কূটনৈতিক এলাকায় নজরদারি বাড়ছে, বসছে ৪৫০ সিসি ক্যামেরা

ঢাকা: রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ওই এলাকায় বসানো হচ্ছে অতিরিক্ত সাড়ে ৪শ সিসি ক্যামেরা।

বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের ডাকা অনির্দিষ্টকালীন অবরোধের মধ্যে দেশজুড়ে ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটছে। গাড়িতে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ও হামলার ঘটনা সর্বত্র। রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান-বারিধারা-বনানী এলাকায়ও ঘটছে এসব ঘটনা। অতি সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর হামলাসহ কয়েকটি ঘটনার পর এখানকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে সংশ্লিষ্টদের।

এর পরিপ্রেক্ষিতেই কূটনেতিক এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপত্তায় বসানো হচ্ছে ৪৫০টি সিসিটিভি ক্যামেরা। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবির বলেন, ‘কূটনৈতিক জোনসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের নিরাপত্তার জন্য বরাবরই পুলিশ-র‌্যাব তৎপর রয়েছে। তবে চোরাগোপ্তা হামলা ঠোকানোর জন্য সিসি ক্যামেরার প্রয়োজন রয়েছে। সাম্প্রতকি পরিস্থিতিতে সেই উদ্যোগই নেয়া হয়েছে।’

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৪৫০টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। এসব ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণ ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সদর দপ্তরে করা হলেও গুলশান থানাতে থাকছে অতিরিক্ত একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ইতোমধ্যেই গুলশান-২ গোলচত্তর এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ১২টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।

তিনি জানান, তাইওয়ানের তৈরি ‘লিলিন’ ব্রান্ডের ২ মেগাপিক্সেল ক্ষমতাসম্পন্ন এসব ক্যামেরার কন্ট্রোল প্যানেল আপাতত গুলশান থানার নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রতিটি ক্যামেরায় সংযুক্ত ডিএমপির পক্ষ থেকে দেওয়া বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তির ছবি বা কোন গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর আগে থেকে দেয়া থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যামেরাগুলো বিশেষ সংকেত দেবে।

শুধু তাই নয়, আইপি পাসওয়ার্ড জানা থাকলে দেশের যে কোনো এলাকা থেকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ক্যামেরাগুলো মনিটরিং করা যাবে। অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে ৪৫০টি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে।

ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, গুলশানের চারটি সোসাইটি মিলে গঠিত আইন শৃঙ্খলা কমিটি এই কাজে সহায়তা করেছেন। ডিএমপির পক্ষ থেকে বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার দেয়া হচ্ছে। গুলশানের প্রতিটি রোড এবং এর ফিডার রোডগুলোও পর্যায়ক্রমে সিসিটিভির নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে গুলশান ইয়ূথ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শওকত হোসেন জানান, তিনটি ধাপে ক্যামেরাগুলো বসানো হবে। চলতি মাসের শেষের দিক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যামেরা স্থাপনের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হবে।

নিকেতন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সভাপতি মো. শামসুল আরেফিন চৌধুরী বলেন, ‘২০০৭ সালে নিজস্ব অর্থায়নে আমরা নিকেতন এলাকায় ১৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলাম। এসব ক্যামেরার ফুটেজ ব্যবহার করে চাঞ্চল্যকর নারায়ণগঞ্জের সাতখুনের ঘটনায় নিহত অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের গাড়ি উদ্ধার করেছিল পুলিশ। দেশে এখন রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছে। এই পরিস্থিতিতে সতর্ক হওয়া জরুরি।’
পুলিশ সূত্র জানায়, এর আগে ঢাকা মহানগর পুলিশ পুরো রাজধানীকেই সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনার চেষ্টা করে। ডিএমপির সিসিটিভি ক্যামেরা প্রকল্প প্রায় দেড় যুগ ধরে আলোর মুখ দেখেনি। তবে এবার অন্ততপক্ষে রাজধানীর একটি এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আসছে। গুলশান সোসাইটি, গুলশান ইয়ুথ ক্লাব, নিকেতন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, বারিধারা সোসাইটি তাদের নিজেদের অর্থায়নে যৌথভাবে স্থাপন করছে এসব সিসিটিভি ক্যামেরা।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর গুলশান-বারিধারা ও বনানীর কূটনৈতিক জোনে অর্ধশত দেশের দূতাবাস রয়েছে। এসব এলাকা স্বাভাবিক সময়েও কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখতে পরিস্থিতি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। কিন্তু এবার নিরাপত্তার বলয় ভেঙ্গে প্রায়ই নানা ঘটনা ঘটছে।

কূটনৈতিক এলাকার বিভিন্ন দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের চ্যান্সেরি বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) আতাউল কিবরিয়া বলেন, ‘দূতাবাস এলাকায় সব সময়ই বিশেষ নিরাপত্তা আছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে ঘটতে না পারে এ জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

ইদানীং প্রায় প্রতিদিনই কূটনৈতিক এলাকায় কোনো না কোনো ঘটনা ঘটছে। প্রাইভেটকার, বাসসহ যানবাহনে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ ছাড়াও গুলির ঘটনাও ঘটছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কোনো ঘটনারই কূলকিনারা করতে পারছেন না।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে গুলশান-২ নম্বর চত্বরের পাশে ৪৬ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানকে গুলি ও গাড়িতে আগুনের ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়ায়। এতে কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তার বিষয়টি আরও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

গত শনিবার রাত ৯টার দিকে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এর ঘণ্টাখানেক পর আরেক উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুর গুলশান এভিনিউয়ের বাড়ি লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। পরদিন রাতেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের গুলশান-২ নম্বরের বাসার সামনেও ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় কানাডিয়ান হাইকমিশনের বাসার সামনে ককটেল ছোড়ে দুর্বৃত্তরা।

মোটরসাইকেল ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এসব মোটরসাইকেলে কখনও দু’জন, আবার কখনও তিনজন আরোহী ককটেল নিক্ষেপ, অগ্নিসংযোগ করে ও গুলি ছুঁড়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

এরপর থেকে গুলশান এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করে চেকপোস্টে বাধা দেয়া হচ্ছে। বেশিরভাগ রাস্তায় মোটরসাইকেল নিয়ে যাতায়াত সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারের পর এ এলাকায় বাড়তি ৩০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *