ঢাকায় পৌঁছলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট

ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন নতুন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। আজ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি ঢাকায় হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছেন। আগামী দু-তিন কর্মদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে পরিচয়পত্র হস্তান্তর করে আনুষ্ঠানিক কর্তব্য পালন শুরু করবেন তিনি। তিনি সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার বহুল আলোচিত তিন বছর সময়কালের পর এই দায়িত্বে আসলেন।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতার ধারাবাহিকতায় বার্নিকাটের ভূমিকা কী হবে, তা দেখতে আগ্রহ নিয়ে বসে আছেন পর্যবেক্ষকরা। যদিও ইতিমধ্যে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ এবং সংলাপের প্রয়োজন বলে বক্তব্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে আলোচনাতেই আছেন বার্নিকাট।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় পঞ্চদশ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আফ্রিকান বংশোদ্ভূত বার্নিকাটের ২৭ বছরের পেশাদার কূটনৈতিক ক্যারিয়ার। একসময় মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপ-সহকারী মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা বার্নিকাট ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সেনেগাল ও গিনি বিসাউতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। এর আগে ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের দক্ষিণ এশিয়া ডেস্কে ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভুটানবিষয়ক পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার আগে বারবাডোজ ও মালাবিতে উপরাষ্ট্রদূতের পদেও ছিলেন তিনি। এরও আগে ১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া দিল্লি মিশনে। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ নভেম্বর বাংলাদেশে তার নিয়োগ চূড়ান্ত হয়। এর আগেই সিনেট কমিটির শুনানিতে বার্নিকাট বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে তিনি গত তিন দশকে বিশ্বের পাঁচটি অঞ্চলের আটটি দেশে দায়িত্ব পালন করেছেন। ‘আমার দুই ছেলে সুমিত নিকোলাস ও সুনিল ক্রিস্টোফার ভারতীয় উপমহাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে এবং তাদের বাবা অলিভিয়ের বার্নিকাটের মতোই পুরো বিশ্বকে নিজেদের ক্লাসরুম বলে মনে করে’।

বাংলাদেশে নতুন দায়িত্বে এলেও এখানকার নির্বাচন, সংলাপ, মানবাধিকার, যুদ্ধাপরাধের বিচার, গ্রামীণ ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বার্নিকাটের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে কিছুটা ইঙ্গিত পাওয়া যায় সিনেট শুনানিতে দেওয়া বক্তব্যে। সেখানে বার্নিকাট বলেছেন, “দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ‘কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ রাষ্ট্র বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনের মনোনয়নে আমি সম্মানিত। দায়িত্ব পেলে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার ও কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, মানব পাচার রোধ, সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা, শান্তিরক্ষা, মাদক ও অস্ত্র পাচার রোধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকি ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি অনুসারে কাজ করব। আমি বাংলাদেশে জবাবদিহিতার প্রসার এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র শক্তিশালী করার প্রচেষ্টাকে সহযোগিতা করতে কঠোর পরিশ্রম করব।” নতুন রাষ্ট্রদূত সিনেট শুনানিতে আরও বলেন, ‘৫ জানুয়ারির সংসদীয় নির্বাচন নিঃসন্দেহে ত্রুটিপূর্ণ ছিল এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে গঠনমূলক সংলাপে অংশগ্রহণ করা দরকার; যা আরও প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার গঠনের দিকে এগিয়ে যাবে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমি বাংলাদেশের সরকার, সুশীল সমাজ ও সব শ্রেণির বাংলাদেশির সঙ্গে কাজ করব যাতে সবচেয়ে বিস্তৃত ও ন্যায়সঙ্গত অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করে এমন একটি পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়। আমি আন্তরিকভাবে মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা, সুশীল সমাজের প্রসারের সুযোগ, সহিংসতা দ্বারা কলঙ্কিত নয় এমন অবাধ ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মতপার্থক্যের আলোচনা এবং একটি স্বাধীন বিচারব্যবস্থা দ্বারা আইনের শাসনের প্রতি অনুগত হওয়াসহ শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে তুলে ধরে এমন নীতির প্রচার করব।’ যুদ্ধাপরাধের বিচার ও গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে বার্নিকাটের মত হলো- ‘১৯৭১ সালের যুদ্ধে যারা নৃশংসতা চালিয়েছিল তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে, তবে সেই বিচার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ এবং আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে। গ্রামীণ ব্যাংকের অব্যাহত কার্যকরিতা নিশ্চিত করতে এবং এর অনন্য প্রশাসনিক কাঠামো সংরক্ষণ করতেও আমরা সরকারকে উৎসাহিত করছি।’ঢাকার কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে টানাপড়েনে থাকা ঢাকা-ওয়াশিংটন রাজনৈতিক সম্পর্ককে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যান্য শাখার মতো ইতিবাচক দিকে নিতে পারাটাই রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের সামনে চ্যালেঞ্জ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *