এটা আর স্বপ্ন নয় বাস্তবত। আর এই সমৃদ্ধির অর্থনীতি গড়তে সর্বাধিকভাবে সহায়তা করছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাখো প্রবাসীর পাঠানো রেমিটেন্স । সর্বশেষ সরকারি হিসাব অনুযায়ী সারা বিশ্বের ১৫৯ দেশে বর্তমান বাংলাদেশী প্রবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৮৭ লাখের উপর। তবে বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা এক কোটি বিশ লাখ। আর এই কোটির উপর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ২২.৩৯ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির চাকা সচল রাখা দুটি খাত গার্মেন্টস এবং প্রবাসী রেমিটেন্স। এই দুটি শক্তিশালী খাতকে পুঁজি করে সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এখন “বাংলাদেশ “।
উপেক্ষিত প্রবাসী :
বিগত কয়েক দশকে গার্মেন্টস সেক্টরের কল্যাণে বাংলাদেশ ” তলাবিহীন ঝুড়ির ” অর্থনীতি থেকে স্বাচ্ছন্দ্য অর্থনীতির যুগে প্রবেশ করে। এরই জন্য গার্মেন্টস সেক্টরের কল্যাণে সরকার বিভিন্ন যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করে যা বর্তমান বাংলাদেশের গার্মেন্টস ক্ষেত্রকে আরও সমৃদ্ধ করতে সহায়তা করছে। যেভাবে গার্মেন্টস খাত দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছে ঠিক একই ভাবে গত পাঁচ -দশ বছর ধরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দিন দিন অর্থনীতির মূল চাকাতে পরিনত হচ্ছে। অথচ গার্মেন্টস খাতকে সরকার যেভাবে মনিটর করছে সেভাবে কখনোই নজর দিচ্ছে না প্রবাসীদের দিকে। দিন দিন বিভিন্ন দেশে আমাদের বাংলাদেশীদের ভিসা বন্ধ হচ্ছে। শুধু তাই নয় প্রতিটি দেশে প্রবাসীরা কোন প্রকার ভালো সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। আর কোন কোন জায়গায় সাহায্য সহযোগিতা পেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।যেখানে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার জন্য সরকার গার্মেন্টস খাতকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেইসাথে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ আর্থিক প্রনোদোনা দিচ্ছে, সেই তুলনায় প্রবাসীদের নিয়ে আজ পর্যন্ত কোন সরকারই সেভাবে কিছুই করেনি। প্রবাসীরা কোন অর্থ চায় না। চাই সরকারের সঠিক সহযোগিতা, স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক তৎপরতা।
এই পর্যন্ত নেওয়া সরকারি পদক্ষেপ :
প্রবাসীদের কল্যাণে সরকার প্রবাসীদের জন্য একটি মন্ত্রানালয় গঠন করে । প্রবাসীদের জন্য আলাদা মন্ত্রানালয় গঠন করা হলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু এখনো করতে পারেনি। দিন দিন মধ্যপ্রচ্যে বাংলাদেশীদের যে ইমেজ সংকট সৃষ্টি হচ্ছে তা থেকে এখনো আমরা বেরিয়ে আসতে পারিনি একমাত্র শক্তিশালী কূটনৈতিক দূর্বলতার কারণে। যেখানে অন্যান্য দেশ হাজার প্রতিবন্ধকতা স্বত্তেও তাদের অবস্থান সুসংহত করছে সেখানে দেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারনে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি ক্রমান্বয়ে। সরকার দেশের বিভিন্ন এজেন্সি গুলোর দূর্নীতি ও অপতৎপরতা ঠেকাতে মালেশিয়ায় জি টু জি সার্ভিস চালু করে ঘটা করে। কিন্তু এখানেও বিফল। এই পর্যন্ত মাত্র তিন হাজারের সামান্য অধিক বাংলাদেশী যেতে পেরেছে ঐ সুবিধায়। আর সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিদিন দালালদের মাধ্যমে শত শত অসহায় বাংলাদেশী নদী পথে মালেশিয়ায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকার সর্বশেষ যা করল একটি “প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক “প্রতিষ্ঠা করল। যার মাধ্যমে গরিব অসহায়দের জামানতে এবং বিনা জামানতে চাকুরী নিয়ে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের ঋণ দিচ্ছে। যার সুফল এই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন হাজার প্রবাসী পেয়েছে। অনেক দেরিতে হলেও এমন উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। যদিও আইনে অনেক কিছুই করার উল্লেখ আছে। তবে কতটুকু তা প্রবাসীদের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে তা এখনো রহস্যময়। কিছুদিন আগে প্রবাসীদেরকে দেওয়া হলো রেমিটেন্স সম্মাননা। অর্থাৎ প্রতিবছর যারা সর্বোচ্চ পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠায় তাদের এই সম্মান দেওয়া হয়। এই বছর চব্বিশ জন প্রবাসীকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়। যার মধ্যে বিশ জন সর্বোচ্চ রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য আর চারজন সরকারি বন্ডে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করার জন্য। এই পুরুস্কার এক কোটি প্রবাসীর তুলনায় তা একেবারেই সমুদ্রে জলে বিন্দুর মতো। তারপরও সরকার এমন উদ্যোগ গ্রহণ করায় সরকারকে আন্তরিক অভিনন্দন। বর্তমান সরকারের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড হচ্ছে সাধারণ অদক্ষ শ্রমিকদের দক্ষ করার নিমিত্তে বিভিন্ন জেলায় কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তুলেছে। যার সুফল ইতিমধ্যে হাজারো প্রবাসীরা পেয়েছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে খুব দ্রুতই বাংলাদেশ বিশ্বে দক্ষ জনশক্তির দেশগুলোর একটিতে পরিনত হবে। তাছাড়া সরকার ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে প্রেরিত অর্থ দ্রুত গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে আটচল্লিশ ঘন্টার সময় বেধেঁ দিয়েছে।এই সেবা সকল বেসরকারি ব্যাংকে এখন পাওয়া যাচ্ছে।
প্রবাসীদেরকে হেনস্তা এবং বৈষম্য :
বাংলাদেশের মোট প্রবাসীর ৬৫ ভাগ কাজ করে মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে। আর বাকি ৩৫ ভাগ রয়েছে ইউরোপ আমেরিকা সহ অন্যান্য দেশসমূহে। আমাদের সরকার এখানেও একটি প্রকট বৈষম্য সৃষ্টি করেছে প্রবাসীদের মধ্যে। যারা মধ্যপ্রচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করে তাদেরকে খুবই নিচু দৃষ্টিতে দেখা হয়। যা প্রবাসীরা দেশের বিমানবন্দরে গিয়ে অনুধাবন করতে পারে। আর যারা ইউরোপ আমেরিকার মতো উন্নত দেশে থাকে তাদের সম্পূর্ণ আলাদা দৃষ্টিতে সমাদর করা হয়। যারা মধ্যপ্রচ্যে কাজ করে তাদের বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা সহ উপর্যুপরি অপমান করা হয় বিমানবন্দরে।আর যারা ইউরোপ আমেরিকার মতো উন্নত দেশ থেকে আসে তাদের সম্মান জানানো হয় ভিআইপিদের মর্যাদায়। কেন এই বৈষম্য আমাদের প্রবাসীদের মাঝে। যদি ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে যারা মধ্যপ্রচ্যের মতো দেশ গুলোতে আছে তারা খুবই সাধারণ নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। তারা কঠোর প্ররিশ্রম করে তাদের পরিবারের জন্য এবং মাস শেষে লাখ লাখ টাকা পাঠাচ্ছে দেশে পরিবার পরিজনের কাছে। তাদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণই সবচেয়ে বেশী। পক্ষান্তরে যারা ইউরোপ আমেরিকার মতো উন্নত দেশে যাচ্ছে তারা খুবই উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে এসেছে। তারা সেখানে যেতেই প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। তাদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে কিভাবে ওখানে সেটেল হতে পারে । তাদের পরিবারে টাকা পাঠানোর দায়বদ্ধতা থাকে না। যদিও পাঠায় তা শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় খরচের। যেখানে মধ্যপ্রচ্যের একজন প্রবাসীর স্বপ্ন থাকে কিভাবে দেশে একটি বাড়ি করব গাড়ি কিনব। সেখানে ইউরোপ আমেরিকার একজন প্রবাসীর স্বপ্ন থাকে ওখানেই কিভাবে একটি বাড়ি গাড়ির মালিক হওয়া যায়। সেই লক্ষে তারা সেখানে ব্যাংক থেকে লোন দিয়ে বিয়ে শাদী বাড়ি গাড়ির মালিক হয়। দেশে পরিবার পরিজন থাকলে তাদেরও সেখানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে। তারমানে তারা ধীরে ধীরে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ওখানেই ঘাটি গড়ে। প্রায় প্রতিটি পশ্চিমা দেশে ধীরে ধীরে বাঙ্গালীদের কমিউনিটি গড়ে উঠছে। তাই তারা সেখানেই সবকিছু করছে। তারা তেমন কোন অবদান রাখছে না ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য। অথচ সেই সব প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার যেন দয়ার সাগর। তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেওয়া। ভিআইপি পাস দিয়ে তারা যাতায়াত। যা খুশি ইচ্ছা তাই নিয়ে আসতে। আর যারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে দেশে আসে তাদের করা হয় আসামির মতো জিজ্ঞাসাবাদ। তাদের মালপত্র এমন ভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে ঘাটাঘাটি করা হয় যেন তারা ভিখারীর চাইতেও অধম। সেইসাথে এমন সব কথা বলে যা দিয়ে সুন্দর কমেডি সিরিয়াল হয়ে যাবে। এতো সিগারেট কেন, পারফিউম কেন এতগুলো, মোবাইল কেন ছয়টা? এই ব্যাগে কী? আরে যে বিয়ে করতে যাচ্ছে সে কি তোকে দেখাতে পারবে এই ব্যাগে কী? তুই দেখ না তোর টিভি স্ক্রীনে এখানে কী আছে। এমন ব্যবহার যেন বিদেশ থেকে চুরি করে মালপত্র আনছে। অথচ যারা সত্যিকারের অপরাধী তাদের কিছুই করে না। কেননা তাদের সাথে যোগসাজশে অপরাধ কর্ম করে যাচ্ছে কিছু অসাধু বিমান কর্মকর্তা। যা ইদানিং সবার কাছে খুবই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুই চার বছর পর দেশে আসলে আত্মীয় স্বজনদের জন্য কিছুই নেওয়া যাবে না এমন কী কোন আইন আছে? ঠিক আইন না থাকলেও শুল্ক কর্তারা ওখানে দাড়িয়েই এইসব স্বল্প শিক্ষিত ভাইদের বিভিন্ন আইন দেখায়। তবে সব আইন ই খুব ফাইন হয়ে যায় যখন কিছু দিয়ে তাদের খুশি করা হয়। এরা মানুষ বুঝে বিভিন্ন প্রকার টর্চার করে। এইভাবে আমাদের প্রবাসীরা বিভিন্ন ভাবে হেনস্তা সহ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।
সরকারের কাছে প্রাণের দাবি :
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে সকল সরকারের কাছে শত আকুতি মিনতি করার পরও প্রবাসীরা এখন পর্যন্ত চাক্ষুস কোন সাহায্য সহযোগিতা পাইনি । তাই মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের কাছে কিছু দাবি তুলে ধরছি। যা সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সাথে প্রবাসীদেরও প্রভূত কল্যাণ হবে সেই সাথে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।
এক : অবিলম্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিক রপ্তানি জনিত সমস্যার আশু সমাধান করা। এইসব দেশে প্রবাসীরা যেসব সমস্যার মধ্যে আছে তার দ্রুত সমাধান করা। নতুন ভিসা জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসত না পারলেও যেন ভিসা ট্রান্সফারের সুযোগ অন্তত সৃষ্টি করা। সেইসাথে মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত সরকারের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গঠনের মাধ্যমে প্রবাসীদের ব্যপারে তাদের অন্তরে সহানুভূতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা।
দুই ) মধ্যপ্রাচ্যসহ যেসকল দেশে বেশী পরিমাণ প্রবাসী আছে সেইসব দেশে বাংলাদেশ এম্বাসির কার্যক্রম দ্রুত এবং স্বচ্ছতার সহিত সম্পন্ন করা। সকল প্রকার অনিয়ম দূর্নীতি থেকে বাংলাদেশ এম্বাসিকে মুক্ত করা। সকল প্রবাসীদের সাথে প্রাপ্য সম্মান অনুযায়ী ব্যবহার করা।বর্তমানে প্রবাসে সবচেয়ে বেশী আলোচিত বিষয় “মেশিন রিডেবল পার্সপোট “। এই ডিজিটাল পার্সপোট করার জন্য লাখ লাখ প্রবাসীকে বিভিন্ন প্রকার হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। তারপরও সঠিক সময়ে পার্সপোট পাচ্ছে না লাখ লাখ বাংলাদেশী। বাংলাদেশ দূতাবাসে এই পার্সপোট গ্রহিতাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তাই সরকারের কাছে আবেদন স্বচ্ছতার সহিত এবং দ্রুততার সাথে সকল বাংলাদেশীকে পাসর্পোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
তিন ) শুধুমাত্র প্রশিক্ষণ নয়, যেসকল বাংলাদেশী প্রবাসে চাকরির জন্য যাবে তাদের প্রত্যেককে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট দেশের আইন কানুন সম্পর্কে যেন আলাদা একটি কোর্স করানো হয়। যাতে করে তারা সুশৃঙ্খল ভাবে সেদেশে কাজ করতে পারে। বাংলাদেশের প্রবাসীরা বিভিন্ন দেশে নানান রকম অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত পড়ে একমাত্র সেইসব দেশের আইন কানুন সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকার কারণে।
চার ) যেসব প্রবাসী ভাইয়েরা বিভিন্ন দেশে আছেন এবং যারা নতুন কোন দেশে প্রবাসী হিসেবে যাবেন তাদের অথবা পরিজনের অবশ্যই দেশে কোন ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থাকা বাধ্যতামূলক করা । এবং সকল প্রবাসীরা সেইসব ব্যাংক এ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নিজেদের নূন্যতম রেমিটেন্স পাঠাতে বাধ্য হবেন । এর মাধ্যমে দেশে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা জমা হবে এবং সেই সাথে হুন্ডির প্রবনতা কমে যাবে।
পাঁচ) এই ব্যাংক এ্যাকাউন্টের সাহায্যে (লেনদেন অনুযায়ী) সরকার তার প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি প্রবাসীকে বিভিন্ন আমানতববিহীন ঋণ দেওয়া হোক । বিশেষ করে বাড়ির লোন, গাড়ির লোন, শিক্ষা লোন, ব্যবসায়িক লোন দূর্যোগকালীন লোন ইত্যাদি। সেইসাথে যেসব প্রবাসী ভাই দীর্ঘ প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে চলে আসেন তাদেরও বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবসায়িক লোন দেওয়া হোক। যাতে করে দেশে এসে প্রবাসী ভাইরা বেকার না হয়ে পড়ে।
ছয় ) প্রবাসীদের সন্তানদের ভালো পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন কোটার সাথে প্রবাসী কোটা চালু করা হোক । কেননা একজন প্রবাসীর সন্তান একটি ভালো ডিগ্রি নিয়ে পাস করলে তার প্রবাসে উচ্চ বেতনে চাকরি পাওয়ার সুযোগ অন্য সাধারণ ছেলের চাইতে বেশি।
সাত ) প্রবাসীদের মতো আর কেউ কখনোই আইনকে বেশী শ্রদ্ধা করে না। তাই বিমানবন্দরে যেন অবশ্যই প্রবাসীদের তাদের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে যেন শুল্ক কর্মকর্তারা ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে সহযোগিতা করেন। সেইসাথে সকল প্রকার প্রবাসীদের মধ্যে সমতা আনয়ন করা। বিমানবন্দরে কেউ ফকিরের মতো লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে কেউ লাট সাহেবের মতো বেরিয়ে আসবে তা হবেনা।
আট ) আমাদের দেশে দলে দলে মারামারি বিভেদ থাকলেও একটি জায়গায় তারা এক। সব এমপি মন্ত্রিরাই শুল্ক মুক্ত গাড়ি ব্যবহার করতে পারে অথচ কোন প্রবাসী নিজের গাড়ি দেশে নিতে গেলে প্রচুর ট্যাক্স দিতে হয়। তাই যাদের আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে তাদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ দেওয়া হোক (নির্দিষ্ট পরিমাণ)।
নয় ) আমাদের দেশে সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিভিন্ন স্তরে চিহ্নিত করে সম্মানিত করা হয়। তাই সকল প্রবাসীদেরও সম্মানজনক নাগরিকের মর্যাদা দেওয়া হোক। শুধুমাত্র লটারীর মাধ্যমেই নয়, যারাই এক লাখ ডলারের উপর রেমিটেন্স দেশে পাঠাবে হবে তাদের প্রত্যেককেই যেন বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত করা হোক। সেইসাথে অন্যান্য সকল সুযোগ সুবিধাও দেওয়া হোক।
দশ ) বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের কোন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি সরকারের পক্ষ থেকে। তাই অবিলম্বে এই বিষয়ে প্রবাসীদের প্রবাসে ভোটাধিকার প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হোক। সেইসাথে বাংলাদেশ সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের ন্যায় প্রবাসীদের জন্যও আলাদা দশটি সংরক্ষিত আসন দেওয়া হোক। যাতে প্রবাসীরা তাদের দাবি দাওয়া এবং অধিকারের কথা সবার সামনে তুলে ধরতে পারে।
এগার ) প্রবাসী ব্যবসায়ীদের সবসময়ের দাবি আলাদা একটি ইপিজেড তাদের জন্য গঠন করা হোক। যদি সেটা সম্ভব না হয় তবে অবশ্যই প্রতিটি ইপিজেডে আলাদা ভাবে প্রবাসীদের জন্য কোটা দেওয়া হোক।যাতে প্রবাসীরা নিশ্চিন্তে বিনিয়োগ করতে পারে। কেননা অনেক প্রবাসীই তাদের অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করছে। এতে দেশ তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই সরকার যদি প্রবাসীদের জন্য ইপিজেডে কোটা সুবিধা দেয় তাহলে এর সুফল সবাই ভোগ করবে।
বার ) অনেক প্রবাসী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিটেন্স পাঠাতে ইচ্ছুক হলেও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার অনেক কম হওয়ার কারণে তারা অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠায়। তাই যদি ডলারের ক্রয় বিক্রয় ব্যবধান কম হলে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জ নিলে সকল প্রবাসী বৈধ উপায়ে দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে ইচ্ছুক হবে। সেইসাথে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে দ্রুততার সহিত অর্থ প্রেরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে প্রবাসীরা ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠালে তা দ্রুততার সাথে গ্রাহকের কাছে পৌছে।
তের ) প্রবাসীরা যেহেতু সবসময়ই দেশের বাইরে থাকে সেহেতু তাদের পরিবার পরিজনদের নিরাপত্তার ব্যপারে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়াসহ বিভিন্ন আইনী কর্মকাণ্ডে সর্বোচ্চ সুবিধা দেওয়া। কেননা সাধারণ মামলার জন্য দীর্ঘদিন দেশে থাকতে হলে বিদেশে ব্যবসা বানিজ্য বা চাকুরীর প্রভূত ক্ষতি হয়। তাই প্রবাসীদের মামলাজনিত সমস্যা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হোক।
চৌদ্দ ) দেখা যায় অন্যান্য দেশের প্রবাসীরা বড় বড় কার্টুনে করে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিদেশ থেকে নিজের দেশে প্রেরণ করে নাম মাত্র মূল্যে। অপরদিকে আমরা কোন জিনিসপত্র পাঠাতে চাইলে বিভিন্ন প্রকার ট্যাক্স দিতে হয়। তাই সরকারি উদ্যোগে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রাদি দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক।
সর্বশেষ কথা :
প্রবাসীরা যতবেশী স্বাচ্ছন্দ্যে থাকবে ততবেশী রেমিটেন্স দেশে যাবে। আর যতবেশী রেমিটেন্স সরকারের কাছে জমা হবে ততবেশী দ্রুত দেশের অর্থনীতির পরিবর্তন হবে। দেশের সুন্দর অর্থনীতির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে সরকারের এখনই উচিত প্রবাসীদের নিয়ে সঠিক নীতিমালা তৈরি করা। যে নীতিমালার ফলে প্রবাসীরা বেশি বেশি রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচলে সর্বাধিক ভূমিকা পালন করতে পারে। আর যদি এখনই সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় তবে দিনদিন বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসীরা ফেরত এসে দেশের সামাজিক পরিস্থিতি অবনতি ঘাটাতে পারে। যা কখনোই রাষ্ট্রের জন্য সুফল বয়ে আনবে না।
সাখাওয়াৎ আলম চৌধুরীর
সংযুক্ত আরব আমিরাত