লাইফ সাপোর্টে পোলট্রিশিল্প দিনে ক্ষতি ২২ কোটি টাকা

লাইফ সাপোর্টে কোনোভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে দেশের সম্ভাবনাময় পোলট্রিশিল্প। একটি রাজনৈতিক জোটের ৩০ দিনের টানা অবরোধ কর্মসূচির কারণে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় দেশের অন্য খাতের ব্যবসায়ীদের মতো পোলট্রি খাতের ব্যবসায়ীদেরও দিশাহারা অবস্থা। এ ছাড়া অবরোধের সঙ্গে মাঝে মধ্যে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সহিংস হরতাল। এ অবস্থায় পরিবহনে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থা। ফলে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ডিম ও মুরগি অবিক্রীত থাকছে। এ ছাড়া বিক্রি করতে না পারায় খাদ্যের অভাবে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ২২ লাখ মুরগির বাচ্চা মেরে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। সব মিলিয়ে পোলট্রি খাতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ২২ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত ৩০ দিনের হরতাল-অবরোধে এ খাতে ৬৩৮ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন।

এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, পোলট্রি একটি সম্ভাবনাময় শিল্প। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ খাতের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে আছেন। খাদ্যের অভাবে মেরে ফেলতে হচ্ছে মুরগির বাচ্চা। নষ্ট হচ্ছে ডিম।এ ছাড়া এ প্রসঙ্গে কয়েকজন নিরুপায় ব্যবসায়ী বলছেন, এভাবে টানা অবরোধ চলতে থাকলে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমাদের পথে বসতে হবে। ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ করা যাবে না এবং অচিরেই পুঁজি হারাতে হবে অনেককেই। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এম এ খান বলেন, ২০০৭ সালে পোলট্রি খাতে প্রায় দেড় লাখ ছোট-বড় খামার ছিল। কিন্তু বার্ডফ্লুর কারণে তা কমে ৭০ হাজারে নেমে আসে। বর্তমানে এ খাতে বিনিয়োগকৃত টাকার পরিমাণ ২৫ হাজার কোটি। কর্মসংস্থান হয়েছে ৭০ লাখ মানুষের। কিন্তু চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের দেউলিয়া হওয়ার দশা। তিনি আরও বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান অনেক কমে গেছে। মায়ের দোয়া পোলট্রি খামারের মালিক আবদুল মালেক বলেন, এ শিল্পের সঙ্গে বিপুল জনগোষ্ঠী জড়িত। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই মুশকিল হয়ে পড়ছে। এ খাতসংশ্লিষ্ট সবার পথে বসার দশা হয়েছে। জানতে চাইলে ইউনাইটেড পোলট্রি খামারের মালিক এম এ মান্নান বলেন, প্রতিদিন ফ্যাক্টরিতে উৎপাদিত ফিডের চাহিদা প্রায় সাড়ে ৬ হাজার মেট্রিক টন। গত ৩০ দিনে এ চাহিদা ছিল প্রায় ১৭৩ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসাবে এ খাতে লোকসান হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ভারত, চীন বা ইউরোপ থেকে আসা মুরগির খাদ্যের প্রায় ৮০ শতাংশ বিভিন্ন বন্দরে আটকে আছে। পোলট্রি সূত্র জানায়, আশির দশকে দেশে পোলট্রি খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকায়।দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ফজলে রহিম খান বলেন, ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়। সে ক্ষতিই আমরা এখনো পুষিয়ে উঠতে পারিনি। এর মধ্যে গত ৫ জানুয়ারি থেকে ফের রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এ অবস্থার দ্রুত অবসান না হলে পোলট্রি শিল্প সংশ্লিষ্টদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, পোলট্রিশিল্প অন্য শিল্প থেকে একটু আলাদা। দেশে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ কোটি ডিম এবং ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদন হয়। প্রতি সপ্তাহে একদিন বয়সী বাচ্চা উৎপাদিত হয় প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ। কিন্তু এসব মুরগির ডিম, বাচ্চা ও মাংস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। সংগঠনের অপর সহসভাপতি আবু লুৎফে ফজলে রহিম বলেন, বাংলাদেশের পোলট্রিশিল্পকে এখন লাইফ সাপোর্টে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে এ শিল্পের।

২ thoughts on “লাইফ সাপোর্টে পোলট্রিশিল্প দিনে ক্ষতি ২২ কোটি টাকা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *