ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা কাজের তাগাদা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। দৈনিক পনের থেকে বিশটি গাড়ি পরিস্কার করার টার্গেট নিয়েই আসেন কর্মস্থলে। যেদিন তাড়াতাড়ি পেয়ে যান সেদিন বিশ বাইশটিও পরিস্কার করতে পারেন। আর যেদিন নেই, সেদিন পাঁচের কোটা পুরণ করতেও দুর্চিন্তার কমতি থাকেনা। ‘সব ভাগ্য’ বললেন শ্রমিকরা।
মাসে ক’টা গাড়ি পরিস্কার করেন প্রতিজন? এমন হিসেব তো আছেই সাথে মাসের শেষে কোম্পানির হাতে তুলে দিতে হবে 2500-4000 হাজার দিরহাম। এরপর যা বাকি থাকে সেটি কমিশন ধরা হয়। এটাই তাদের বেতন। থাকার ব্যবস্থা কোম্পানির হলেও খাওয়ার খরচ বাদ দিয়ে নিজের জন্য থাকে 1200 থেকে 1500 দিরহাম। ভিসা বন্ধ থাকায় ইচ্ছে থাকলেও তারা করতে পারছেনা কোম্পানি পরিবর্তন। আবার এদের মতো অনেকে জীবিকার সন্ধানে আসতে পারছেনা আরব আমিরাতে। ইস্যু একটাই বাংলাদেশি ভিসা বন্ধু। তবুও কাটছে তাদের প্রবাস জীবন।
বলছি সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘কার ওয়াশ’ এ কর্মরত শ্রমিকদের কথা। তিন লক্ষ, সাড়ে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে আমিরাতে এসেছেন ‘কার ওয়াশ’ কোম্পানিতে হাজার হাজার শ্রমিক। খুব কাছাকাছি থেকে জানতে কথা হয় এদের কয়েকজনের সাথে।
ময়মনসিংহের রাজিউল হক আমিরাতে এসেছেন পাঁচ বছর। থাকেন দুবাইয়ে সোনাপুরে। কাজ করেন দুবাই হাসপাতালের পার্কিং এলাকায়। ডিউটি সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা। এর মধ্যে করতে হয় পনের থেকে বিশটি গাড়ি পরিস্কার। গাড়ি পার্কিং করতে কেউ আসতেই এগিয়ে যান রাজিউল, জিজ্ঞেস করেন পরিস্কার করা লাগবে কি না। কথায় মিলে গেলে গাড়ির নম্বর একটি ফাইলে টুকে নেন। এই ফাইলটি আবার ঘন্টায় ঘন্টায় সুপারভাইজার এসে দেখে যান। এরপর শুরু হয় কাজ। তার কাজের হিসেব আর শপিংমলের কর্মীদের সাথে নিজের তুলনা করতে গিয়ে বললেন, ‘এখানে মুশকিল! কাম পাওন লাগবো, করণও লাগবো। একশ দিরহাম পুরাতে দিন শেষ। রোদে পুড়ি, কষ্টও হয় বেশি। আর মলের গুলো ভাল আছে পাঁচটা ওয়াশ করলে একশ। আমাদের লাগে সাত আটটা। ‘
কুমিল্লার লাঙ্গলকোট থানার আমিনুল ইসলাম। আমিরাতে চলছে তার তৃতীয় বছর। একটি ভিসা শেষ করে ফের দু’বছর মেয়াদের ভিসা নবায়ন করেছেন। দৈনিক গাড়ি পরিস্কার করার উপর নির্ভর করে বেতন। কিন্তু নিজের খাওয়ার খরচ চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন বকশিশের টাকায়। আমিনুল বললেন, ‘ কোনো গাড়ি পরিস্কার করার পর মালিকরা মাঝে মাঝে পাঁচ-দশ দিরহাম দিয়ে যায়। তাতেই নিজেকে চালিয়ে নিই। বেতনের টাকা দেশে পাঠাই।’
ময়মনসিংহের ইমাম হোসেন ‘কার ওয়াশ’ কোম্পানিতে কাজ করে কেটে গেছে আমিরাতে চার বছর। প্রায় তিন লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা খরচ করে এসেছে আমিরাতে। একটি ভিসা শেষ করে নতুন ভিসা নবায়ন করতে ফের কোম্পানিকে দিতে হয়েছে 1250 দিরহাম। যা বাংলাদেশের প্রায় 27 হাজার টাকা। বার ঘন্টা ডিউটি। একটি গাড়ি পরিস্কার করে পায় নয় থেকে বার দিরহাম। মাস শেষে কোম্পানির হাতে তুলে দিতে হয় পঁচিশ’শ দিরমাহ। তিনি জানালেন, ‘ আমাদের খাটতে হয় বেশি। এক গাড়িতে পাই নয় থেকে বার দিরহাম। আর মলে যারা কাজ করে তারা পায় প্রতি গাড়িতে আঠারো থেকে পঁচিশ দিরহাম। ওখানে পায়দা বেশি। ভিসা বন্ধ থাকা ইচ্ছে থাকলেও কোম্পানি পরিবর্তন করতে পারছিনা। আল্লাহ জানে, ভিসা খুলবো কবে!’
এদের মতো হাজার হাজার কর্মী আছেন আরব আমিরাতে ‘কার ওয়াশ’ কোম্পানিতে কাজ করেন। ভিসা বন্ধ ও কোম্পানি পরিবর্তনের সুযোগ না থাকায় বদলাতে পারছেন না নিজের ভাগ্য!
Monirul Islam Monirul Islam liked this on Facebook.
Monirul Islam liked this on Facebook.