মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধরা তাদের হাতে মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালানোর বিষয়টি ফাঁস হয়ে যেতে পারে এ ভয়ে দেশটিতে জাতিসংঘের প্রতিনিধির সফরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াং হি লি মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমান অধ্যুষিত রাখাইন ও কাচিন প্রদেশের বর্তমান মানবাধিকার পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য দেশটি সফর করবেন বলে কথা রয়েছে। আরাকান বা রাখাইন প্রদেশে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ইয়াং হি লির নেতৃত্বে জাতিসংঘের তদন্ত-প্রতিনিধি দল ১৩ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত মিয়ানমার সফরে থাকবেন বলে জানা গেছে। এ অবস্থায় পশ্চিম মিয়ানমারে বিমানবন্দরের সামনে প্রায় ১ হাজার বৌদ্ধ এই সফরের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এই প্রতিবাদীরা বলছে, জাতিসংঘ নাকি মিয়ানমারের মুসলমানদের পক্ষে কাজ করছে!
জাতিসংঘের তদন্ত-প্রতিনিধিদল মুসলমান অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশের সিইতু শহর পরিদর্শন করবেন বলে কথা রয়েছে। গত দুই বছরে এখানে বহু নিরপরাধ মুসলমান উগ্র বৌদ্ধদের হাতে নিহত হয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলো খবর দিয়েছে। মুসলমানদের ওপর গণহত্যার এইসব ঘটনায় মিয়ানমারের সরকারি ও বিশেষ করে সামরিক কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন বলে জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে। এ অঞ্চলে মুসলমানদের ওপর উগ্র বৌদ্ধদের পরিকল্পিত এক হামলার ঘটনায় খুব কম সময়ের মধ্যে বিশটিরও বেশি গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয় এবং এতে ধ্বংস হয়ে যায় ১৬০০ বাড়িঘর। এ ছাড়াও হতাহত হয় বহু মুসলমান। যারা পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়েছিল তাদের অনেককেই বন্দি ও হত্যা করা হয় এবং মুসলিম নারীদের অনেকেই হন ধর্ষণের শিকার। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওইসব হামলার ঘটনায় উগ্র বৌদ্ধদেরকে অনেকগুলো জ্বালানি তেলের ড্রাম দিয়েছিল মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী যাতে তারা মুসলিম গ্রামগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে এবং এর ফলে মুসলমানরা ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী যে মুসলমানদের ওপর গণহত্যায় ভূমিকা রাখছে এমন খবর বারবার উঠে এসেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তদন্ত-রিপোর্টে। আরাকান তথা রাখাইনের ২৭ টি অঞ্চলে তদন্ত টিম পাঠিয়েছিল হিউম্যান রাইট ওয়াচ। তদন্ত শেষে সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়, একটি গণ-কবরের সন্ধান পাওয়া গেছে যেখানে একই গর্তে ১৮ জন রোহিঙ্গা মুসলমানের লাশ পাওয়া গেছে। লাশগুলোর হাত ছিল প্লাস্টিকের দড়ি বা কর্ড দিয়ে বাঁধা যা দেশটির পুলিশ ব্যবহার করে থাকে। আর এ ধরনের রিপোর্ট প্রকাশ হতে থাকায় উগ্র বৌদ্ধরা মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর জাতিগত শুদ্ধি অভিযান এবং বিশেষ করে এইসব হত্যাকা-ে দেশটির সেনা কর্মকর্তাদের হাত থাকার বিষয়ে আবারও জাতিসংঘ তদন্ত-টিমের সফরের পদক্ষেপ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তাই তারা ও বিশেষ করে মিয়ানমারের সেনা কর্মকর্তারা ভাড়াটে প্রতিবাদীদের দিয়ে জাতিসংঘের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এইসব প্রতিবাদকে একই দৃষ্টিতে দেখছে। গণতান্ত্রিক সংস্কারের কথা বলে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী দেশটির ক্ষমতা ভোগ করছে এবং দেশটির সংসদেও ভেটো দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে এই বাহিনীর। তাই জাতিসংঘের তদন্ত টিমগুলোর সফরের ফলে মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর গণহত্যায় উগ্র বৌদ্ধদের পাশাপাশি তাদেরও হাত থাকার প্রামাণ্য খবর বা তথ্যগুলো ফাঁস হতে পারে এমন আতঙ্কের সঙ্গে এইসব সফরের বিরুদ্ধে কথিত গণ-প্রতিবাদ মিছিলের সম্পর্ক থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। ওয়েবসাইট।
আতিক/প্রবাস