মাঘ মাস.. হাড় কাঁপানো শীত। কুয়াশার জন্য দশ হাত সামনের কিছু দেখা যায়না। সকাল সাত টা,তীব্র শীতের কারনে এ সময়টাতে রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে।
খুকী প্রতিদিন এ সময়টাতে তার বান্ধবীর সাথে পড়তে যায়। আমিও প্রতিদিন দারোয়ানের মতো রাস্তার পাশে তাল গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকি তার পথ চেয়ে। সে আসবে… কিছুই না.. শুধু একপলক দেখার জন্য। এ যেন আমার সারাদিনের খোরাক।
প্রায় সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় সে মুচকি হাসে। আমি তখন নিজেকে আড়াল করতে ব্যাস্ত থাকি।
জানুয়ারীর ২২ তারিখ, খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে নিজের তেরে নাম স্টাইলের চুলে চিরুনি চালিয়ে সাদা একটি পাঞ্জাবী গায়ে লাগিয়ে রসিক হয়ে বেরিয়ে পড়লাম এক দফা এক দাবী নিয়ে।
আজ তাকে বলবোই,দীর্ঘদিন হৃদয়ের গভীরে লালন করা কথাটি।
নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রাস্তায় এসে দাঁড়ালাম। পাতলা একটা পাঞ্জাবী পড়ে তেমন শীত অনুভূত হচ্ছেনা। কিচ্ছুক্ষনের মধ্যেই দেখা দিলো আমার মনের চাঁদ। আমি তার হাঁটার সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটার চেষ্টা করছি।
নাহ… আজ সে হাসছেনা। একটু ইতস্তত বুঝা যাচ্ছে।
ডাক দিলাম… খুকী দাঁড়াও,তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।
হাঁটতে হাঁটতেই তার জবাব.. কি বলবেন বলেন,দাঁড়াতে পারবোনা।
এবার আমি তার সামনে গিয়ে দাঁড়াই,কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছেনা।
হৃদয় আর হাঁটুর কাঁপুনিতে আমি আমতা আমতা করছি। আর বার বার বলতে চেয়েও তোতলাতে তোতলাতে আমি তোমাকে তেই আটকে যাই।
আমার অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে দিয়ে খুকী… না বলতে পারলে বাসায় গিয়ে আয়নার সামনে রিহার্সেল করুন।
নাহ.. অবশেষে বলতে পেরেছিলাম “আমি তোমাকে ভালোবাসি”। সে দিন সে একসেপ্ট বাটনে চাপ না দিয়ে আমাকে ফলোয়ার বানিয়ে দেয়। আমিও তার হৃদয়ে যায়গা পাওয়ার জন্য প্রতিদিন লাইক কমেন্ট থুক্কু রাস্তায় দাঁড়িয়ে দারোয়ানের চাকরী ভালোভাবেই করে যাই।
একদিন আমাকে অবাক করে দিয়ে খুকী বলে.. যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন তবে আমাকে পাবেন। তাকে পাওয়ার আশায় সব ছেড়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য লেগে যাই। কেটে গেলো কয়েক বছর। হঠাৎ একদিন তার বিয়েও হয়ে গেলো। মনে হলো সব হারিয়ে ফেললাম।
আজ অনেক বছর পর খুব জানতে ইচ্ছে করে… কেন সে দিন আমার পা থাকা সত্ত্বেও নিজের পায়ে দাঁড়াতে বললে। এসে দেখে যাও.. শুধু নিজের পায়েই দাঁড়াইনি,আরো দশজন কাঁধে নিতে পারবো। শুধু তোমার ভার টুকু নিতে দিলেনা।
বিঃদ্রঃ কারো আশ্বাসে নিজের ক্যারিয়ার ধ্বংশ করবেন না।
লেখক ঃ নয়ন