পূর্ব বাংলাতে পাখী শিকার

যে মানুষ হত্যা করে সে খুনি। যার নির্দেশে মানুষ হত্যা করা হয় সে খুনী। ক্রিমিনাল কোর্টে এই খুনীদের বিচার হওয়া উচিৎ। বিচারের মাধ্যমে শাস্তি হওয়া উচিৎ। নানা অজুহাতে বাংলাদেশে প্রতিদিন মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে ভয় দেখাবার জন্য যাতে তারা রাজনীতি ছেড়ে দেয়। বিরোধীদলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যার “মৌসুমে” অনেকেই “অবাধে মানুষ হত্যার” পূর্ণ সুযোগ নিয়ে ব্যক্তিগত শত্রুদের উপরে প্রতিশোধ নিচ্ছে। বাংলাদেশ যতদিন স্বাধীন না হবে ততদিন এই “মৌসুমী হত্যা” চলতে থাকবে।

চুরি, দুর্নীতি, চান্দাবাজী, ঘুষ নেওয়া ও দেওয়া সব কিছুই অপরাধ। কিন্তু বাংলাদেশে এইসব কিছুই খুব স্বাভাবিক লেনদেনের মত। এইসব অপরাধগুলো এত স্বাভাবিক কিভাবে হয়েছে? অপরাধীরা খোলা আকাশের নীচে অবাধে অপরাধ করে বেড়াচ্ছে কারন এরা প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সরকারের পোষ্য। এই অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় হলো — অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। রাজনীতির সাথে নিজেকে না জড়িয়ে সামাজিক সংগঠন গড়ে তোলা যারা সমাজের অপরাধগুলোকে প্রতিহত করবে। যাদের উদ্দেশ্য থাকবে শুধু সমাজকে অপরাধমুক্ত রাখা। অপরাধীদের প্রতিহত করা।

বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলই দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল নয়। তাই বাংলাদেশের কোন দেশপ্রেমিক নাগরিকের এইসব রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত থাকা উচিৎ নয় ।

সেদিন মাত্র ১৭ বছর বয়সের তুহিনকে ঘরে ঢুকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে জনিকে হত্যা করা হয়েছে। এর আগে কায়েসকে হত্যা করা হয়েছে, মতিউরকে হত্যা করা হয়েছে আরো অনেককে হত্যা করা হয়েছে। এদের দোষ এরা রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। আমরা একজন তথাকথিত রাজনৈতিক নেতার কথা জানি যে নাকি রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। রাজনীতি করার অপরাধে কেউ কখনও এই নেতাকে হত্যা করেনি।

আইয়ূব খানের সাথে সেই নেতার বন্ধুত্ব ছিল। সবাইকে গুলি করলেও আইয়ূবের পুলিশ সেই নেতাকে কোনদিন ফুল দিয়েও টোকা দেয়নি। আইয়ুবের আমলে রাজবন্দীদের উপরে নির্যাতন করা হয়েছে। কিন্তু সেই নেতার শরীরে ফুল দিয়েও আঘাত করা হয়নি।

ইয়াহিয়া খানের সাথে সেই নেতাকে বন্ধুত্ব ছিল। সেই নেতার মৌখিক শুমারি অনুযায়ী ১৯৭১ সালে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু সেই নেতার শরীরে কেউ ভুল করে ফুল দিয়েও আঘাত করেনি। ১৯৭১ সালে ঢাকাতে সেই নেতার পরিবারকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছিল । মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু যিনি ্সেই নেতার মেয়ের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিলেন এবং এক্সিকিউশন স্টাইলে যিনি সেই নেতার মেয়ের নির্দেশে মানুষ হত্যা করতে বা করাতেন যাকে সেই নেতার মেয়ে “অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে” তিনি তার ঐতিহাসিক দলিল “আমার ফাঁসী চাই” ইতিহাসে লিখেছেন যে সেই নেতার মেয়ে নাকি “পাক হানাদার বাহিনীকে পছন্দ করতো কারণ হানাদার বাহিনী সেই নেতার মেয়েকে সব সময় স্যালুট করতো। ১৯৭১ সালের নয় মাস সাড়া পূর্ব বাংলাতে যখন নারী ধর্ষন করা হচ্ছিল তখন সেই একই হানাদার বাহিনী সেই নেতার মেয়েকে স্যালুট করতো।

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সেই নেতার বন্ধু ছিল। পাকিস্তান থেকে গান্ধী সেই নেতাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বাংলাদেশের সরকার হিসাবে প্রতিষ্টিত করে। পরবর্তীকালে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করাকে সেই নেতা “নিয়ম” বা “আইন” হিসাবে প্রতিষ্টিত করে।

পূর্ব বাংলার সর্বহারা পার্টির নেতা দেশপ্রেমিক মুক্তিযোদ্ধা কৃতি প্রকৌশলী, রাজনৈতিক লেখক কমরেড সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার মাধ্যমে পূর্ব বাংলাতে “ক্রশফায়ার” শব্দের প্রচলণ করে সেই নেতা। তথাকথিত “বন্দুক যুদ্ধ” । পালিয়ে যাবার সময়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। কোন উপায় ছিলনা। কোথায় এখন সিরাজ সিকদার – সংসদে এসে হুঙ্কার ছাড়ে সেই নেতা। ভয় ছিল ক্ষমতা হারাবার। ভয় ছিল সুযোগ সুবিধা সুখ হারাবার। ভয় ছিল মানুষ হত্যা করার আনন্দ হারাবার। রেফারেন্স হিসাবে একটি বই পড়া যেতে পারে। বইটি নিয়ামত ইমামের লেখা । বইটির নাম “দ্যা ব্লাক কোট” বা “The Black Coat” ।

আজকে সাধারন মানুষের কথা হলো “রাজনীতি করলেই আমাদের মরতে হবে। মরার জন্য আমরা প্রস্তুত” । শিশু, কিশোর,তরুন সবাই রাজনীতি করে মরার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু সেই নেতা নাই বা সেই রাজনৈতিক দল নাই যেই দল এইসব মৃত্যুর সঠিক মূল্যায়ন করবে । সেই নেতা সেটা জানতো । সেই নেতা রাজনীতি ঠিকই করতো কিন্তু মরার জন্য প্রস্তুত ছিলনা। মৃত্যু এসে হাজির হবার আগেই সেই নেতা নিরাপদ স্থান, জেলে ঢুকে বসে থাকতো। বাইরে যখন গুলি চলছে সেই নেতা তখন নিরাপদে জেলে বসে আছে। সবাই জেলের তালা ভেঙ্গে সেই নেতাকে মুক্ত করবে সেই অপেক্ষায় । নিরাপদে সুরক্ষিত থাকা হলো আবার জনপ্রিয়তাও অর্জিত হলো। মৃত্যু এসে সবাইকে নিয়ে যায় শুধু সেই নেতা মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে বেড়ায়।

পূর্ব বাংলাতে মানুষ হত্যা করার পরে বলা হয় – বিডিয়ারদের আভ্যন্তরীণ কলহ ও ভুল বোঝাবুঝির ফলে নিজেরা নিজেদের হাতে নিহত হয়েছে।
পূর্ব বাংলাতে মানুষ হত্যা করার পরে বলা হয় – রং মেখে শুয়ে ছিল। ৫-৬ মে ২০১৩ সালে সাড়া বাংলাদেশের মাদ্রাসা থেকে যেসব ছেলেরা ঢাকার শাপলা চত্বরে এসেছিল তাদের সবাইকে যার যার বাসাতে পৌছে দেওয়া হয়েছে।
পূর্ব বাংলাতে মানুষ হত্যা করার পরে বলা হয় – বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। হাতে বোমা ধরিয়ে দিয়ে গুলি করা হয় আর বলা হয় বোমা বানাতে যেয়ে নিহত হয়েছে, ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.