দমন ও সমঝোতা এ দুই বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছে সরকার

বিরোধীদের সাথে চলমান সঙ্কট সমাধানে ‘দমন’ ও ‘সমঝোতা’ এ দুই বিকল্প নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে অবরোধসহ সরকারবিরোধী আন্দোলন মোকাবেলায় প্রাথমিকভাবে আরো কঠোর অবস্থানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সরকারের নীতিনির্ধারকেরা। সে ক্ষেত্রে বিএনপি জোটের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার ও মাঠ নেতাকর্মীদের ধরপাকড় অব্যাহত রাখা হবে।

আন্দোলনের গতি দেখে প্রয়োজনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেফতার অথবা গৃহবন্দী করা হতে পারে। গত কয়েক দিন ধরে তাকে রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে। এভাবে মামলা-হামলা, দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে চায় সরকার। তবে এ কৌশলে সফলতা না এলে সে ক্ষেত্রে নতুন করে সংলাপ-সমঝোতার দিকে যাবে তারা। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ৫ জানুয়ারি রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে উল্টো বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে চলমান লাগাতার অবরোধে অস্বস্তিতে পড়েছে আওয়ামী লীগ। প্রকাশ্যে যাই বলা হোক না কেন, বিএনপির ধারাবাহিক এ কর্মসূচি এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে তা সরকারকে বিপদে ঠেলে দিতে পারে বলে মনে করছেন মতাসীনেরা। কারণ, র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ প্রশাসনিক তৎপরতায় রাজধানীতে অবরোধের মাত্রা কিছুটা দুর্বল করে দিতে সক্ষম হলেও ঢাকার বাইরের অবস্থা একেবারেই ভিন্ন। অবরোধকারীরা ঢাকাকে সারা দেশ থেকে একরকম বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রায় ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একসময় রাজধানীবাসীও সরকারবিরোধীদের সাথে রাজপথে নেমে পড়তে পারেন। সম্ভাব্য সেই অস্থির পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মহলও নড়ে চড়ে বসতে পারে। এতে সরকারের ওপর আরো কঠিন চাপ সৃষ্টি হতে পারে। সে জন্য আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবারো বিরোধীদের দমনের পথে হাঁটতে চায় সরকার। গত বৃহস্পতিবার রাতে গণভবনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের সাথে এক অনির্ধারিত বৈঠকে সরকারের এই মনোভাব প্রয়োজনে আরো কঠোর হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সাথে সরকারবিরোধী যেকোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি মোকাবেলায় দলীয় নেতাকর্মীদের রাজপথে আরো সক্রিয় থাকার নির্দেশও দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র করা হলে তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। ধ্বংসাত্মক ও নাশকতামূলক-কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার অবরুদ্ধের অবস্থানকে নাটক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে তিনি মামলা থেকে বাঁচার জন্যই এমন নাটক করছেন। তিনি ইচ্ছা করলে যেকোনো সময় বাসায় চলে যেতে পারেন।

দল ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্র জানায়, বিএনপি জোট টানা অবরোধ চালিয়ে গেলেও এখনই কোনো ধরনের আলোচনা বা সংলাপের উদ্যোগ নেবে না সরকার। বরং বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলায় বেশ শক্ত অবস্থানেই থাকবে তারা। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় অবরোধ মোকাবেলা করে ঢাকাসহ রাজধানীর বাইরের শহর ও মহাসড়কগুলো স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে। এভাবে শহর ও মহাসড়কগুলো স্বাভাবিক রাখা গেলে বিএনপির আন্দোলনও ব্যর্থ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতাদের বলেছেন, মামলা থেকে বাঁচার জন্য জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন খালেদা জিয়া। এতে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত স্বার্থ রার অবরোধ ও আন্দোলন টিকবে না। আগামী দুই-চার দিনের মধ্যেই সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।

জানা গেছে, গত নির্বাচনের আগে ২৯ ডিসেম্বর ‘রোড ফর ডেমোক্র্যাসি’র ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার অনেকটাই সক্রিয় বিএনপি জোট। বিশেষ করে ইজতেমার মধ্যেও অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়টি সরকারকে ভাবিয়ে রেখেছে। তাই আরো বড় ধরনের কোনো অস্থিরতা শুরুর আগেই বিরোধীদের দমন করতে চায় সরকার। সহিংসতাকারীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ব্যবস্থা হিসেবে রাজনৈতিক কর্মীদের নামের তালিকা নিয়ে সাঁড়াশি অভিযানেরও কার্যক্রম চলছে। সহিংসতা রোধে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনীকে জিরো টলারেন্সে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দমনমূলক এ কৌশল কোনো কারণে ব্যর্থ হলেই সমঝোতার চিন্তা করবে সরকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের একজন সিনিয়র নেতা জানান, সরকার মুখে যাই বলুক না কেন চলমান আন্দোলন একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে ইজতেমার মধ্যেও অবরোধ অব্যাহত রাখা সরকারের জন্য কোনো ভালো লক্ষণ নয়। তাই এ আন্দোলন মোকাবেলায় সরকার সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। তবে কোনো কারণে তা ব্যর্থ হলে আলোচনায় তো বসতেই হবে।

দলের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি একবার জোর করে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারা সেই ক্ষমতা ছাড়তে চায়নি। কিন্তু আমাদের আন্দোলনই তাদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছে। এবার তাদের যদি মনে হয় আমরা অবৈধভাবে জোর করে ক্ষমতায় আছি তবে তারা পারলে আন্দোনের মধ্য দিয়ে আমাদের সরিয়ে দিক।

আসলে আমরা কত দিন ক্ষমতায় থাকব তা এখন নির্ভর করছে বিএনপি জোটের আন্দোলনের গতির ওপরই। তারা আমাদের বাধ্য করতে পারলে আমরাও সংলাপ বা সমঝোতায় যেতে প্রস্তুত।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *