ঢাকা: ফরমালিন বিক্রি ও ব্যবহাররের জন্য লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে এবং তা লঙ্ঘন করলে ২ বছর কারাদণ্ড ও ৪ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করে সংসদে ‘ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৫’ নামে একটি বিল উত্থাপন করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিলটি উত্থাপন করেন। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট দেয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।
বিলের দফা-৪ এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ব্যতীত ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার করতে পারবেন না।
দফা-৫ এ বলা হয়েছে, ফরমালিন আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সরকার এবং ফরমালিনের পরিবহন, মজুদ, বিক্রয় ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ হবে। এই আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে লাইসেন্স প্রদান ও তত্ত্বাবধান সংক্রান্ত বিষয়ে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের যাবতীয় কার্যক্রম বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হবে।
বিলের দফা-৬ এ বলা হয়েছে, প্রত্যেক লাইসেন্সধারী ফরমালিন আমদানি, উৎপাদন, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়, বিক্রয়, ব্যবহার ও দখলে রাখা সংক্রান্ত হিসাব, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তদসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রতি মাসে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করতে হবে।
দফা-৯ এ জেলা ও উপজেলায় ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ কমিটি নামে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিটি গঠন, দায়িত্ব ও কর্তব্য সভা এবং আনুষঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে।
দফা ২০, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭ ও ২৮-এ পৃথক পৃথক অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
লাইসেন্স ছাড়া আমদানি, উৎপাদন বা মজুদের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা, লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গের জন্য তিন বছরের কারাদণ্ড বা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড, লাইসেন্স ব্যতীত ফরমালিন বিক্রয় ও ব্যবহারের জন্য ২ বছরের কারাদণ্ড বা ৪ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
বিলের দফা-৩২ এ ফরমালিনের প্রকার, পরিমাণ, মাত্রা বা ওই প্রকার কোনো উপাদানের রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগার স্থাপন ও তার জন্য রাসায়নিক পরীক্ষক নিয়োগের বিধানেরও প্রস্তাব করা হয়েছে।
বিলের দফা-৩৫ এ দফা-২১ ও ২২ এর অধীন অপরাধ ব্যতীত বিলে উল্লেখিত অন্যান্য অপরাধগুলো বিচারের ক্ষমতা মোবাইল কোর্ট আইনের অধীনে মোবাইল কোর্টকে প্রদানের বিধানের প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকার, সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বিধি প্রণয়ন করতে পারবে।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইদানীং কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য সামগ্রী যেমন ফল-মূল, শাক-সবজি, মাছ-মাংস পচনরোধের উদ্দেশ্যে এর অপব্যবহার করছে। ফলে ফরমালিন মিশ্রিত দ্রব্যাদি মানুষ গ্রহণ করে ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ফরমালিন একটি প্রাণঘাতী কেমিক্যাল। তাই এর অপব্যবহার রোধ করার লক্ষ্যে ফরমালিন নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রণীত বিলটি আইনে পরিণত হলে ফরমালিন ব্যবহার ও ব্যবসা কার্যক্রম আইনী কাঠামোর আওতায় আসবে। বর্তমান ও ভবিষ্যতে যেসব কোম্পানি ফরমালিন ও ফরমালিন জাতীয় দ্রব্য বিপণন করবে তাদের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এ কার্যক্রম সরকারি পর্যবেক্ষণের আওতায় আসবে, ফলে জনসাধারণ উপকৃত হবে।