দুদককে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের অসহযোগিতা

আইসিবি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের বিরুদ্ধে তথ্য সরবারহ না করে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

হাজার কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে ওই প্রতিষ্ঠানের কাছে তথ্য চেয়ে দুবার চিঠি দেয় দুদক। ৩০ দিন সময় নেওয়ার পরও তথ্য দেয়নি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। তাই রোববার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তৃতীয়বারের মতো ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

দুদকের উপ-পরিচালক মো. জুলফিকার আলীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে তাদের আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। দুদকের একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর প্রথমবার তথ্য চেয়ে চিঠি দেয় দুদক। ওই চিঠির কোনো উত্তর না দিলে ওই বছরের ২০ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেয় দুদক। ওই সময় কমিশনের কাছ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তথ্য দিতে এক মাসের সময় চেয়ে নেয়। নির্ধারিত সময়ের চেযে দুই মাস বেশি সময় পার করলেও এখনো কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে আবারও নথিপত্র চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ১৯(৩) ধারায় কমিশন থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে কোনো কর্মকর্তাকে ১৯(১) ধারার ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তি অমান্য করলে তার জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। আপনাদের যথাসময়ে ঋণ সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের ছায়ালিপি সরবরাহ না করায় অনুসন্ধান কাজে অহেতুক বিঘ্ন ঘটছে।’

চিঠিতে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের বংশাল শাখার গ্রাহক ওয়াহিদুর রহমানের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গ্রাহক প্রতিষ্ঠান অটো রিফাইন, ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজ, ফিয়াজ ট্রেডিং, পলাশ এন্টারপ্রাইজ, মাসুদ ট্রেডিং, ইউনাইটেড এজেন্সি, ওয়েস্ট্রান গ্রিল ও ডেং স্কি লায়ন রেস্টুরেন্টের নামে বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ, ঋণের ধরণ, বর্তমান অবস্থা সংক্রান্ত প্রতিবেদন এবং ওই গ্রাহকদের হিসাব খোলার ফরম, ব্যক্তিগত তথ্যাবলী কেওয়াইসি, টিপিসির সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

ওই গ্রাহকদের বিপরীতে ঋণ প্রদান সংক্রান্ত গ্রাহকের আবেদন, শাখার প্রস্তাব, মঞ্জুরিপত্র, বন্ধক নেওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি, ওই গ্রাহকদের ওপর পরিচালিত অভ্যন্তরীণ পরিদর্শন প্রতিবেদনের সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ঋণ প্রদানের সময়কালে ব্যাংকের ওই শাখায় কর্মরত কর্মকর্তাদের পদবীসহ নামের তালিকা ও বর্তমান অবস্থা সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী ওয়াহিদুর রহমান বিভিন্ন সময় দেশের চারটি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

এর মধ্যে বেসিক ব্যাংক থেকে ৭৬৭ কোটি টাকা, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক থেকে ১০০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ১৫২ কোটি, সিটি ব্যাংক থেকে ছয় কোটি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি থেকে দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এর বেশিরভাগ টাকাই তিনি ঋণ নিয়েছেন ভুয়া ও বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে। ব্যাংকের ঋণের নথিতে উল্লিখিত ঠিকানার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন সময়ের অনুসন্ধানে এ সব তথ্য বেরিয়ে আসলে পরবর্তী সময়ে দুদক তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক প্রতিবেদনে এসব ঋণ আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *