কাদের সিদ্দিকীর কর্মসূচিতে এসে সাবেক এমপি নিজান ও নাজিমউদ্দিন আটক

কাদের সিদ্দিকীর অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে এসে আটক হয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি এ বি এম আশরাফ উদ্দিন নিজান ও নাজিমউদ্দিন আহমেদ। গতকাল দুপুর ২টায় তারা কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে আগে থেকে অবস্থানরত ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাদের ঘিরে ফেলেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে দুই সাবেক এমপি আটকের বিষয়টি স্বীকার করা হলেও ঠিক কি কারণে তাদের আটক করা হয়েছে তা জানানো হয়নি। পুলিশের হাতে আটক হওয়ার আগে দুই এমপি কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে বসে কথা বলেন। পরে আশরাফ উদ্দিন নিজান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি নেত্রীর নির্দেশেই আমরা বঙ্গবীরের সঙ্গে দেখা করে তার কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে এসেছি।

দেশে যে সহিংসতা চলছে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে গুম-খুন হচ্ছে, এসব বন্ধের জন্য সংলাপের বিকল্প নেই। কাদের সিদ্দিকীর এ দাবির সঙ্গে আমরা একাত্মতা প্রকাশ করছি। গত আট দিন থেকে অবরোধ প্রত্যাহার ও সংলাপ আয়োজনের দাবিতে মতিঝিলের ফুটপাথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী। অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে ফিরে যাওয়ার পথে বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি আশরাফ উদ্দিন নিজাম ও নাজিমউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কাদের সিদ্দিকী। বুধবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, এ ধরনের অহিংস কর্মসূচিতে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশকারী নেতাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার উল্টো সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে।
‘আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে অবস্থা ভয়াবহ হবে’
বিএনপির আন্দোলন করার ক্ষমতা নেই- আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করে কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের চেয়ারম্যান বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়তে না পারলেও এদেশে লাখ লাখ আওয়ামী লীগবিরোধী মানুষ রয়েছে। তাদের সুনিয়ন্ত্রিত আন্দোলন নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তা হবে ভয়াবহ। তবে বিএনপিকে তাচ্ছিল্য করা ঠিক হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। গতকাল মতিঝিলে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। লাগাতার অবরোধ প্রত্যাহার ও আলোচনায় বসার দাবিতে মতিঝিলের রাস্তায় ৮ দিন ধরে অবস্থান করছেন কাদের সিদ্দিকী। কর্মসূচি চলাকালে বেশ কয়েকবার পুলিশি হয়রানির শিকার হন তিনি। দেশের বর্তমান সংলাপই একমাত্র সমাধানের পথ উল্লেখ করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, সংলাপই সংগ্রামের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত।

আর উত্তম সংগ্রাম হচ্ছে আলোচনা। আলোচনার মাধ্যমেই সব সংগ্রামের পরিসমাপ্তি ঘটবে। সহিংসতার জন্য দুই দলকে দায়ী করে কাদের সিদ্দিকী বলেন, বর্তমান সমস্যাটা রাজনৈতিক। তাই রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশেই প্রশাসনিক শক্তি দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান হয়নি। তিনি আরও বলেন, সরকার কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই গণমাধ্যমকে তারা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। মানুষের ওপর আস্থার অভাব রয়েছে তাদের। জনপ্রিয় সরকার কখনও জনগণের কণ্ঠরোধ করে না। বিদেশী শক্তির ওপর নির্ভর না করার জন্য দুই দলকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিদেশীদের পরামর্শ নিতে হবে। তবে ক্ষমতায় যাবার জন্য দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করতে হবে।

বিদেশীদের ওপর নয়। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনকে পৃথিবীর ইতিহাসে নিষ্ঠুরতম নির্বাচন আখ্যা দিয়ে কাদের সিদ্দিকী বলেন, পৃথিবীর কোন নেতা যদি ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতেন তবে আর কখনও কাউকে মুখ দেখাতেন না। যারা বলছে ভবিষ্যতে বিএনপি থাকবে না এবং ২০০ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে পারবেন তারা রাজনীতিতে নতুন। ভবিষ্যতে তারা ২০টি আসনও পাবেন না। খালেদা জিয়ার বাসভবনে অবরুদ্ধ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ভাল কাজ না। দুইবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে সম্মান দেখানো উচিত। প্রধানমন্ত্রীর কাছে এটা আশা করা যায় না।

কারণ তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। মানবিক গুণ, শালীনতা, ভদ্রতা সামনে নিয়ে তাকে সামনে অগ্রসর হতে হবে। নিজের অবস্থান কর্মসূচির স্থাপনার সরঞ্জাম চুরি হওয়ায় আক্ষেপ করে বলেন, আমি শান্তিপূর্ণভাবে বসে আছি। প্রধানমন্ত্রীও জানেন আমার ঠা-ায় কষ্ট হয়। আর আমি এখানে রাজনৈতিক দলের পক্ষে বসিনি। বসেছি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দায়বদ্ধতা থেকে। এ ঘটনায় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা মর্মাহত। দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপিকে বলেছিলাম জামায়াত ছাড়তে। তবে তারা যদি জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে স্বস্তিতে থাকে তবে সেটা তাদের ব্যাপার।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *