বিয়ের ক’দিন পরই স্ত্রীর বাড়ি থেকে যৌতুক দেয়ার বিষয়টি নিয়ে স্বামীপক্ষ চাপ দেয়। এমনটা সাধারণত দেখা যায়। কিন্তু বিয়ের পর ১০ বছর একত্রে ঘরসংসার, সেইসঙ্গে ৩ সন্তানের জনক-জননী হয়েও যদি যৌতুক নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকে, আর স্ত্রীর কপালে জোটে চুলায় চড়ানো গরম তেল তাহলে বিষয়টি কেমন?
হ্যাঁ পাঠক, এমন ঘটনাই ঘটেছে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরে। যেখানে ৩ সন্তানের এক জননী গৃহবধূকে পাষণ্ড স্বামী বিয়ের ১০ বছরের মাথায়ও যৌতুকের দায় থেকে মুক্তি দেয়নি। গরম তেল দিয়ে ঝলসে দিয়েছে স্ত্রীর মুখসহ শরীরের ১০ ভাগ।
গরম তেলে ঝলসে যাওয়া ওই গৃহবধূর নাম সেলিনা বেগম (২৮)। তাকে গুরুতর অবস্থায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বর গ্রামের দানিয়া মুন্সীর ছেলে ইকবাল মুন্সীর সঙ্গে পার্শ্ববর্তী কেদারপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আলাউদ্দীন জমাদ্দারের মেয়ে সেলিনা বেগমের ২০০৫ সালে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ৩ টি সন্তানও রয়েছে। কিন্তু বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ইকবাল মুন্সী শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার জন্য স্ত্রী সেলিনাকে নির্যাতন করতেন। এর আগে দুই বারে সেলিনা বাপের বাড়ি থেকে ৪০ হাজার টাকা এনে স্বামীর হাতে তুলে দেয়।
সর্বশেষ বিদেশ যাওয়ার জন্য ইকবাল শ্বশুরবাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে বলেন তার স্ত্রী সেলিনা বেগমকে। কিন্তু কৃষক বাবার কাছে টাকা না থাকায় ওই গৃহবধূ অপারগতা জানায়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে ইকবাল সেলিনাকে ভবিষ্যতে আর কখনো বাবার বাড়ি যেতে নিষেধ করেন।যৌতুক নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে দির্ঘ দিনের দ্বন্দ্ব নতুন করে জলে উঠে।
এদিকে বুধবার গৃহবধূ সেলিনার ছোট বোন লিপি অসুস্থ হয়ে পড়েছে এমন খবরে বোনকে দেখাতে সেলিনা বাবার বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়। তারাতারি যেতে হবে এ জন্য তিনি দুপুরের রান্না শুরু করেন।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে দুপুর ১২ টার দিকে স্বামী ইকবাল বাড়িতে এসে সেলিনাকে মারধর করেন। একপর্যায়ে চুলায় থাকা গরম তেলের কড়াই সেলিনার মুখে ঢেলে দেয়।
পরে তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন দ্রুত সেলিনাকে উদ্ধার করে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় বুধবার বিকেল ৪টার দিকে সেলিনাকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা।
নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. তনুশ্রী বর্মন জানান, গরম তেলে সেলিনার মুখমন্ডলসহ শরীরের ১০ শতাংশ জায়গা ঝলসে গেছে। সেলিনার ডান চোখটি নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।
আহত সেলিনার ছোট বোন আলেমা বেগম (২৩) বলেন, ‘আমার বাবা গরীব কৃষক। অনেক কষ্টে ধার দেনা করে বোনের বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ের পরেও অনেক টাকা দিতে হয়েছে। টাকা না দিলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বোনকে মারধর করতো। সর্বশেষ টাকা দিতে না পারায় বোনের বাড়ি আসা বন্ধ করে দিয়েছিল।’
এ ব্যাপারে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ কবিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনা জানতে পেরে নড়িয়া থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে আহত সেলিনার পরিবারের সাথে কথা বলেছে। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
Realist Rakib liked this on Facebook.
Sheikh Kamal liked this on Facebook.
Rumpa Tawfiq liked this on Facebook.
Ali Imran Shamim liked this on Facebook.
Realist Rakib liked this on Facebook.
Sheikh Kamal liked this on Facebook.
Rumpa Tawfiq liked this on Facebook.
Ali Imran Shamim liked this on Facebook.