শেখ হাসিনা ও ৩ বাহিনীর প্রধানদের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান আদালতে মামলা

বাংলাদেশে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম এবং অত্যাচার নিপীড়নের অভিযোগ এনে ইউরোপিয়ান মানবাধিকার আদালতে (ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস) মামলা দায়ের করেছেন একজন প্রবাসী বাংলাদেশি।
মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুলিশের আইজি শহীদুল হক, র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ এবং বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যস্থ শহীদ জিয়া স্মৃতিকেন্দ্রের ব্যানারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী শরিফুজ্জামান চৌধুরী তপন বলেন, “বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অব্যাহত মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের প্রতি সম্প্রতি পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি প্রধানের প্রকাশ্য হুমকি, সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো মূল্যে আন্দোলন দমনের হুমকির বিচারের দাবিতে একজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে বিবেকের তাড়নায় নিজে বাদি হয়ে এই মামলা দায়ের করেছি। ৩০ জানুয়ারি এ মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “গত বছর ৫ জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে কলঙ্কিত করে ক্ষমতা দখল করে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বধীন সরকার। ক্ষমতার দখলদারিত্ব বজায় রাখতে তারা প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তারা মানুষের ভোটের অধিকার শুধু কেড়ে নেয়নি; সভা সমাবেশের অধিকারও হরণ করেছে এই সরকার। প্রকাশ্যে হত্যাকা- চালানোর ঘোষণা দিয়ে এ সরকার ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগিবৈঠা নিয়ে রাস্তায় নামার ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ওইদিন তারা প্রকাশ্যে রাজপথে লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ খুন করে উল্লাস করেছিল। ওই আন্দোলনের ফসল মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের হাত ধরে ক্ষমতাসীন হন শেখ হাসিনা।”

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “বাংলাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। রাজপথে প্রতিবাদী মানুষের ওপর গুলি চালানো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। বাকশাল আজ নতুন রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে এতে মন্তব্য করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেই তারা গণতন্ত্র হত্যার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। সামাজিক ন্যায় বিচারের পরিবর্তে এক ব্যক্তির ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে সর্বত্র।”

লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, “৩ জানুয়ারি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে। তার ছোট ছেলের মৃত্যুর শোকে যখন তিনি কাতর তখনো জড়ানো হচ্ছে একের পর এক মিথ্যা মামলায়। চলমান আন্দোলন শুরু হওয়ার পর র‌্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ, পুলিশের আইজি শহিদুল হক, বিজিবির ডিজি মেজর জেনারেল আজিজ রাজনৈতিক ভাষায় বক্তৃতা দিচ্ছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের প্রকাশ্যে গুলির হুকুম দিচ্ছেন তারা।

রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রধানদের প্রকাশ্যে হুঙ্কারের পর ২০ দলীয় জোটের প্রায় ২৭ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আরো অনেক নেতাকর্মী এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গুমের শিকার হয়েছেন। বাড়িঘরে অভিযান চালিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অত্যাচারে শত শত নেতাকর্মী পঙ্গু হয়েছেন। বাড়িঘর ভেঙে দেয়া হয়েছে অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীর।”
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, “বাংলাদেশের আদালতে আজ ন্যায় বিচারের কোন সুযোগ নেই। বিচার ও আদালত চলে সরকারের ইচ্ছায়। কমনওয়েলথভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ৩টি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান প্রধানের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় বাংলাদেশে মানবাধিকারবিরোধী কার্যক্রমগুলোর নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাই এই মামলার মূল লক্ষ্য” বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে ইউরোপভিত্তিক প্রবাসী সংগঠন সিটিজেন মুভমেন্টের আহ্বায়ক এমএ মালেক, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মানবাধিকারবিষয়ক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিক, বিএনপি নেতা কামাল উদ্দিন, সৈয়দ জাবেদ ইকবাল, এমাদুর রহমান এমাদ, খসরুজ্জামান খসরু, ব্যারিস্টার তমিজ উদ্দিন, ব্যারিস্টার আলিমুল হক লিটন, ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন, শহীদ মুসা, মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির রাসেল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : শীর্ষ নিউজ

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *