[লেখাটি লিখেছে জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগার ‘ক্যাপ্টেন নিমো’ ছদ্মনাম ]
গত শুক্রবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল ইউনিয়নের কোণাপাড়া কাঠের পুল এলাকায় এক যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় ২৯ জনকে ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, প্রথমে ককটেল চার্জ করে বাসটি থামানো হয়, এরপরই চারপাশ থেকে দুর্বৃত্তরা জানালা ভেঙ্গে ৬-৭টি পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে দেয়। পরবর্তীতে তারা অদূরে অপেক্ষা করা মোটর সাইকেলে করে পালিয়ে যায়।
এরপর এই ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠে। বেগম খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামী করে বিএনপির ৫০ জন শীর্ষ নেতার নামে মামলা দায়ের করা হয় এবং সেলিম ভুঁইয়া নামক একজন শিক্ষক নেতাকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে।
এই ঘটনা শোনার পরপরই আমাদের জেড ফোরস মেম্বারদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানী টিম গঠন করা হয়। এদের রিপোর্টের ভিত্তিতেই হাসিনার বার্ন ইউনিটের নাটক উন্মোচন করা হবে এই পোষ্টে।
ফ্যাক্ট ১, মাতুয়াইল কাঠের পুল
যেই স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তার সামনেই কাঠের পুল পেরিয়ে ২ মিনিট হাঁটা দূরত্বে ঢাকা-৫ আসনের অবৈধ এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার বাসা। হামলাটি আরও দুই কিলোমিটার দূরে হতে পারতো, কিন্তু ঘর ফেরত শ্রমিকদের দৃষ্টি এড়াতে এরকম নিরাপদ জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে।
ফ্যাক্ট ২, সন্ত্রাসবিরোধী মঞ্চ
৫ই জানুয়ারি বিএনপির ডাকা সমাবেশ ঠেকাতে এই পয়েন্টটিতে সদল বলে অবস্থান নিয়েছিলেন এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা। সেই সময় একটি শামিয়ানাও টানানো হয়। এটি এখনো রয়ে গেছে এবং সেখানে নিয়মিত আড্ডা দেয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। এলাকাবাসীরা আসতে যেতে তাদের দেখে সেখানে; এই শামিয়ানার মাত্র ৪০০ গজ দূরেই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ফ্যাক্ট ৩, এমপির ভাতিজা এবং নাতী
শুধুমাত্র গুগোলে “হাবিবুর রহমান মোল্লার পরিবারের চাঁদাবাজি” লিখে সার্চ দিন, সব রিপোর্ট পেয়ে যাবেন। যাত্রাবাড়ি হয়ে বিভিন্ন সড়কে এমন কোন বাস-ট্রাক যায় না, যা মোল্লা পরিবারকে চাঁদা দেয় না। এর মাঝে এমপির এলাকার উপর দিয়ে যাওয়া ঢাকা-নরসিংদী রুটটির চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে হাবিব মোল্লার ভাতিজা মামুন মোল্লা এবং নাতী শহীদুল ইসলাম শহীদ। তাদের নিয়োগ করা ২০ জন ছাত্রলীগ ক্যাডার এবং লাইনম্যান পদবীর চাঁদা আদায়কারী ২৪ ঘণ্টা টহল দেয় এই রাস্তায়। এখানে বাহিরের লোকের এসে ২৯ জনকে পেট্রোল বোমায় পুড়ানো পুরোই অসম্ভব।
ফ্যাক্ট ৪, স্থানীয় বিএনপি
একই সাথে আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের যৌথ নির্যাতন-গ্রেপ্তারে উক্ত এলাকা অনেকদিন ধরেই বিএনপি শুন্য। বিএনপির কাচপুর জনসভার আগের রাতে স্থানীয় বিএনপি নেতা এডঃ সিরাজ উদ্দিন মজুমদার এরেস্ট হবার পর কোন বিএনপি কর্মীকে এই পর্যন্ত এলাকায় দেখা যায় নি। এমন অবস্থায়, এমপির বাড়ির সামনে গিয়ে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ভর্তি এলাকায় পেট্রোল বোমা হামলা করবে এটা পুরোই অবাস্তব।
ফ্যাক্ট ৫, সন্দেহজনক মোটরসাইকেল
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সেদিন সন্ধ্যায় এমপির ভাতিজা মামুনের কাছে কয়েকটি মোটর সাইকেল আসে, সেখানে ডেমরা-যাত্রাবাড়ী থানার ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই শওকত উপস্থিত ছিল। এরা আসার পরই স্থানীয় ছাত্রলীগ এবং পুলিশের মাঝে সাজ সাজ রব দেখা যায়। পুলিশ এবং মামুনকে হামলার আগে উক্ত স্থানের দিকে কয়েকবারই যেতে দেখা গেছে। হামলার পরে আর মোটর সাইকেলগুলো দেখা যায়নি।
এই হচ্ছে একটি বার্ন ইউনিট নাটকের পর্দার পিছনের কাহিনী। এটা যে হাসিনার মদদেই হয়েছে তাতে কি কারও সন্দেহ আছে?
মুক্তকথা বিভাগে সকল লেখা/কথা একান্তই লেখকের নিজেস্ব এবং মুক্তকথা বিভাগে প্রকাশিত কোন লেখা প্রবাসনিউজ২৪.কম দায়ভার বহণ করে না।