সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশির দশকেও বাংলা পত্রিকা পড়ার মতো লোকজন ছিল। ছিলো বাংলা ভাষীদের লেখালেখির চর্চা। তখন গুটি কয়েকজন লেখক লিখতেনও বাংলদেশ থেকে প্রকাশিত কিছু সাপ্তাহিক পত্রিকায়। সে সময় পাকিস্তানি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘ মালেক নিউজ এজেন্সি’র মাধ্যমে আমিরাতে বিভাগীয় শহরগুলোতে পাওয়া যেতো ওসব বাংলা পত্রিকা। সংবাদ বা সাংবাদিকতার বিবেচনা না থাকলেও প্রবাসীদের সুখ-দুঃখ তুলে ধরা মানুষদের বেশ কদর ছিলো। একটা সময় পেরিয়ে বাংলদেশ থেকে দৈনিক পত্রিকাগুলো (প্রকাশের দুই দিন পর) আসা শুরু হলো। বাংলদেশি মালিকানাধীন আবু নাছেরের ‘ ইত্তেফাক নিউজ এজেন্সি ‘ প্রবাসীদের বাংলােদশ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা পড়ার সুযোগ আরও সহজ করে দেয়। একই সাথে আমিরাতেও বেশকিছু বাংলা পত্রিকার অনিয়মিত প্রকাশনা আরও কিছু লেখক ও সংবাদ প্রেরক তৈরি করে। এতে করে বেড়েছে বাংলা পত্রিকার প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহ। অনেকেই হয়েছেন নামকাওয়াস্তার সাংবাদিক! সৃষ্টি হয়েছে প্রবাসী সাংবাদিকদের সংগঠন ( প্রসাস)। এরপর হালের পরিবর্তন। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে প্রবাসীরা অনলাইনের মাধ্যমে পড়ছেন দৈনিক পত্রিকা। দিনের খবর দিনে পাওয়ায় প্রবাসে যেমন বেড়েছে পাঠক, তেমনি বেড়েছে ওসব খবর পৌঁছানোর কর্মী সংখ্যা। বলতে গেলে প্রবাসে সাংবাদিকতার এখন যৌবন কাল।
দেশে দীর্ঘ পাঁচ বছর জড়িত ছিলাম মফস্বল সাংবাদিকতায়। কর্মস্থল ছিলো চট্টগ্রামের মীরসরাই। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফের প্রবাসী সাংবাদিক হিসেবে পুরো উদ্যমে কাজ শুরু করি ২০১০ সালে। আমিরাতে এসে দায়িত্ব নিই স্থানীয় পত্রিকা ‘খবরিকা’র মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি হিসেবে। এরপর আলমগীর ভাইয়ের আহ্বানে কাজ শুরু করি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর এর আরব আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু বেশি দিন কাজ করা হয়নি তার সাথে। পরে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে ফের যুক্ত হই জাতীয় দৈনিক ‘ বাংলদেশ প্রতিদিন ‘ পত্রিকায়। উত্তপ্ত মরুর পরিবেশ পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বেশ সময় লেগে গেলেও প্রবাসী সাংবাদিকতা সম্পর্কে ধারণা পেতে খুব বেশি কালক্ষেপণ করতে হয়নি। তাই দিনের পর দিন কতোনা সংবাদের পিছু ছুটে করেছি সময়ের ব্যয়। একটা সময় পর আজ হিসাবের খাতা খুলে অংক করতে বসা। লাভ-ক্ষতির হিসাব করলে হয়তো লজ্জা পাবো তাই সে হিসাবটি বাদ দিয়েই আজ কীবোর্ডে হাত বসালাম।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসার পর ধীরে ধীরে পরিচয় হয় বাংলাদেশি মিডিয়ায় কর্মরত অনেক সাংবাদিকদের সাথে। অনেক লেখক-সাংবাদিকরা এখনও রয়েছেন অপরিচিতের তালিকায়। যাদের সাথে পরিচয় ঘটেছে তাদের একেক জনের কাজের ধরন ও মান একেক রকম। বর্তমানে বাংলাদেশি জাতীয় দৈনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে দায়িত্ব পালন করছেন বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী। এরা প্রবাসীদের পরিচিত মুখ। সুখে-দুঃখে, আচার অনুষ্ঠানে এরাই থাকেন সবার আগে।
জাহাঙ্গীর কবির বাপপি :
জাহাঙ্গীর কবির বাপপি সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসেন ১৯৯৩ সালে। কিশোর বয়স থেকে সাহিত্য প্রীতি থাকলে ১৯৯৯ সালের দিকে জড়িয়ে যান প্রবাসী সাংবাদিকতায়। দৈনিক পূর্বকোণ এর ইউ এ ই প্রতিনিধি হিসেবে শুরু করেন প্রবাসী সাংবাদিকতা। তবে সফলতা আসে তার টেলিভিশন সাংবাদিকতায়। ২০১২ সালে তিনি যোগ দেন বাংলদেশের অন্যতম স্যাটেলাইট চ্যানেল বাংলাভিশন এ। বতর্মানে তিনি ওই চ্যানেলের আবুধাবী ব্যুরো প্রধান হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়াও আমিরাত থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক দেশের খবর এর বার্তা বিভাগেরও দায়িত্বে আছেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে বাপপি জানান, ‘ সাংবাদিকতার মৌল নীতিমালা সত্য প্রকাশে অবিচল থাকার ব্রতে আছি এ পেশায়। মাস দুই/তিন আগে আবুধাবীতে মদিনা যায়েদ এলাকায় পাকিস্তানীদের মদদ পুষ্ট বাংলাদেশী জুয়াড়ীদের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিডিও চিত্র ধারণকালে ২০/২৫ জনের একটি গ্রুপের সাথে সংঘাত হয়, যদিও পরবর্তীতে এনিয়ে রিপোর্ট করা থেকে বিরত থাকিনি। ‘ বতর্মান কর্মস্থল আবুধাবীতে থাকলেও বাপপি চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানার গশ্চি গ্রামের সন্তান। তবে পরিবার পরিজনের সাথে বর্তমানে সে রাঙ্গামাটির বাসিন্দা।
শিবলী আল সাদিক :
চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূুর্বকোণ এর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে ২০০৫ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসেন শিবলী আল সাদিক। আমিরাত আসার তিনমাস পর নিজের সম্পাদনায় বের করেন ‘সময়ের সংলাপ’ নামে আমিরাত ভিত্তিক মাসিক পত্রিকা। তিনি বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন দৈনিক ইত্তেফাক ও অর্থকথা পত্রিকায়। ইউএই প্রতিনিধি হিসেবে খন্ডকালীন দায়িত্ব পালন করেন যায় যায় দিন এ। ২০১০ সালে শুরু করেন টেলিভিশন সাংবাদিকতা। যোগ দেন স্যাটেলাইট চ্যানেল এনটিভি তে। সংবাদ সংগ্রহের স্মৃতিচারণ করে শিবলী বলেন, ‘ আল আইন এর সড়ক দূর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি বাংলদেশি নিহত হবার খবরটি এনটিভিতে লাইভ করেছিলাম। এতে করে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ইউএই প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সক্ষম হয়। ‘ চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলায় বাসিন্দা শিবলী বর্তমানে আছেন আমিরাতের বাণিজ্যিক শহর দুবাইয়ে।
মাহবুব হাছান হৃদয় :
হৃদয় সংযুক্ত আরব আমিরাতে আসেন ১৯৯৭ সালে। প্রতিনিধি না হলেও আমিরাত থেকে নিয়মিত নিউজ পাঠাতেন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা জনকণ্ঠ এ। একই সাথে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজাদী, পূর্বকোণ ও বাংলার বাণী তেও সংবাদ প্রেরণ করতেন তিনি। বাংলদেশের স্যাটেলাইট চ্যানেল আরটিভি’র মাধ্যমে ২০০৭ সালে টিভি রিপোর্টার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এছাড়া ২০১০ সাল থেকে কিছু দিন তিনি বৈশাখী টিভিতেও কর্মরত ছিলেন। আরব আমিরাতে সংবাদ সংগ্রহের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন ” একবার রাষ্ট্রপতির নিউজ কাভার করতে গেলে সেখানকার সিকিউরিটি আমার ক্যামেরা নিয়ে নেন। নিউজটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়া দশ মিনিট পর আবার ক্যামেরা ফিরিয়ে দেন তারা। এখনো প্রায় মনে পড়ে সেদিনের ঘটনা। ” চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার উর্কিরচর গ্রামের ছেলে মাহবুব হাছান হৃদয় বতর্মানে দুবাইতে রয়েছেন।
মুহাম্মদ আবু মুছা :
২০০০ সালে আমিরাতে এসে জীবন-জীবিকার পাশাপাশি লিখতেন সূর্যোদয়, বিচিত্রা, চিত্রবাংলা ও খবর পত্রিকায়। কোনো জাতীয় দৈনিক এর প্রতিনিধিত্ব না করলেও আমিরাত থেকে নিউজ পাঠাতেন আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও ইত্তেফাক এ। তবে সেসময় সাপ্তাহিক এর প্রতিনিধি ছিলেন তিনি। বতর্মানে এশিয়ান টিভি’র আরব আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন তিনি। প্রবাসী সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে মুছা জানান ” আমার জীবনে একটি সংবাদের কথা মনে থাকবে অনেক বছর। হলুদ সাংবাদিকতা নিয়ে সে খবরটি প্রকাশ হয়েছিল আজকের সূর্যোদয়ে। প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদটি আমিরাতের প্রতিটি স্থানে ছিলো বেশ আলোচিত। আবু মুছার বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার পশ্চিম হাইদ চকিয়া গ্রামে বতর্মানে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাস আল খাইমা শহরেই থাকেন তিনি।
এম. আবদুল মন্নান :
১৯৯৬ সালের জানুয়ারীতে আমিরাতে আসেন চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের বাসিন্দা এম. আবদুল মন্নান। ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি ১৯৯৭- ৯৮ সালের দিকে যুক্ত হন প্রবাসী সাংবাদিকতায়। প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে শুরু হলেও বর্তমানে কাজ করছেন ইলেকট্রনিক মিড়িয়া বৈশাখী টিভি ও জি টিভি তে। প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়, প্রবাসের আলো, চিত্রবাংলা, প্রবাসী বার্তা, বর্তমান দিন কাল, প্রবাসের প্রহর এবং ২০০৮-২০১০সাল পর্যন্ত অস্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন নয়াদিগন্তে। বর্তমানে তিনি আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে থাকেন। ঘটনাবহুল সাংবাদিকতা জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে মান্নান জানান, ‘ উল্ল্যেখযোগ্য অনেক ঘটনার মধ্যে একটি ছিল চট্রগ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি কতৃর্ক আবুধাবী এক প্রবাসী ব্যবসায়ীর সহায় সম্পত্তির আত্মসাৎ করার বিরুদ্ধে টিভি, পেপার ও সাপ্তাহিকে রিপোর্ট। সংবাদটি প্রকাশ হবার পর ঐ প্রবাসী তার সম্পত্তি ফিরে পায়। এতে খুব আনন্দিত হয়েছি। আবার রাস আল খাইমার এক প্রবাসীর জায়গা সম্পত্তির জবর দখলের রিপোর্ট করার পর দেশের স্হানীয় মাস্তানরা প্রবাসীর আত্মীয় স্বজনদের উপর চড়াও হয়। এ ঘটনায় খুবই ব্যথিত হয়েছি।’
মুহাম্মদ মোরশেদ আলম :
২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি তে আমিরাতে আসেন মোরশেদ । ২০০৮ সালে দিকে সময়ের সংলাপ এর হাত ধরে শুরু করেন প্রবাসী সাংবাদিকতা। ২০১০ সালে আবুধাবি প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন বাংলা ভিশন এ। সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা জানিয়ে মোরশেদ বলেন, ‘আল আইন’ সড়ক দুর্ঘটনার সর্বাধিক রিপোর্ট করেছিলাম আমি। বাংলা ভিশনের মূল নিউজ ও প্রবাসী মুখে লাইভ করেছিলাম আল আইন জিমি হাসপাতাল থেকে। এই দূর্ঘটনাটা আমার কাছে অনেক কষ্টের স্মৃতি হয়ে থাকবে।’ তিনি ২০১৪ সাল থেকে আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ শুরু করেন দৈনিক মানব জমিন পত্রিকায়। চট্টগ্রামের রাউজান পৌরসভাস্থ আলীর খীল গ্রামের ছেলে মুহাম্মদ মোরশেদ আলম বর্তমানে আবুধাবিতে কর্মরত আছেন।
সালাউদ্দিন :
২০০৩ সালে ভোলার চরফ্যাশন থেকে কর্মের সন্ধানে আমিরাতে পাড়ি জমান সালাউদ্দিন। ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি প্রবাসী সাংবাদিক হিসেবে দৈনিক ইনকিলাব এর মাধ্যমে লেখালেখি শুরু। তিনি দৈনিক ইনকিলাব এর সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে এখনো কর্মরত আছেন। বতর্মানে থাকেন আমিরাতের আযমান শহরে।
মুহাম্মদ রফিক উল্লাহ্ :
আরব আমিরাতে আসেন ২০০৯ সালের মার্চ মাসে। ২০১০ সালের আগষ্ট থেকে মামুর উল্লাহ্ নামে দিগন্ত টিভি’র আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ পান। একই সাথে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে রফিক উল্লাহ্ নামে ইসলামিক টিভিতে আমিরাত থেকে নিউজ করতেন তিনি। ২০১৩ সালের ৫ মে ২টি চ্যানেল বন্ধ হয়ে যাবার পর থেকে চ্যানেল ২৪ এ কাজ শুরু করলেও পরবর্তীতে তিনি ২০১৪ সালে নতুন করে চালু হওয়া যমুনা টিভি’তে আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। আমিরাতের আবুধাবিতে থাকলেও রফিক উল্লাহ্ ‘র বাড়ি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর ফুলবাগিছা গ্রামে।
লুৎফুর রহমান :
২০০৯ সাল থেকে প্রবাসী সাংবাদিকতায় যুক্ত হন লুৎফুর রহমান। আরব আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকায়। প্রতিনিধি না হলেও তিনি লিখেছেন দৈনিক যুগান্তর ও কালের কণ্ঠ পত্রিকায়। সিলেট বিয়ানিবাজারের নিধনপুরের ছেলে লুৎফুর বতর্মানে থাকেন আমিরাতের দুবাই শহরে।
মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন :
২০০৯ সালের নভেম্বরে আমিরাতে আসেন মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। ব্যক্তিগত কাজের পাশাপাশি ২০১০ থেকে প্রবাসী কণ্ঠ নামের একটি পত্রিকার মাধ্যমে শুরু করেন লেখালেখি। কাজ করেন হাটহাজারী দর্পণও। এরপর যোগ দেন দেশের নাম করা নিউজ পোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর এর দুবাই প্রতিনিধি হিসেবে। কর্মদক্ষ এই কলম সৈনিক বর্তমানে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর এর আমিরাত প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। দুবাই প্রবাসী সাংবাদিক মামুনের বাড়ি চট্রগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার নাঙ্গলমোড়া গ্রামে। সাংবাদিকতার উল্লেখযোগ্য কিছু অভিজ্ঞতা জানানোর সময় তিনি বলেন, ‘এমআরপি পেতে ভোগান্তিতে আমিরাত প্রবাসীরা, দৌরাত্ম্য দালালদের- শিরোনামে একটি সংবাদ বাংলানিউজে প্রকাশ হওয়ার পর যেভাবে আমার মুঠোফোনে কল আসল তাতে আমি অনেক অসহায় হয়ে পড়ি কিন্তু যখন আমিরাতে বসবাসরত অনেক শ্রমিক মুঠোফোনে কল করে বললো : আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনি আমাদের মনের কথা তুলে ধরছেন। তখন থেকে নিজেকে সত্য প্রকাশের জন্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করি।’
তারা ছাড়াও আমিরাতে সাংবাদিকতার সাথে জড়িত আছেন, সাইফুল ইসলাম তালুকদার (ইটিভি ও সময় টিভি), সিরাজুল ইসলাম (মাই টিভি ও এস এ টিভি ), ফারুক চৌধুরী (বাংলাভিশন,দুবাই), লিটু সিকদার (মোহনা টিভি)। এছাড়া গিয়াস উদ্দিন (ক্যামেরাম্যান, এনটিভি), মহিউল করিম আশিক (ক্যামেরাম্যান, বাংলাভিশন), মামুনুল ইসলাম (সুপ্রভাত বাংলাদেশ) ও শামসুর রহমান সোহেল (শীর্ষ নিউজ) এর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের কিছু বিভাগ থেকে কেউ কেউ আবার বিভিন্ন সাপ্তাহিক পত্রিকায় লেখালেখি করেন। অনেকেই আবার সাংবাদিকতা ও লেখালেখির পাঠ চুকিয়ে আপন কর্মে মনোযোগী হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন হলেন নুরুল আবসার তৈয়বী, দিদার আশরাফী, জর্জ খান, সাবের আহমেদ রেজভী, নাছির তালুকদার, হাফেজ আজম, এহতেশাম, নিমাই সরকার, কাজী জাকারিয়া, মোহাম্মদ রফিকুল আলম, এস.এম. মনসুর নাদিম, জাফর চৌধুরী (মৃত), এস.এম. দিদার, জালাল বাবুল, কোরবান আলী (মৃত), নাসিম উদ্দিন আকাশ ও মোহাম্মদ হারুন।
আমিরাতে বাংলাদেশি কম্যুনিটির কয়েকজন সংবাদকর্মী নিজস্ব সম্পাদনায় বের করেন বাংলা প্রিন্ট পত্রিকা। এগুলোর মধ্যে প্রবাসের আলো (নুরুল আবসার তৈয়বী), সময়ের সংলাপ (শিবলী আল সাদিক), প্রবাসের প্রহর (সাইফুল ইসলাম তালুকদার), অন্য মাত্রা (জর্জ খান ), সাপ্তাহিক সংবাদ শিরোনাম (দিদার আশরাফী), বাংলাদেশ সংলাপ ও বাংলা এক্সপ্রেস ( হারুনুর রশীদ), মুকুল ( লুৎফুর রহমান), মাসিক স্বদেশ (আবু মুছা) একসময় প্রকাশিত হলেও সম্পাদকদের ব্যস্ততা ও নানা জটিলতায় বেশির ভাগ পত্রিকার প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া ওসব বাংলা পত্রিকার বদৌলতে কিছু নামধারী সাংবাদিকও সৃষ্টি হয়েছিলো। তাদের এখনো কম্যুনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। বিশেষ বিশেষ স্থানে তারা এ টু জেড মিডিয়ার সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত। তবে হাসান খালিদ সম্পাদিত ‘দেশের খবর’ পত্রিকাটি নিয়মিত বের হচ্ছে। পত্রিকাগুলোর মধ্যে ‘অন্যমাত্রা’ ও’ দেশের খবর’ দুবাই মিডিয়া সিটি থেকে রেজিস্টারকৃত। অন্যগুলোর কয়েকটি বাংলােদশি রেজিস্ট্রেশন নিয়েই প্রকাশিত হতো।
একটি বিষয় এখানে খুব পরিষ্কার! প্রতিযোগিতা, দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতা না থাকায় প্রবাসে সংবাদ বা সাংবাদিকতা বুজার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না, এমনকি ঠিকমতো সংবাদ লিখতে না পারলেও সমস্যা নেই। তবে অবশ্যই ভালো ক্যামেরা চালানোর জ্ঞান থাকতে হয়। কারণ, প্রবাসে টিভি রিপোর্টারের কদর বেশি, গুরুত্বহীন প্রিন্ট মিডিয়া। প্রিন্ট মিডিয়ার গুরুত্ব না থাকার পেছনে হেড অফিসগুলোর দায়িত্বহীনতাকেই দায়ী করা যায়! এছাড়াও দায়ী করার মতো আরো নানান ইস্যুই আছে। যাক সেদিকে যাচ্ছি না। কিন্তু লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, কিছু সংখ্যক প্রবাসী ছাড়া বেশির ভাগ মানুষর প্রবাসের বস্তুনিষ্ঠ খবরের ভরসা প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইনে।
আমিরাতে বাংলাদেশের মতো খুব একটা সংবাদের পিছু ছুটেতে হয়না বরং সংবাদই সাংবাদিকদের পিছু ছুটে প্রতিনিয়ত! সংবাদ বললে হয়তো কিছুটা ভুল হতে পারে, কারণ সংবাদ সংগ্রহে এখানে বিভিন্ন আইন মানতে হয়। আর পিছু না ছাড়া ‘ সংবাদ ‘ হচ্ছে কিছু অতি উৎসাহী মানুষ। এরা নিজের চেহারা টিভিপর্দায় দেখানোর জন্য খুবই আগ্রহী। কারণ, মেকআপ বিহীন নিজের চেহারাটা বার বার টেলিভিশনের পর্দায় দেখার ব্যাকুলতা তাদের তাড়া করে বেড়ায়। তাই এই সুযোগটি হাত ছাড়াও করতে চান না কিছু কিছু সংবাদকর্মী। প্রবাসে এরাই উল্লেখযোগ্য ‘ সংবাদ ‘। ক্ষতি নেই বরং লাভ আছে! অফিস থেকে কোনো রূপ বেতন পান না অনেক প্রবাসী সাংবাদিক। বেতন বিহীন সংবাদকর্মীদের সংবাদ সংগ্রহ, সম্পাদনা ও নিয়মিত সংবাদ প্রেরণ করতে গেলে একটা নির্দিষ্ট অংকের বাজেট রাখতে হয়। সেজন্যই হয়তো চেহারা দেখানো মানুষগুলোই কিছু কিছু সংবাদকর্মীদের পুঁজি। বিভিন্ন সংবাদ কাভারেজ দিয়ে যা আয় হয় তাতে এডিটিং এর খরচ চুকিয়ে সামান্য হয়তো নিজেদের জন্য থাকতেও পারে! কেউ কেউ আবার এটি কে ব্যবসা হিসেবেও দেখেন!
একটি বিষয় যোগ না করলেই নয়, এখানকার সংবাদকর্মীরা একেলা রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে ভুলে যাচ্ছেন সহনশীলতা ও সহযোগীতার মনোভাব। অনেকেই অর্থের পিছনে দৌঁড়াতে গিয়ে ভুলে যাচ্ছেন নিজের দায়িত্বের কথা! অথচ প্রবাসী সাংবাদিকতার মূলই কিন্তু প্রবাসীদের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে তাদের পাশে থাকার কথা। গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা প্রয়োজন শ্রমিকদের দুঃখ দূরদর্শার কথা। দু দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের জন্য দিক নির্দেশনা দিয়ে খবর প্রচারসহ হতাশাগ্রস্থ শ্রমিকদের মনোবল চাঙ্গা রাখতে উৎসাহ দিয়ে সফলতার খবর গুলো গুরুত্ব দেয়া। এছাড়াও সচেতনতা মূলক বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সদা সজাগ রাখা। অথচ প্রত্যাশার চেয়ে খুব কমই হয় এসব সংবাদের প্রচার।
কামরুল হাসান জনি
আমিরাত প্রতিনিধি : বাংলাদেশ প্রতিদিন