আমরা যে ক’জনই সুযোগ পেয়েছি সবারই ক্ষমতা আছে ভাল করারঃতাইজুল

নাটোর’- এই নামটি শুনতেই সামনে ভেসে ওঠে লাজুক, নরম বনলতা সেনের সেই কবিতার চরিত্র। বাংলাদেশের স্পিন বোলার নাটোরের ছেলে তাইজুল ইসলামের ওপর যেন সেই কোমল চরিত্রের ছাঁয়া। বেশি কথা বলেন না। যতটুকু বলেন- সোজাসাপটা উত্তরই বলা চলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে টেস্ট রেকর্ড হয় তার মাস কয়েক আগে। এরপর দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চমক। সেই সাফল্যের হাত ধরে আসন্ন বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের তিনিও একজন গর্বিত সদস্য। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়াকে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন পূরণই মনে করেন তিনি। বনলতার মতো তার স্পিনের মায়াবী ঘূর্ণি হতে পারে যে কোন ব্যাটসম্যানের জন্য মরণ ফাঁদ। সেই ফাঁদের ভরসাতেই বিশ্বকাপের মতো বিরাট আসরে মাঠে নামতে চান বড় লক্ষ্য নিয়ে। নিজের লক্ষ্য নিয়ে কথা বলেছেন তার কথোপকথনের মূল অংশ তুলে ধরা হলো-
স্বপ্নপূরণ: প্রত্যেকটা ক্রিকেটারের স্বপ্ন থাকে দেশের হয়ে খেলা। আমার সেই স্বপ্ন গেল বছরই পূরণ হয়েছে। কিন্তু আত্মবিশ্বাস থাকলেও ভাবতে পারিনি আমার জীবনের বিশ্বকাপে খেলার মতো বড় স্বপ্নটি পূরণ হবে। আমাকে বিশ্বকাপ দলে ডাকায় ভীষণ খুশি। এর অন্যতম কারণ হলো দেশে ১৬ কোটি মানুষ থেকে বেছে মাত্র ১৫ জনকে বিশ্বকাপ দলে ডাকা হয়েছে। আমি সেই ১৫ জনের একজন। এটা ভাবতেই আমার অনেক ভাল লাগে।
কৌশল: আমি যখন বল করি তখন আমার অন্যতম কাজ থাকে ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা খুঁজে বের করা। আর তাকে সেই অনুযায়ী বল করা। আমি এ কাজটি করেই বেশি সফল হই। আমি মনে করি আমার স্পিনের পাশাপাশি এটি আমার বড় শক্তি।
কন্ডিশন: ওয়েস্ট ইন্ডিজে আমার অভিষেক হয়েছে। আমি নতুন কন্ডিশনে খেলেছি। দেশের বাইরে বাউন্সি উইকেটে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আছে। আর আমার বলেও কিছুটা বাউন্স আছে। আশা করি অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে খারাপ হবে না। আমি চেষ্টা করবো যতটুকু সময় সেখানে মানিয়ে নেয়ার সময় পাবো তাতে মানিয়ে নিতে। আত্মবিশ্বাস আছে সুযোগ পেলে ভাল করার।
প্রস্তুতি: দেশের মাটিতে ক্যাম্প শুরু হচ্ছে সেখানে আমি কোচদের পরামর্শ অনুসারে অনুশীলন করবো। এছাড়াও অস্ট্রেলিয়াতেও অনুশীলনের সুযোগ আছে। আমি সেখানেও চেষ্টা করবো যতটুকু দরকার অনুশীলন সেরে নেয়া। তবে আমি এখন নিয়মিত অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া আসর বিগব্যাশ দেখছি। এতে আমার কিছু উপকারও হচ্ছে। আমি বোঝার চেষ্টা করছি, সেখানে স্পিনাররা কিভাবে বল করে।
টিপস: বোলিংয়ে আমার কোন আইডল নেই। তবে বাংলাদেশের রফিক ভাই ছাড়াও ভেট্টরি, রঙ্গনা হেরাথদের বোলিং আমার ভাল লাগে। আমি তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে শেখার চেষ্টা করি। তবে সাকিব ভাইকে যখনই কাছে পাই টিপস নেয়ার চেষ্টা করি।
শক্তিশালী দল: আমরা যে ক’জনই সুযোগ পেয়েছি সবারই ক্ষমতা আছে ভাল করার। আর আমাকে মাশরাফি ভাই, মুশফিক ভাই, রিয়াদ ভাই থেকে শুরু করে দলের সিনিয়র, জুনিয়র সবাই খুব সাহায্য করে। আমি বলবো আমাদের দলটি খুব শক্তিশালী। যোগ্যতা অনুসারে খেলতে পারলে যে কোন দলকে হারাতে পারবো।
বিশ্বকাপে লক্ষ্য: বিশ্বকাপের মতো বিরাট আসরে লক্ষ্য তো একটা আছেই। সেটি হলো দলে সুযোগ হলে চেষ্টা করবো আসরে সেরা ১০ বোলারের মধ্যে নিজের নামটিও রাখার। জানি এটি অনেক বড় লক্ষ্য। এ জন্য আমাকে অনেক কষ্ট করতে হবে।
অনুপ্রেরণা: ১২/১৩ বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করি নাটোরে। অনূর্ধ্ব-১৩ দলের হয়ে খেলি। আমরা দুই ভাই, দুই বোন। শুরু থেকে বাবা-মা, বাড়ির সবাই আমাকে ক্রিকেট খেলতে খুব উৎসাহ দিয়ে আসছে। এখনও তারা আমার পাশে আছে। ২০১৩ সালে বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রী নাসরিন আরফিনও আমাকে ক্রিকেটে খুব উৎসাহ দেয়। বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ায় বাসার সবাই ভীষণ খুশি। তারা সব সময় আমার জন্য দোয়া করছে যেন আমি আরও ভাল করতে পারি। বলতে পারেন আমার ক্রিকেট খেলার পেছনে পরিবারই অনেক বড় অনুপ্রেরণা।

আতিক/প্রবাস নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *