কোন অঞ্চলের কোন পিঠা

ঢাকা: বাংলার ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পিঠা। যেকোন উৎসব আনন্দে মিশে আছে রকমারি সব পিঠা। বাঙালির লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিতে আবহমান কাল ধরে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আদিকাল থেকেই বাংলায় হেমন্ত ঋতুতে কৃষকের ঘরে নতুন ফসল উঠলে আয়োজন করা হত পিঠা উৎসব। এরই ধারাবাহিকতা চলত শীতকাল পর্যন্ত। বিয়ের পর নতুন জামাইয়ের জন্য বাড়ির মেয়েরা তৈরি করতেন নানা ধরনের পিঠা। মেয়ে বা ছেলের শ্বশুর বাড়িতে উপঢৌকন হিসেবে আলপনা আঁকা মাটির হাঁড়িতে পিঠা দেওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল এক সময়। সেসব পিঠা-পায়েসকে নিয়ে গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে এখনও প্রচলিত রয়েছে অসংখ্য ছড়া ও গান।

নানা রকম বিদেশি খাবারের প্রাচুর্য্যের কারণে নতুন প্রজন্মের শহুরে নাগরিকদের অনেকেই অনেক পিঠা চেনে না। বাঙালিয়ানা পিঠার আসল স্বাদও পায় না। নাগরিক জীবনে এবং দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের শত শত রকমের পিঠাকে পরিচিত করে তুলতে জাতীয় পিঠা উৎসব উদযাপন পরিষদ। প্রতিবারের মতো এবারও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাঠে আয়োজন করছে পিঠা উৎসবের। অষ্টমবারের মতো এ উৎসব চলছে ১৯ থেকে ২৭ জানুয়ারি পযর্ন্ত। নয় দিন ব্যাপী জাতীয় এ পিঠা উৎসবে রয়েছে ৪০টি স্টল। যেখানে আছে ১৫২ রকম পিঠা। স্টলগুলোতে পিঠা তৈরি, প্রদর্শন ও বিক্রি করা হচ্ছে।

পিঠা উৎসবকে কেন্দ্র করে এখানে তৈরি করা হয়েছে উৎসব মঞ্চ। ‘প্রতিদিন বিকেল ৪টা থেকে উৎসব মঞ্চে নাটক, আবৃত্তি, নৃত্য, কৌতুক, লোকসঙ্গীত, লালনগীতি, হাসন রাজা, শাহ আব্দুল করিম, রাধারমন ও ভাওয়াইয়া গানের বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। পিঠা শিল্পীদের উৎসাহ যোগাতে উৎসব শেষে অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের পাঁচজনকে সেরা পিঠাশিল্পী সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন উৎসব উদযাপন কমিটির সভাপতি নাট্যব্যাক্তিত্ব ম হামিদ।

pitha-3বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পিঠার ধরন বিভিন্ন, স্বাদেও রয়েছে ভিন্নতা। এ বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পিঠা নিয়ে তৈরি করা হয়েছে আলাদা আলাদা স্টল। মেলায় রয়েছে চট্রগ্রাম, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, দিনাজপুর, নেত্রকোনা, কুমিল্লা, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, সিলেট ও চাপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের পিঠার স্টল।

স্টলগুলো ঘুরে দেখা গেছে সিলেট অঞ্চলের পিঠার মধ্যে রয়েছে পাকন পিঠা, জিলাপি পিঠা, মুরগির ঝাল পিঠা, বেনী পিঠা, পান্তোয়া পিঠা। কুমিল্লার পিঠার মধ্যে আছে গোটা পিঠা, চিতই পিঠা, রসকদম, গাজরের পাটি সাপটা, ডিমের বিস্কুট পিঠা, মেরী পিঠা, কানজিন চাপটি, চিটা পিঠা, জামাই পিঠা (নতুন জামাইকে দিতে হয়), মুগপাকন, নকশী, রসচিতই পিঠা, পাংশা পিঠা, ঝিনুক, ঝালজামাই, কুসুমকলি, ইলিশপুলি, ডিমচিতই, ঝালচিতই, সেমাইপিঠা, কিমাপুরি ও ডাল পুরিপিঠা, মিষ্টিপোয়া, ঝালপোয়া, বিস্কুটপিঠা, ভেজিটেবল পিঠা প্রভৃতি।

নোয়াখালী অঞ্চলের পিঠার মধ্যে আছে চাইন্না পিঠা, দুধ পুলি, ‍খেজুর পিঠা, শিমের পিঠা, নারিকেলের পুলি পিঠা, শুকনো পিঠা, ঝিলমিল পিঠা, দুধ ঝুলি পিঠা, চই পিঠা, চুটকি পিঠা, কলিজা পিঠা, সুজির পিঠা। দিনাজপুরের বিবিখানা, পোড়া পিঠা, ইলিশ পিঠা, মনোলোভা, বিমোলিনা, চমচম পিঠা, গোলাপ পিঠা, রসফুল পিঠা, চকলেট পিঠা, ঝুনা পুলি, ভাপাপুলি, মম পিঠা ও ঘরভাজা পিঠা।

বৃহত্তর ফরিদপুরের পিঠার মধ্যে আছে তক্তি পিঠা, চাপটি পিঠা, সিদ্ধ পুলি, দুধ পুলি, পান পিঠা, তাল চুষি পিঠা, আন্তোয়া পিঠা, পাকান পিঠা, কাটা পিঠা। মাদারী পুরের পিঠার মধ্যে রসেই চিতই, ডাল রসা, রসমারি, লালমোহন পিঠা, চই পিঠা প্রভৃতি। মুন্সিগঞ্জের আছে খাম্বা পিঠা, ঝাল চন্দ্র পুলি, ঝাল পুলি পিঠা, চিকেন ঝাল পিঠা, শাহী পিঠা, মালাই পিঠা, তিল পুলি পিঠা।

চট্রগ্রামের গারোদের অঞ্চলে কলা ,নারিকেল, চালের গুড়ি ও গুড় দিয়ে তৈরী করা হয় পানখিলি ও কাঠালপাতা পিঠা, এছাড়া অছে বিফপুলি, চিকেনপুলি, পোয়াপিঠা, কলাপাতার পিঠা, বিন্নি পুলি, রসদোলা পিঠা।

দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এবারের উৎসবে পিঠা বিক্রি খুব কম হয়েছে বলে জানানেল পিঠা বিক্রেতা কুমিল্লা স্টলের মালিক  মো. বিপ্লব হোসেন। তিনি বাংলামেইলকে জানালেন, অন্য বছরগুলোতে  প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকার বেশি পিঠা বিক্রি হলেও এবারে প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার টাকার পিঠা বিক্রি হয়েছে তার স্টলে।

শখের বসে বিভিন্ন মেলায় পিঠা উপস্থাপন করেন সৈয়দা মনছুরা আক্তার রেশমা। বুটিক হাউসের ব্যবসায়ী লক্ষীপুর স্টলের মালিক রেশমা বাংলামেইলকে জানালেন, পিঠা তৈরি করতে তিনি ব্যবহার করেন চালের গুড়া, খেজুর গুড়, চিনি, ময়দা, কালোজিরা, তৈল, কয়েলের স্টান, বোতলের মুখ, ইনজেকশনের সিরিজ, কলাগাছের ডগা ও বাঁশের কাইম। তার স্টলে পাওয়া যাবে ৫ থেকে ৫০ টাকা দামের পিঠা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *