মানুষ হত্যা করা বা করানো –  অন্যতম সামাজিক ক্যানসার

বাংলাদেশের সমাজে অনেক ধরনের ক্যানসার আছে। মানুষ হত্যা করা বা করানো – তার ভেতর অন্যতম। বিশ্বের সব দেশেই অপরাধ আছে কিন্তু বিশ্বের বেশীরভাগ দেশেই এই অপরাধকে নিয়ন্ত্রন করা হয়। অপরাধ দমন ও হ্রাসের জন্য নানা রকম আইন জারী করা হয়, জরিমানা, জেল, ফাঁসী, ইলেক্ট্রিক চেয়ার ইত্যাদি শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। সমাজের সবখানেই অপরাধ রোধের জন্য নানা রকমের সিস্টেম তৈরি করা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশে অপরাধকে প্রজনণ করা হয়। অপরাধকে গর্ভে ধারণ করা হয়। অপরাধ প্রসব করা হয়। অপরাধকে লালন পালন করা হয়।  বাংলাদেশের জনগন নামকরা খুনীদের সরকার হিসাবে নির্বাচিত করে। সরকার আবার নামকরা খুনীদের জেল থেকে বের করে এনে সমাজে পুনঃর্বাসিত করে। খুনিদের গলায় ফুলের মালা দিয়ে সমাজে তাদের বরণ করে নেওয়া হয়। পত্রিকাতে ছবি উঠে। খুনী ক্ষমা কর্মসূচী । সেইসব খুনীরা আবার নানা সময়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের হত্যা করে। যে যত বড় খুনী সে তত বড় নেতা। বাংলাদেশে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের পিতা আবার বাঙ্গালী জাতীরও পিতা। এভাবেই বাংলাদেশের জনগণ অপরাধ ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা পছন্দ করে। প্রতিষ্টিত করে। উৎযাপন করে।

কেউ সরকারের বিরোধিতা করলেই কিছু নাগরিক হত্যার মাধ্যমে জনগনকে হুঁশিয়ার করা হয়। বিরোধিতার পরিনতি কি হতে পারে। জনগন ভয় পেয়ে যায়। কিছুদিন চুপচাপ থাকে।

আবার কিছুদিন পরে বিরোধীদলের ক্ষমতায় যাবার শখ হয় । বহুদিন ক্ষমতা না পাবার ফলে বিরোধীদলের চোর ডাকাতরা সব অধৈর্য হয়ে যায় তখন বিরোধীদল নিজেদের কিছু নেতাকর্মীদের বিসমিল্লা বলে সরকারের ক্রশফায়ারে বলি দেবার জন্য ছেড়ে দেয় । ভোটাধিকার আদায়ের জন্য জনগনের লড়াই। এই লড়াই করে কিছু নেতাকর্মীদের বলিদান করলেই সরকার পচবে।  অথবা মিছিলে গুলি করে হত্যা করা হয় । অথবা বাসাতে যেয়ে পরিবারের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। অথবা বাসা থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেয়ে হত্যা করে নদীতে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। বিরোধীদলের আন্দোলন মানেই সরকারী দলকে দিয়ে কিছু কর্মীর বলিদান। মৃতের আত্মীয়স্বজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে গ্রুপ ছবি। গনতন্ত্রের জন্য শহীদ হয়েছে। জাতী তোমাদের ভুলবেনা। অথচ বাঙ্গালী জাতীর কোন স্মৃতিশক্তি নাই। জাতি আলসাইমার রোগ বা স্মৃতিভ্রষ্ট রোগে আক্রান্ত ।
বাঙ্গালী জাতীর স্মৃতিভ্রষ্ট হবার কারনেই দাগী আসামীদের বা দেশদ্রোহীদের জনপ্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত করে।

বাংলাদেশে ইতিহাস লেখা হয়না। বাংলাদেশের ইতিহাসবিদেরা আলসাইমার রোগী। ১৯৭১ সালের নয় মাস যারা পশ্চিম বাংলার সোনাগাছি (যৌনপল্লী)তে অবস্থান করছিল সেইসব লেখক ও ইতিহাসবিদের লেখা বাংলাদেশের ইতিহাসে সিফিলিস ও গণোরিয়া বিদ্যমান। ফলে প্রজন্মের পোলাপাইনে এই ইতিহাস পড়ার পরে তাদের মগজে সিফিলিস ও গণোরিয়ার প্রভাব অনুভব করে। চুলকায় । ব্লাকআউট হয়। স্মৃতিভ্রষ্ট হয়। দুইদিন আগে আওয়ামীলীগের সাথে জামাতে ইসলাম কি করেছিল তা ভুলে যায়। দুই মাস আগে বিএনপীর সাথে আওয়ামীলীগ কি কথা বলেছিল তা ভুলে যায়। সবাই সব কিছু ভুলে যায়। ব্লাকআউট। ছয়মাস আগে আওয়ামীলীগ সরকার কতজন মানুষ হত্যা করেছে তা ভুলে যায়। ছয় মাস পর পর আওয়ামীলীগ সরকারের লাশের পিপাসা মেটাতে কিছু বিরোধীদলের কর্মীদের লাশ বানাবার জন্য উপস্থাপিত করা হয়।

কোথায় যেন এক গল্প পড়েছিলাম। একটা কুয়া থেকে এক বিশাল জন্তু এসে প্রতিবছর মানূষ খেয়ে ফেলত তাই কুয়া বন্ধ না করে বা সেই জন্তুকে ধ্বংস না করে প্রতি বছর ছাগল বা গরু সেই জন্তুর ক্ষুধা মেটানোর জন্য কুয়াতে ফেলে দেওয়া হতো।

এখন আওয়ামীলীগ সরকারের লাশের ক্ষুধা মেটানোর জন্য বিরোধীদল প্রতি ছয়মাস পর পর কর্মসূচী দেয় । তাতে কিছু মানুষকে হত্যা করা হয়। আপনি কিভাবে মানুষ হত্যা করবেন সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। ক্রশফায়ারে দিতে পারেন। বাসায় এসে গুলি করে মেরে ফেলতে পারেন। রাস্তায় পিটিয়ে মেরে ফেলতে পারেন। অথবা বাসা থেকে উঠিয়ে মেরে ফেলে নদীতে ফেলে দিতে পারেন।

মানূষ হত্যা করা বাংলাদেশে অপরাধ না। বাংলাদেশের অপরাধ সম্পর্কে লেখালেখি করা মস্ত বড় অপরাধ।

অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলতে বাংলাদেশে যা বোঝানো হয় তা হলো বড় বড় উঁচু উঁচু দালান। উপরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন নীচে গারবেজের পাহাড়ের চুড়া বাংলাদেশের শিশুরা ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ, ডিনার করে। সেটা হতেই পারে।পথকলিদের হাতে হাতে মোবাইল ফোন আছে। উঁচু উঁচু দালান থেকে গার্বেজ ফেললেই ডিজিটাল বাংলাদেশের পথকলিরা মোবাইলে টেক্সট করে অন্যান্য শিশুদের জানিয়ে দেয় – নতুন চালান ফেলা হয়েছে সবাই ব্রেকফাস্ট করতে এসো বা লাঞ্চ করতে এসো বা ডিনার করতে এসো। স্টার জলসার সিরিয়ালে যেমন করে বৌদী ছেলেমেয়েদের ডাকে। ঠিক সেইভাবে পথকলিরা একজন আর একজনকে ডাকে।

এই মোবাইল সেট চীন,ভারত,জাপান, জার্মান, তাইওয়ান যে কোন দেশ তৈরি করতে পারে। এই মোবাইল ফোন দিয়া ফোন করে বাংলাদেশের ভিক্ষুক বলছে – স্যার – ভিক্ষা রেডি রাইখ্যেন আমি অতটার সময় আসবো আমার টাইম নাই। বাংলাদেশে আধুনিক প্রযুক্তির এহেন ব্যবহারের ফলে যেসব দেশ মোবাইল সেট বানায় সেইসব দেশ লালে লাল হয়ে যায়। সেই আগে যেমন সিগারেট বিক্রির হার অনুন্নত দেশেই বেশী ছিল অথবা ড্রাগস বিক্রি অনুন্নত দেশেই বেশী হয় অথবা দেহ বিক্রি অনুন্নত দেশেই বেশী হয় । দেশে কিছু উৎপাদিত হয়না। অথবা দেশে যাকিছু পন্য উৎপাদিত হয় তার দাম বিদেশের পন্যের চাইতে বেশী তাই দেশী পন্য কেনার ক্ষমতা অনেকেরই নেই। বিদেশী পন্য যারা বিক্রি করে তাদের এত লোক লাগেনা। তাই দেশে বেকারের সংখ্যা বেশি। বেকার হলেই হতাশা বৃদ্ধি পাবে। সমাজে অপরাধ বৃদ্ধি পাবে । চুরি বৃদ্ধি পাবে। বাঁচার জন্য মানুষ দেহ বিক্রি করবে। খুন করে টাকা উপার্জন করবে। ড্রাগস বিক্রি করে টাকা উপার্জন করবে। পুলিশে যে বেতন পায় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে না। গুলি করে মানুষ মারলে টাকা পাওয়া যায় সুতারাং ওরা টাকার বিনিময়ে মানুষ হত্যা করে।  এর পরে মানুষ হত্যা করে কেটে গরুর মাংসের মত মানুষের মাংস বিক্রি করা হবে। কোথায় যেন একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। কোন আইরিশ লেখকের লেখা আর্টিকেল — a modest proposal লিখেছেন Jonathan Swift

এখন যেমন ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যেমন সরকার মানুষ হত্যা করছে।
এখন যেমন ক্ষমতা পাবার জন্য বিরোধিদল নিজেদের কর্মীদের বলি দিচ্ছে।
ক্ষমতায় টিকলে চুরি করতে পারবে। মানূষের মাথায় লাঠি ভেঙ্গে টাকা বানাতে পারবে । সেজন্য আজীবন ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখতে চায় । অন্যদিকে বিরোধীদলের কিছু মানুষকেও এই সুযোগ দেওয়া উচিৎ বলে বিরোধীদলের নেত্রীবৃন্দ মনে করে।  ফলে প্লাকার্ড লিখে ফ্যালে — গনতন্ত্র না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের যতজন তৃণমূল কর্মী আছে সবাইকে বলি দিবো।

বাংলাদেশে জনবহুল দেশ। বাংলাদেশ সম্পদশালী দেশ। ধণে ধান্যে পুস্পেভরা আমাদের এই বসুনধরা। এখন এই বসুন্ধরাতে ধান নাই। বসুন্ধরা থেকে পানি পাচার হয়ে গেছে প্রতিবেশীর দেশে তাই এখানে এখন ধান নাই। ধানের চাষীরা মৃত। তাদের উত্তরসূরীরা ইয়াবা বিক্রি করে রেললাইনের ধারে। এই বসুন্ধরার আকাশ, মাটি, পানি, বাতাস, আলো, মানুষ সব কিছুই অন্যদের দখলে। এই জনবহুল বসুন্ধরাতে যুগ যুগ ধরে বিদেশীরা এসে শাসন করেছে। এখনও করছে তবে ভিন্নভাবে। ক্যান্সারের রুপে এই বসুন্ধরার মানুষের অস্থিতে মজ্বায় ছেয়ে গেছে বিদেশীদের উপরে নির্ভরশীলতা। বাংলাদেশে গনতন্ত্র সাপ্লাই করে দিল্লী বা মার্কিনযুক্তরাস্ট্র। মোবাইল ফোনের মত। আপনি কোন দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন ?? অমুক দেশের মোবাইল ফোনের জন্য অমুক ডিলারের সাথে যোগাযোগ করুন।

আপনি কোন দেশের ডিজাইনে “গনতন্ত্র” চান ?
মেড ইন ইন্ডিয়া হইলে – বালে যোগ দিন।
মেড ইন মার্কিন যুক্তরাস্ট্র হইলে – বিএনপিতে যোগ দিন।
ইসলামে গনতন্ত্র নাই – সব ব্যাপারেই আল্লাহ্‌ উপ্রে নির্ভর করতে হয় – আমি জানিনা জামাত শিবিরে যোগ দিলে ইসলাম কায়েম হবে কিনা — আমার উপ্রে ভরসা রাইখ্যেন না।

মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের গনতন্ত্র, মানবাধিকার ও স্বাধীনতা সাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে। ইরাক, লিবিয়া, আফগানিস্তান, লেবানন ইত্যাদি সব দেশে। সিরিয়াতে এখন গনতন্ত্র ও মানবাধিকার সাপ্লাই করা হচ্ছে কারণ সিরিয়াতে অনেক খনিজ সম্পদ পাওয়া গেছে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের “গনতন্ত্র” নিবেন নাকি ভারতের বানানো “গনতন্ত্র” নিবেন – এই সিদ্ধান্ত জনগনের।

দুইটাই ক্যান্সার । সামাজিক ক্যান্সার ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *