ছেলেমেয়ের ধরা পড়ার কথা শুনেছেন? ধরা পড়ছে, কখনো বা মারা পড়ছে গরিব মানুষের সন্তানরা। অর্থাৎ বাঘ মারতে সতীনের ছেলেকে পাঠানোর মতো বিষয় আর কি! বাঘ মরলেও সই, সতীনের ছেলে মরলেও সই। সরকারি দলের লোকজন এবং তাদের ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েসরা’ গত ৫-৭ দিন ধরে খুব করে বলে বেড়াচ্ছেন যে, বেগম খালেদা জিয়া তার নাতনিদের (মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর সন্তান) পরীক্ষা দেওয়ার জন্য সময়মতো মালয়েশিয়া পাঠিয়ে দিয়েছেন, বাবার কুলখানির সময় পর্যন্তও আটকাননি। অথচ তিনি দেশের ১৫ লাখ পরীক্ষার্থীর কথা ভাবছেন না। সমালোচনাটা খুবই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু এটাও তো ঠিক যে, তারা বাংলাদেশে লেখাপড়া করে না, করে মালয়েশিয়ায়। সেই দেশে এখন অবরোধ হরতাল নেই। অসহযোগ আন্দোলনের সম্ভাবনাও নেই। থাকলে পাঠাতেন কিনা ভেবে দেখার বিষয়। তবে এটা বুঝি, সমালোচকরা পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্বটাই বোঝাতে চাইছেন এই ক্ষেত্রে। এ ব্যাপারে দ্বিমত করার কিছু নেই। কদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের একজন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপকের টকশো শুনছিলাম একটি টিভি চ্যানেলে। পাবলিক পরীক্ষার গুরুত্ব, ছেলেমেয়েদের হতাশা, অভিভাবকদের দুর্ভাবনা ইত্যাদি নিয়ে ‘দারুণ চমৎকার’ মতামত তুলে ধরেছেন তিনি। দিন দশেক আগে শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জনপ্রিয় লেখক শিক্ষকের একটা লেখাও পড়লাম। লেখাটা একই দিন একাধিক পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। খুবই যুক্তিপূর্ণ লেখা। দুই জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপকের বক্তব্যের সঙ্গে আমিও একমত। তাদের এই বক্তব্য বর্তমানের জন্য যেমন ঠিক, তেমনি অতীত ও ভবিষ্যতের জন্যও সঠিক। কিন্তু নিজেদের সুবিধাজনক সময়ে সঠিক কথাটি বললেও অতীতে যখন কাউকে কাউকে দলান্ধ বা দলদাসের ভূমিকায় দেখি, তখন ভীষণ কষ্ট লাগে। এরা পরীক্ষা নিয়ে লিখছেন বলছেন ঠিক আছে। সব বিবেকবান মানুষই তা বলছে। কিন্তু মূল সমস্যার কথা বলছেন না এরা। যে রাজনৈতিক কারণে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের কথা বলছেন না এরা। সরকারি প্রেসনোটের বক্তব্যই যেন উগলে দিচ্ছেন। তারা ভবিষ্যতে কী করবেন জানি না। আমাদের মতো অল্প জানা লোকেরা এসব সবজানা বিদগ্ধ লোকের কাছ থেকে সব সময়ই সঠিক ও সত্য কথা শুনতে চাই।
প্রসঙ্গটা এ জন্যই তুললাম যে, পরীক্ষার সময় আন্দোলন, হরতাল অবরোধ তো আমাদের দেশে এই-ই প্রথম নয়। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এসব ব্যক্তি কোথায় ছিলেন জানি না। হতে পারে, দেশেই ছিলেন না। ছিলেন বিলাতে কিংবা আমেরিকায়। ওই সময় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ, জামায়াতে ইসলামী ও হু. মু. এরশাদের জাতীয় পার্টি তুমুল আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। লাগাতার হরতাল-অবরোধ-অসহযোগে দেশের অবস্থা একেবারে নাকাল। এবার বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবরোধ-হরতালে এ পর্যন্ত ২ (দুই) দিন পরীক্ষা পিছিয়েছে। সেবার পরীক্ষা পিছিয়েছিল ২ (দুই) মাস। তখন শেখ হাসিনার নাতি-পুতিরাও বিদেশে সময়মতো পরীক্ষা দিয়েছে। পুরনো কাগজপত্র যতদূর সম্ভব অনেক ঘাঁটাঘাঁটি করে খুঁজলাম উল্লিখিত দুই গুণী অধ্যাপক তখন পাবলিক পরীক্ষা লীগ-জামায়াত-জাপার আন্দোলনের কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের সংকট নিয়ে এখনকার মতো কাঁদো কাঁদো ভাষায় উদ্বিগ্ন কোনো লেখা লিখেছেন কী না। কিন্তু কোথাও খুঁজে পেলাম না। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রকৃতপক্ষে কবে শুরু হবে আর কবে শেষ হবে তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। আমার ধারণা, ২০ দলীয় জোট তাদের আন্দোলনের একটা সফল সমাপ্তির অথবা পূর্ণ ব্যর্থতার আগে এই ব্যাপারে কোনো ছাড় দেবে না। যেমন ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ও তার আন্দোলন সঙ্গীরা দেয়নি। পাবলিক পরীক্ষা নিয়ে এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী, অন্য মন্ত্রী-মিনিস্টার ও শাসক লীগের আতি নেতা-পাতি নেতারা যেসব কথা বলছেন, হুবহু একই কথা বলেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তার শিক্ষামন্ত্রীসহ অন্য মন্ত্রী এবং দলের নেতারা। তখন আওয়ামী লীগ এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ‘জনগণের ভোটের অধিকার ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মূল দাবি থেকে জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর জন্য সরকার পাবলিক পরীক্ষার ইস্যু সামনে নিয়ে আসছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেব।’ এখনো বিএনপিসহ তার জোট সঙ্গীরা একই কথা বলছে। তখন দাবি আদায়ে খালেদা জিয়ার সরকারকে বাধ্য করার জন্য পাবলিক পরীক্ষা ও পরীক্ষার্থীদের জিম্মি করা হয়েছিল। এখন সরকারবিরোধীরা বলছে, মূল আন্দোলনের ইস্যু নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সংলাপ শুরুর দাবি থেকে গণদৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চাইছে সরকার। তারা যাই বলুক, তাদের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করার জন্য তারাও জিম্মি করেছে পাবলিক পরীক্ষা এবং পরীক্ষার্থীদের।
আসলে শক্তি পরীক্ষায় নেমেছে দুই পক্ষ। সরকার চাচ্ছে এবং মন্ত্রী-মিনিস্টার ও সরকারপক্ষীয় দায়িত্বশীল লোকেরা বলছেন, বিএনপিকে নিঃশেষ করে দিতে হবে। এতদিন তারা বলেছিলেন যে, ‘বিএনপি একটা কাগুজে বাঘ, খালেদা জিয়া মিডিয়া টাইগার’, তাদের কিছু করার ক্ষমতা নেই। মনে হচ্ছে, বিএনপি এখন ক্ষমতা দেখাচ্ছে। ক্ষমতা দেখাতে গিয়েই তারা নিজেরা করুক বা না করুক সহিংসতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। সরকার সহিংসতা, নাশকতা, বোমাবাজি, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, বার্ন ইউনিটে দগ্ধ মানুষের আর্তচিৎকারকে সম্বল করে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করতে চাইছে এবং এসব ঘটনার বীভৎস সংবাদচিত্র প্রচার করে জনগণকে বিএনপি-জামায়াতের ওপর ক্ষেপিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু যারা আওয়ামী লীগ করেন এবং সেই ঘরানারই লোক, তারা তো এমনিতেই বিএনপির ওপর ক্ষুব্ধ। বিএনপির যারা সমর্থক-শুভানুধ্যায়ী তারা চাচ্ছে বিএনপি এসপার-ওসপার একটা কিছু করে ছাড়ুক। আওয়ামী লীগ-বিএনপির এ ধরনের লোক মোট ভোটারের ৭০ শতাংশের অর্ধা-অর্ধি। বাকি ৩০ শতাংশের ১২-১৩ শতাংশ অন্যান্য দলের। আর যে ১৭-১৮ শতাংশ ভোটার কোনো দলের লোক নয়, তারা দেখে শক্তি কোনদিকে, জিতবে কারা? এখন চলছে হার-জিতের খেলা, ওই ১৭-১৮ শতাংশকে পক্ষে নেওয়ার চেষ্টা।
সহিংসতা-নাশকতার সব দায় সরকার বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের ওপর চাপাচ্ছে। এ অভিযোগ নাকচ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি উল্টা অভিযোগ করেছেন, সরকারই তার লোকজন দিয়ে নাশকতা ঘটিয়ে ২০ দলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। সরকারের লোকজন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নকশাল দমনের মতো বিএনপিকে দমনের কথা বলছেন প্রকাশ্যে। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলা দরকার যে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নকশাল দমনের জন্য তৎকালীন ভারত সরকার একটি কৌশল অবলম্বন করেছিল বলে জানা গিয়েছিল সে দেশেরই নানা সূত্রে। কৌশলটি ছিল, মেকী নকশাল গ্রুপ তৈরি করে তাদের দিয়ে তাবৎ অপকর্ম করানো নকশাল নামে। তাকে ব্যবহার করে প্রকৃত নকশালপন্থিদের ওপর সীমাহীন দমন-পীড়ন চালিয়েছিল ইন্দিরা সরকার। কানু সান্যাল, চারু মজুমদার, অসীম চ্যাটার্জিরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাতে জনমত নকশালদের বিরুদ্ধে কেমন গিয়েছিল জানি না, তবে পশ্চিমবঙ্গে ইন্দিরা গান্ধীর কংগ্রেস তিন দশকেরও বেশি সময়ের জন্য ক্ষমতা থেকে বিদায় নিয়েছিল। বামরাই শাসন করেছে সেই রাজ্য। গণি খান চৌধুরী, সিদ্ধার্থ শংকর রায়, প্রণব মুখার্জিরা পশ্চিম বাংলায় আর ক্ষমতার মুখ দেখাতে পারেননি কংগ্রেসকে। অনেকে এমন ধারণাও করছেন, বেগম জিয়া বোধহয় পুরো না হলেও আংশিক সত্য বলছেন যে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নকশাল দমনে ‘মেকী নকশাল’ সৃষ্টি করে প্রকৃত নকশালপন্থিদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে তাদের নিশ্চিহ্ন করার ব্যর্থ চেষ্টার মতো (নকশালপন্থিরা এখন মাওবাদী ও অন্যান্য নামে প্রায় সারা ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে) এখানেও সরকার সে ধরনের কিছু করে বিএনপি-জামায়াতকে নিমর্ূল করার চেষ্টা করতে পারে। তারা তা করছে তেমন কথা আমি জোর দিয়ে বলছি না। কিন্তু সরকারি লোকজনের মুখে বারবার নকশাল দমনের মতো বিএনপি-জামায়াত দমনের কথা শুনে কারও এমন ধারণা তো হতেই পারে। আমি সন্ত্রাস-সহিংসতার দায় থেকে বিএনপিকে মুক্তি দিচ্ছি না। আমি মনে করি, এই সহিংসতা, বর্বরতা ঘটছে ২০ দলীয় জোট আহূত অবরোধ-হরতালের ছাতার নিচে থেকেই। বিএনপি নেত্রী এর দায় নেননি ঠিক কিন্তু একবারও বলেননি যে, এসব অপকর্মে তার দলের লোকদের হাতেনাতে ধরা গেলে তাদেরও আইনত কঠোর শাস্তি হোক। তিনি এমন কোনো প্রকাশ্য নির্দেশও দেননি যে, তার দলের কেউ এসব হিংসাশ্রয়ী কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গৃহীত হবে। আমরা আশা করতে চাই, তিনি তেমন একটি স্বচ্ছ অবস্থান নেবেন। সরকারের উচিত হবে, বিএনপিকে নির্মূল-নিঃশেষ করার প্রকাশ্য হুমকি-ধমকি বন্ধ করে পরিস্থিতির গভীরে মনোনিবেশ করা এবং তা সমাধানের চেষ্টায় কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। সমস্যাটা কী আমরা সবাই জানি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনই সব সমস্যার মূল। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতির প্রধান দ্বন্দ্বই হচ্ছে এটি। অন্যসব দ্বন্দ্ব পার্শ্বদ্বন্দ্ব। মূল দ্বন্দ্বের অবসান না হলে পার্শ্বদ্বন্দ্ব কমবে না, বরং আরও নতুন নতুন দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। বর্তমান সংকট সমাধানের চাবি সরকারের হাতে বলেই স্পষ্টত মনে হয়। বিএনপি এখনই তো নির্বাচন চায়নি। বেগম খালেদা জিয়া তার সাত দফায় তেমন কথা বলেননি। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। সংলাপে বসেই একটি আগাম বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে ফয়সালা করা সম্ভব। দেশে-বিদেশে সবাই এই কথাই বলছেন।
সরকার যদি দমন-পীড়নের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে অটল থাকে তাহলে সংঘাত-সংঘর্ষ-সহিংসতা কমবে বলে মনে হয় না। কেউ কেউ বলতে চান বিরোধীদের দাবি সরকার মানলে সহিংসতা বন্ধ হবে বললে তো স্বীকার করে নেওয়া হয় যে, তারাই সহিংসতা করছেন। তা কিন্তু নয়। তাদের কর্মসূচির ছাতা ব্যবহার করে উগ্রবাদীরাও সুযোগ নিতে পারে। কর্মসূচি প্রত্যাহার হলে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, জামায়াত, জাপা অসহযোগ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে প্রত্যাহারের পর সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা আমাদের আছে।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
ই-মেইল : kazi.shiraz@yahoo.com
Jone Make liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.
Jone Make liked this on Facebook.
Md Azizul liked this on Facebook.