তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন প্রধানমন্ত্রী সহ সব আসামি

বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের করা পৃথক তিনটি মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সব আসামি। বৃহস্পতিবার দুদকের দায়েরকৃত চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সবাইকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। দুদকের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মীর আহমেদ আলী সালাম বৃহস্পতিবার ওই প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে আবেদন করেন।

আদালতে শুনানিকালে পিপি বলেন, ২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে এ মামলা তিনটি দায়ের করে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো। মামলার আসামিদের মধ্যে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া এবং শিক্ষামন্ত্রী এএইচএসকে সাদেক মারা গেছেন। অন্যদের মধ্যে তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর উচ্চ আদালত থেকে এর আগে অব্যাহতি নিয়েছেন।
মামলা তিনটি দীর্ঘ ১৩ বছর ঝুলে থাকার পর ২০০৫ সালের ২৪ আগস্ট বিচারপতি সুলতান হোসেন খান ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেন। ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে শেখ হাসিনা সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে পৃথক দুটি রিট (নং-৭৯৬৬/০৫ এবং ৭৯৬৭/০৫) দায়ের করলে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১০ সালের ৪ মার্চ ওই অভিযোগপত্র দাখিলের আদেশ অবৈধ ঘোষণা করেন।
এ মামলাগুলো সম্পর্কে হাইকোর্ট বলেন, নভোথিয়েটার দুর্নীতি মামলা শেখ হাসিনাকে হয়রানি করা এবং হেয়প্রতিপন্ন করার লক্ষ্যেই দায়ের করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার নিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদের সিদ্ধান্তকে আমলে নিয়ে মামলাগুলো করা হয়। সিদ্ধান্তগুলো ছিল প্রকল্পের পরামর্শকের ব্যয় বৃদ্ধি, ভবন নির্মাণের এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যয় বৃদ্ধি। এ অভিযোগগুলো ফৌজদারি আইনের কোনো বিধানের আওতায় পড়ে না। মামলাগুলো চললে আসামিরা হয়রানির সম্মুখীন হবেন। আদালত পর্যবেক্ষণে এটাও বলেন, মামলার নথিপত্র উপস্থাপনের ক্ষেত্রে তৎকালীন দুর্নীতি দমন ব্যুরো চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।
যদিও দুদক মামলাগুলো পুনঃতদন্ত করতে দুদকের উপপরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়। তিনি তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ন্যায়বিচারের স্বার্থে তিনি প্রতিবেদনগুলো গ্রহণ করে আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন।
শুনানি শেষে সংশ্লিষ্ট আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইমরুল কায়েস নথি পর্যালোচনা করে এ আদেশ দেন। আদেশের পর দুদকের বিশেষ পিপি জানান, ২০০২ সালে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলাটি দায়ের করেছিল। যেসব অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এজন্য চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি কমিশন নিয়ম অনুযায়ী আদালতে পাঠিয়েছে। আজ তা গৃহীত হল।
নথিসূত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ২৭ মার্চ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সে সময়কার বিরোধী দলের নেতা শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট একনেক সদস্যদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় ৭ জনকে আসামি করে যথাক্রমে ৯৫, ৮ জনকে আসামি করে ৯৬ এবং ১২ জনকে আসামি করে ৯৭ নম্বরের পৃথক তিনটি মামলা করে বিলুপ্ত দুর্নীতি দমন ব্যুরো।
৯৫ ও ৯৬ নম্বর মামলার বাদী হলেন অ্যান্টিকরাপশন অফিসার (এসিও) খান মো. মীজানুল ইসলাম এবং ৯৭ নম্বর মামলার বাদী হলেন ব্যুরোর পরিদর্শক মোহাম্মদ ইব্রাহিম। তবে প্রতিটি মামলার ধারা, সময়কাল এবং ঘটনাস্থল এক ও অভিন্ন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪১৮/২০১/২১৭/২৪৮/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের ২ নম্বর আইনের ৫(২) ধারার অভিযোগ আনা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দায়ের করা এ মামলার সময়কালে শেখ হাসিনা ছিলেন বিরোধী দলের নেতা। ১৩ বছর ধরে দুদকের অনিষ্পন্ন শাখায় পড়েছিল বহুল আলোচিত-সমালোচিত এ মামলাটির কার্যক্রম। তদন্তে আসামিদের অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় কমিশন অব্যাহতির সুপারিশ করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের অনুমোদন দিয়ে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেয়।
২৯ জানুয়ারি পৃথক তিন মামলায় ওই চূড়ান্ত প্রতিবেদন ঢাকার সিএমএম আদালতে দুদকের সংশ্লিষ্ট প্রসিকিউশন শাখায় দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মঞ্জুর মোরশেদ। ২ ফেব্র“য়ারি চূড়ান্ত প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে শুনানির জন্য ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে পাঠানো হয়।সুত্র,যুগান্তর

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *