পারিস ম্যাসাকার – দায়ী কে?

tobeblamedইটটি মারিলে পাটকেলটি খাইতে হয়। ফ্রান্সের সাম্প্রদায়িক পররাস্ট্রনীতি বারংবার ফ্রান্সে সন্ত্রাস আক্রমণের সূচনা করেছে। ফ্রান্সে কিছু মানুষের মানবাধিকার ও স্বাধীনতার উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আইন করে হিজাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমার মাথা আমার সিদ্ধান্ত । আমি আমার মাথা ঢাকবো না খুলে রাখবো সেই সিদ্ধান্ত নেবার স্বাধীনতা আমার মানবাধিকার। আমরা যেহেতু সভ্য জগতে বাস করি তাই আমার শরীর উদোম করে চলার অধিকার আমাকে কেউ দেয়নি কিন্তু ফ্রান্সে অর্ধ নগ্ন নারীর অভাব নেই। সাগর সৈকতে হাজার হাজার নারী বিকিনি পড়ে শুয়ে থাকে গ্রীস্মকালে। বিকিনির উপরে যদি আইন করে নিষেধাজ্ঞা জারী না করা হয় তাহলে হিজাবের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারী করাও উচিৎ হয়নি।

সেদিন প্যারিসের একটি ম্যাগাজিন অফিসে ঢুকে গুলি করে বারোজন মানুষকে হত্যা করা হয়। বারোজনের ভেতর নয়জন ছিল সাংবাদিক। প্যারিসের এই ম্যাগাজিনের নাম Charlie Hebdo । হজরত মোহাম্মদ সাঃ কে অসন্মান করে একটি কার্টুন এঁকে তা এই পত্রিকাতে প্রকাশ করা হয়। অতীতে বিভিন্ন সময়ে চার্লি ইসলামকে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করে কার্টুন প্রকাশ করেছে। এই পত্রিকা অফিসে যারা আক্রমণ করে তারা কমান্ডো স্টাইলে অফিসের ভেতরে ঢুকে গুলি করে। এরা ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া [Islamic State of Iraq and Syria (ISIS)] সাথে জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই আক্রমনের সাথে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকীদের খোঁজা হচ্ছে।

এই ঘটনার জন্য দায়ী কে? কার্টুনিস্ট নাকি গানম্যান? নবী করীম মোহাম্মদ সাঃ কে বিদ্রুপ করে কার্টুন আঁকা যদি কার্টুনিস্টের মানবাধিকার ও স্বাধীনতা হয়ে থাকে তাহলে নবী (সাঃ) এর অনুসারীদের হিজাব পরিধান করার স্বাধীনতা থাকা উচিৎ। ফ্রান্স যদি আইন করে হিজাব নিষিদ্ধ করে তাহলে আইন করে অন্যদের ধর্মানুভুতিকে আঘাত করার প্রচেস্টাকে নিষিদ্ধ করা উচিৎ ছিল। আর তা যদি না করা হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা ঘটবে।

বহুজাতিক পুঁজিপতিরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যায় সেইসব দেশের সম্পদ লুণ্ঠন করার জন্য। এই সম্পদ লুন্ঠন করার আগে ওরা সেইসব দেশের মানুষের মর্মে আঘাত করে। প্রতিটি দেশেই দুই ধরনের শত্রু বিদ্যমানঃ এক- আভ্যন্তরীণ পুঁজিপতি, ব্যবসায়ী, দালাল ও মিরজাফর ; দুই – বহিরাগত পুঁজিপতি। সেইসব দেশের সম্পদ লুন্ঠনে এই দুই ধরনের শত্রুই একে অন্যকে বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগীতা করে। দেশের সম্পদ পাচারের কাজে আভ্যন্তরীন শত্রুরা বিদেশী শত্রুদের সাহায্য করে। আভ্যন্তরীণ শত্রুরা প্রথমে দেশের মানুষকে তাদের মিথ্যাচার দিয়ে প্রভাবিত করে। মানসিকভাবে সন্মোহিত করে। বিশ্বের বেশিরভাগ সম্পদশালী দেশের আভ্যন্তরীণ শত্রু বা মধ্যসত্বভোগী দালাল শ্রেনী ছাড়া অন্যান্য জনগনকে দেখা যায় নিজ দেশে বিদেশী কোম্পানীর অধীনে শ্রমিকের কাজ করতে বা ভিক্ষা করতে। সুদানের তেল সম্পদ চীনে পাচার হয়। সুদানের তেলে চীনের ফ্যাক্টরী চলে। চীন সাড়া বিশ্বে তাদের পন্য রপ্তানী করে। চীন এখন বিশ্বের একটি অন্যতম পুঁজিবাদী ও স্বৈরাচারী রাস্ট্র। অথচ সুদানের মানুষেরা নিজেরা নিজেদের ভেতরে হানাহানি করে । দুর্ভিক্ষের কারণে বা আভ্যন্তরীন দালাল শ্রেনীর রাজনৈতিক মিথ্যাচার, দুর্নীতি, স্বৈরাচার, নিপীড়নের কারণে রাস্তায় ভিক্ষা করে।

আফগানিস্তানে আমেরিকান সৈন্যরা মোতায়েন আছে। সেখানে মূল্যবান খনিজ সম্পদ পাওয়া গেছে। আফগানিস্তানের নীচে দিয়ে দীর্ঘ ট্যানেল তৈরির কাজ এখন শেষ হয়েছে। ইরাকের তেল এই ট্যানেল দিয়ে পরিবহন করে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। আফগানিস্তানে বহুজাতিক পুঁজিপতিদের পছন্দের ও অনুগত সরকার মোতায়েন আছে। যার নাকি আফগানিস্তানের আভ্যন্তরীন শত্রু। ইরাকে বহুজাতিক পুঁজিপতিদের পছন্দের ও অনুগত সরকার কায়েম করা আছে। এখন সমস্যা হয়েছে ইরান ও সিরিয়ার সরকার নিয়ে। ইরানের তেলের উপরে বহুজাতিক তেল কোম্পানী কব্জা করতে পারছেনা। সিরিয়াতে প্রচুর পরিমানে মূল্যবান খনিজ সম্পদ পাওয়া গেছে। সুতারাং সিরিয়াতে অবস্থানরত পালেস্টাইনী ও ইরাকী রিফুউজিসহ আগে আসা অন্যান্য রিফুউজিদের সাথে সিরিয়ানদের একটা সংঘাত বাধিয়ে দেওয়া হয়েছিল দুই বছর আগে। সেই সংঘাতে প্রচুর মানুষ মারা গেছে। সিরিয়া ছেড়ে পালিয়েছে। বাইরের পুঁজিপতিদের প্রচেস্টা সফল হয়েছে। বহু রিফুইজি সিরিয়া থেকে পালাতে যেয়ে সাগরে জাহাজ ডুবে মারা গেছে। সিরিয়াতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও গৃহযুদ্ধ ছিল সম্পুর্ন কৃত্রিম ও বহুজাতিক পুঁজিপতিদের তৈরি একটি সফল প্রচেস্টা।

১৯৫১ এবং ১৯৬৭ কনভেনশন রিফুউজি এক্ট অনুসারে  গৃহযুদ্ধের কারণে বা যুদ্ধের কারণে বা রাজনৈতিক কারনে বা ধর্মীয় বিশ্বাসের (সাম্প্রদায়িক) কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাদের জীবন ঝুঁকিবহুল তাদের কনভেনশন রিফুজি স্টাটাস দিয়ে আশ্রয় দেওয়া হয় বিশ্বের বিভিন্ন শান্তিপূর্ন উন্নত দেশে। এই দেশগুলোর মধ্য ফ্রান্স অন্যতম।

সাড়া বিশ্ব থেকে আসা সব ধরনের মানুষ আছে ফ্রান্সে। আলজেরিয়ান, লেবানিজ, পালেস্টিনিয়ান, সিরিয়ান, মরোক্কোয়ান, পাকিস্তানী, কসোভো, বাংলাদেশী ইত্যাদি। বর্তমান ফ্রেঞ্চ সরকার তীব্র সাম্প্রদায়িক । যারা ফ্রান্সের অরিজিনাল সাদা চামড়ার নাগরিক তার ব্যাপকভাবে  উঁচু নাকের । ফ্রান্সের পররাস্ট্রনীতি সাম্প্রদায়িক হবার ফলে রিফুউজিদেরকে নানাভাবে হয়রানী করা হয়। এইসব হয়রানীর ভেতরে নবী করীম মোহাম্মাদ সাঃ কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন আঁকা, হিজাব নিষিদ্ধ করা, সন্দেহের বশবর্তী হয়ে দাঁড়ি টুপিওয়ালাকে গ্রেফতার করে হয়রানী করা অন্যতম।

ইসলামকে আক্রমণ করে কার্টুন আঁকাই ছিল প্যারিস ম্যাসাকারের কারণ ।  ওরা যদি ব্যঙ্গ না করতো তাহলে কেউ ওদের হত্যা করতে যেতোনা। বিশ্বের মসুলমানেরা সন্ত্রাসী নয় । বিশ্বের মুসলমানেদের উপরে নিপীড়ন চালিয়ে তাদের ঘর ছাড়া করে যেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে সেখানেও তাদের উপরে চলে মানসিক নিপীড়ন।  এইভাবে তাদের  সন্ত্রাসী হবার জন্য উস্কে দেওয়া হয়।  সম্পদশালী দেশগুলোতে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে সেই গৃহযুদ্ধ থামানোর নামে সেই দেশে ঢুকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধিয়ে জনগনকে ব্যস্ত রেখে সেই দেশের সম্পদ পাচার করে ইউরোপ আমেরিকাতে। এইভাবে ইউরোপ আমেরিকার দেশগুলো উন্নত হয়েছে। তারপর লুটেরা ফিরে এসেছে ত্রাণকর্তা হিসাবে।  ত্রাণকর্তা হিসাবে ইউনাইটেড নেশনস এর মাধ্যেম আবার সেই একই দেশ ফিরে গেছে। নিজ আবাসভূমি থেকে বিতারিত করে যাদেরকে ওরা রিফুজী বানিয়েছে তাদের আশ্রয় দিয়েছে নিজ দেশে । তারপর আক্রমণ করছে তাদের ধর্মীয় অনুভুতিকে।  ধর্মীয় অনুশাসন অনুসারে পরিহিত পোষাকের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারী করছে।  তাদের নবীকে ব্যঙ্গ করে কার্টুন আঁকছে যাতে তারা উত্তেজিত হয়। হিজাব পরিধান করার জন্য লাঞ্ছিত ও গ্রেফতার করা হচ্ছে মুসলিম নারীদের। মুসলিমদের উপরে অমানবিক নির্যাতন করছে ফ্রান্স ।  এর ফলশ্রুতিতে ঘটেছে – প্যারিস ম্যাসাকার। What goes around comes around. Every action has an opposite and equal reaction.

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *