পানির অপচয় রোধে তিন যুবকের বিশেষ সার্কিট উদ্ভাবন

স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানির ট্যাংকির মোটর চালু ও বন্ধ করার সুবিধা দিতে ফরিদপুরের তিন যুবক তৈরি করেছে ‘অটোমেটিক ওয়াটার পাম্প অ্যান্ড রিজার্ভ ট্যাংক কন্ট্রোলার’ নামক নতুন একটি সার্কিট।

ট্যাংকিতে পানির স্তর নেমে গেলে এটি সার্কিটের ফলে স্বয়ক্রিয়ভাবে মোটর চালু হবে আবার পানি ভরে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মোটর বন্ধ হয়ে যাবে। এর জন্যে আলাদা করে মোটর অপারেটরের প্রয়োজন হবে না। এ ছাড়া পানির ট্যাংকি ভরে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও যথাসময়ে মোটর বন্ধ করতে না পারায় অবিরাম পানি পড়ে যাওয়া কিংবা বাথরুমে ঢুকে পানি না পেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে সহজেই মুক্তি মিলবে।

এরই মধ্যে ফরিদপুরের ২০টি বাসাবাড়ি, হাসপাতাল ও আবাসিক হোটেলে প্রায় ২ মাস যাবত এই সার্কিট পরীক্ষামূলক ভাবে চালিয়ে সুফল পাওয়ার পর এখন এটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যশোর মডেল পলিকেটনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. গোলাম আজম ও মোহন কুমার পাল এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী মো. বনি ইসমাইল- এই তিনবন্ধু মিলে সার্কিটটির উদ্ভাবন ও প্রসারের কাজ করছে।

যন্ত্রটির উদ্ভাবক হিসেবে এই যুবকদের দাবী, সার্কিটটি স্থাপন করা হলে রিজার্ভ ট্যাংকিতে পানি তোলার সময় সাপ্লাই বন্ধ করে দিলে বা রিজার্ভ ট্যাংক খালি হয়ে গেলে কিংবা ওপরের পানির ট্যাংক ভর্তি হলে পানির মোটর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। একইভাবে এটি কাজ করবে গভীর নলকুপের ক্ষেত্রেও। এতে ট্যাংক উপচে পানির ওভারফ্লো বন্ধ হবে।

তারা জানান, সার্কিটটি ব্যবহার করে মাত্র ২২০ ভোল্টে চলবে পানির মোটর ফলে হাই ভোল্টেজে মোটরের কয়েল নষ্ট হবেনা। জরুরি প্রয়োজনে মোটর অন বা অফ করা যাবে। এতে রোধ হবে পানি ও বিদ্যুতের অপচয়।

ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র শেখ মাহতাব আলী মেথু জানান, ফরিদপুর পৌরসভায় বসবাসকারীদের জন্যে প্রয়োজনীয় পানি পৌরসভা থেকে সরবরাহ করা হলেও পানির অপব্যবহার ও অপচয়ের কারণে কোথাও কোথাও সংকট সৃষ্টি হয়।

তিনি বলেন, দেখা যায় অনেকে পানি মোটর চালু করে অন্যকাজে ব্যস্ত হয়ে যান, এদিকে পানি ট্যাংকি ভরে পড়তে থাকে। এতে একদিকে যেমন পানির অপচয় হয় অপরদিকে তেমনি বিদ্যুতেরও অপচয় হয়। তিনি জানান, পৌরসভার সকল পাম্পের সঙ্গে সার্কিটটির সংযোগ দেয়া হলে একদিকে যেমন পানি ও বিদ্যুতের অপচয় রোধ হবে, তেমনি বঞ্চিতরা ন্যায্যতা পাওয়ার পাশাপাশি ব্যয় হ্রাস পাবে।

স্থানীয় সমাজসেবীরা মনে করেন, এ যন্ত্রটি দেশজুড়ে ব্যবহার করা গেলে বিপুল পরিমান পানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।

ওই তিন উদ্ভাবক জানান, বিভিন্ন সময়ে পানির সংকট দেখে এ থেকে মানুষকে কিছুটা হলেও মুক্তিদানের লক্ষে গবেষণা শুরু। তারা জানান, সার্কিটি স্থাপনে খরচ পরবে মাত্র ১১শ টাকা।

যুবকদের মতে, এ প্রকল্পকে অগ্রসর করিয়ে দেশময় ছড়িয়ে দিতে মোটা অংকের বিনিযোগ প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি বা সরকারের সহযোগিতার প্রত্যাশী তারা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *