সামনে আরো কঠোর কর্মসূচি দেবে বিএনপি

সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি আরো কঠোর হবে। চলমান আন্দোলনের ধরন পাল্টাবে, গতিও বাড়াবে। অনিদ্দিষ্টকালের অবরোধ গড়াতে পারে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনে। আরো কৌশলী হবেন আন্দোলন সফল করার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও। তার আগে সরকারের কঠোরতার এবং বহাল শক্তির হিসাব-নিকাশ করবে। পাশাপাশি আন্তর্জাতির অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। ইতোমধ্যে তার কিছু নমুনাও দেখিয়েছে দলটি। বিএনপিসহ তাদের জোটের শরিক নেতৃবৃন্দ এমনটিই জানিয়েছেন।
বিএনপির একাধিক নীতি-নির্ধারক আলাপকালে জানিয়েছেন, তাদের যে প্রস্তুতি রয়েছে তার সবটুকু প্রয়োগ করা হয়নি। সরকার পতনের সূতিকাগার রাজধানী ঢাকার আন্দোলন শুরুই করেননি। সবেমাত্র অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে, সামনে আছে লাগাতার অসহযোগ ও হরতাল। এ কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে আগামী ২০ জানুয়ারির আগে-পরে সমাবেশের ঘোষণা দেবে ২০ দল। যে সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল ১২ জানুয়ারি। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘোষণা এবং ইজতেমার কারণে তা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সূত্রমতে, গত কয়েক দিনের রাজনৈতিক সহিংসতায় সারা দেশে ১০ জন নিহত হয়েছেন। শত শত লোক আহত হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে। টানা চতুর্থ দিনের অবরোধে দূরপাল্লা বাদে যানবাহন চলাচল ও অফিস-আদালত খোলা থাকলেও মানুষের মনের শংকা কাটছে না। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের সতর্কভাবে চলাফেরার পরামর্শ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলো। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্বের মোড়ল দেশও। বহির্বিশ্বের এই উদ্বেগকেই আন্দোলনের সফলতা হিসেবে ধরে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আরেকটি নির্বাচনের জন্য সরকার যে অঙ্গীকার করেছিল তার বাস্তবায়ন চায় সরকারের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। তবে দাবির স্বপক্ষে মূল দায়িত্ব পালন করছে বিএনপি জোট। বিএনপি জোট নেতাদের দাবি, তাদের এই আন্দোলনে সমর্থন করবে জোটের বাইরে থাকা বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।
এদিকে বিএনপি দলীয় সূত্রমতে, অবরুদ্ধ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার সিদ্ধান্তে অনড় আছেন। আগেই নেতৃবৃন্দকে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তার নির্দেশনার বাস্তবায়ন হচ্ছে। আগেই তিনি দলের বিশ্বস্ত নেতৃবৃন্দকে জানিয়েছিলেন, সরকার তাকে বন্দি করতে পারে। যেমনটি ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর করেছিল। এবার ৫ জানুয়ারির আগেই কার্যালয়ের সামনে ইট-বালুর ট্রাক, রায়টকার, জলকামান, হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। গত অবরুদ্ধ অবস্থায় যা যা করেছে এবার তার চেয়ে আরো বেশি আয়োজন করেছে সরকার। বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয় এবং দলীয় কার্যালয়ে তালা দিয়েছে পুলিশ। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে আদালত নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাতে বিচলিত নন বেগম জিয়া। বরং আরো কঠোর আন্দোলনের পক্ষেই তার অবস্থান।
সূত্রমতে, বিএনপি তৃণমূলের ধারণা ছিল ইজতেমার কারণে অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শিথিল বা স্থগিত করা হবে; কিন্তু তাদের সে ধারণা পাল্টে গেছে। নেতাকর্মীদের কাছে বার্তা পাঠানো হয়েছে, কোনভাবেই আন্দোলনের গতি কমবে না বরং বাড়বে। এর জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতির নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। যেসব নেতা আত্মগোপনে আছেন তাদের আরো সতর্ক করা হয়েছে। সরকার ও পুলিশের আচরণের ওপর ভিত্তি করে কর্মীদের নির্দেশনা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির দুই যুগ্মমহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহম্মেদ ও রিজভী আহম্দে প্রতিদিনই নেতাকর্মীদের উদ্দেশে চেয়ারপারসনের বার্তা দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে তারা ঘোষণা দিয়েছেন, সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। সর্বশেষ গতকাল ভিডিও বার্তায় রিজভী আহম্মেদ নেতাকর্মীসহ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যান। এই সরকারের বিদায় সময়ের ব্যাপারমাত্র।
বগুড়া বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল জানান, হাইকমান্ডের নির্দেশ রয়েছে। চলমান কর্মসূচি থেকে পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, এবার আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন করে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে নেতাকর্মী এবং দলের অস্তিত্বে টান পড়বে। তাই বাঁচা-মরার লড়াইয়ে নামতে হবে। টানা অবরোধের পর অসহযোগ ও হরতালে গড়াতে পারে আন্দোলন। এ বার্তা সারা দেশের গ্রাম থেকে মহানগর পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।

আতিক/প্রবাস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *