রোবট সাংবাদিক

তথ্য-উপাত্তকে মানুষের সাহায্য ছাড়াই লিখিত রূপ দেওয়া গেলে কেমন হবে? কোনো যন্ত্র বা সফটওয়্যারের প্রচলন ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এবার যোগ হয়েছে রোবটেরও। এখন চলছে এই প্রযুক্তির উন্নয়ন, আধুনিকায়ন এবং অধিকতর প্রয়োগের চেষ্টা।
তথ্যকে লিখিত রূপ দেওয়ার কাজটাই তো সাংবাদিকদের করতে হয়। তাই লেখার নতুন প্রযুক্তি বা সফটওয়্যারটি আগামী দিনে ব্যাপক তথ্যপ্রবাহের যুগে সাংবাদিকতার জগতে নিঃসন্দেহে নতুন মাত্রা যোগ করবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং গোয়েন্দা সংস্থার জন্য প্রতিবেদনও লিখতে পারবে এই রোবট সাংবাদিক।
লেখার ক্ষমতাসম্পন্ন সফটওয়্যারটির নাম কুইল। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ন্যারেটিভ সায়েন্স ২০১০ সালে এটির ব্যবহার শুরু করে তৈরি করে। কুইল তৈরি করার কৃতিত্ব ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের। এটি সংখ্যাভিত্তিক তথ্য-উপাত্তকে লিখিত প্রতিবেদনে রূপ দিতে পারে। টেলিভিশন এবং অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যমের জন্য বেসবল খেলার প্রতিবেদন লেখার কাজে কুইল আগে থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে। আর বিখ্যাত ফোর্বস সাময়িকীর মতো একাধিক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে কুইল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েছে।
সফটওয়্যার যদি ভালো বাক্য লিখতে পারে, মানুষের পরিশ্রম অনেকটাই কমে যায়। তাই সাংবাদিকতা ও প্রতিবেদন লেখার ক্ষেত্রে দক্ষ মানবকর্মীর বিকল্প হিসেবে সফটওয়্যারের ব্যবহার অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। ন্যারেটিভ সায়েন্সের প্রধান নির্বাহী স্টুয়ার্ট ফ্র্যাংকেল বলেন, মানুষের বিকল্প সফটওয়ারের সম্ভাব্যতা জানতে তাঁরা বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে জরিপ চালিয়েছেন।
টি. রো প্রাইস, ক্রেডিট সুইস এবং ইউএসএএ প্রভৃতি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে কুইল সফটওয়্যার কিনেছে এবং যান্ত্রিক এই লেখার পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছে। ফ্র্যাংকেল বলেন, কুইল সফটওয়্যার একদল সেনা বা মানুষের এক সপ্তাহের পরিশ্রমের সমান কাজ মাত্র কয়েক সেকেন্ডে করে ফেলতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার (সিআইএ) বিনিয়োগ বিভাগ ন্যারেটিভ সায়েন্সকে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। ফ্র্যাংকেল আরও বলেন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতোই দ্রুত যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধার মুখোমুখি হয়। কুইল সব মিলিয়ে এখন প্রতিদিন লাখ লাখ শব্দ নিয়ে কাজ করে। তবে এটি সংখ্যাসূচক কোনো তথ্যের সাহায্য ছাড়া লিখতে পারে না। এই সফটওয়্যার তথ্যের পরিসংখ্যাননির্ভর বিশ্লেষণ করে এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ঘটনা বা ধারা পর্যবেক্ষণ করে। পাশাপাশি দেউলিয়াপনা, মুনাফা ও রাজস্ব প্রভৃতি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মৌলিক ধারণা রাখে। সব মিলিয়ে কুইল সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে পাঠানোর উপযোগী অনুচ্ছেদ লিখতে পারে, যা পড়ে মনে হবে যেন কোনো কম্পিউটার নিজে নিজেই লিখেছে।
নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটারবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান হ্যামন্ড বলেন, লেখার বিভিন্ন নিয়ম বা কৌশলের সমন্বয়েই কুইল সফটওয়্যারটির প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়েছে। যেমন: বাক্য ও অনুচ্ছেদ গঠন, পৃষ্ঠাসজ্জা, কীভাবে একটা ধারণা বর্ণনা করার জন্য কোনো বাক্য শুরু করতে হয়, পুনরাবৃত্তি এড়াতে হয়, সংক্ষেপ করতে হয় ইত্যাদি।
কোনো প্রতিষ্ঠান তার নীতিমালা অনুযায়ী কুইলকে কিছু বাক্য ও শব্দ লেখার ধরন ও কৌশল সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে প্রোগ্রামটি নির্ধারিত করে দিতে পারে। কুইল একটি নির্দিষ্ট অবস্থান বা পক্ষ নিয়ে লিখতে পারবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রচার চালানোর কাজে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে। যেমন: খেলাধুলার ক্ষেত্রে কুইল একটি নির্দিষ্ট দলকে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিবেদন লিখতে পারে।
ওহাইও স্টেট ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল হোয়াইট বলেন, কুইল সফটওয়্যারের সাহায্যে মানুষের স্বাভাবিক ভাষা রচনার পরিবর্তে বাণিজ্যিক সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনাই বেশি।
যন্ত্রের সাহায্যে লেখার পদ্ধতি নিয়ে ন্যারেটিভ সায়েন্সের পাশাপাশি কাজ করছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান অ্যারিয়া। স্কটল্যান্ডের অ্যাবারডিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই প্রযুক্তির উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের পিটসবুর্গের প্রতিষ্ঠান অনলিবোথ গত বছর যাত্রা শুরু করে এবং তারা লেখার উপযোগী প্রথম সফটওয়্যার চলতি বছরের মধ্যেই বাজারে ছাড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে।
সূত্র: এমআইটি টেকনোলজি রিভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *