মিডিয়া ও বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদদের ওপর দমনপীড়নে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এডওয়ার্ড রয়সে ও ৫ কংগ্রেসম্যান। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, ভিন্ন মত ও বর্তমান সরকারের নির্মমতা চাপিয়ে রাখতে সমস্ত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ওপর সরকার যে অযৌক্তিক নিয়ন্ত্রণ ও সেন্সরশিপ আরোপ করেছে তাও উদ্বেগের। অন্যায়ভাবে সরকার খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ রেখেছে। এতে বলা হয়, আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।
একই সঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলগুলোকে অবিলম্বে গণতন্ত্র বিকশিত হওয়ার পথ নিশ্চিত করতে সরাসরি সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছি। কংগ্রেসম্যানদের মধ্যে রয়েছেন ক্ষমতাসীন দল ডেমোক্রেট ও বিরোধী দল রিপাবলিকান সদস্য। তারা হলেন- এলিয়ট ইঙ্গেল (ডেমোক্রেট), স্টিভ চ্যাবট (রিপাবলিকান), যোসেফ ক্রাউলি (ডেমোক্রেট), জর্জ হোল্ডিং (রিপাবলিকান) ও গ্রেস মেঙ (ডেমোক্রেট)।
এর মধ্যে যোসেফ ক্রাউলি মার্কিন কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককাসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও পররাষ্ট্রনীতিতে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্য থাকলেও তারা বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একমত হয়েছেন। তারা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের তীব্র নিন্দা (স্ট্রংলি কনডেমনড) জানিয়েছেন। যৌথ এক বিবৃতিতে তারা বলেছেন- গত কয়েকদিন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তার কার্যালয়ে অন্যায়ভাবে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
সরকারের সাম্প্রতিক এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই আমরা। সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা তারেক রহমানের বিবৃতি ও বক্তব্য প্রচারে আদালত যে রায় দিয়েছেন এবং অবৈধভাবে যে সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়েছে তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিরোধী দলকে লক্ষ্য করে সহিংসতাসহ দেশটির চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সহিংসতার বিষয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ এতে বাস্তব অগ্রগতি ও প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস (আইবিটি) এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা যেভাবে তালাবদ্ধ করে রেখেছে এবং সব ধরনের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তার প্রেক্ষিতে এমন বিবৃতি প্রকাশ করল যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের শক্তিশালী পররাষ্ট্র বিষয়ক ইউএস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি।
এতে স্বাক্ষর রয়েছে কমিটির চেয়ারম্যান, স্টেট সিনেটর এডওয়ার্ড রয়সে। তিনি বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শক্তিশালী, বন্ধুত্বপূর্ণ, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আইবিটি লিখেছে, শাসক দল আওয়ামী লীগ জালিয়াতি করতে পারে- এমন ভয়ে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দল গত বছর অনুষ্ঠিত যে সংসদ নির্বাচন বয়কট করেছে, তার এক বছর পূর্ণ হবার দিন পূর্বঘোষিত সমাবেশকে কেন্দ্র করে এবার পদক্ষেপ নিয়েছিল সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনে জয়লাভ করার পর থেকে বিএনপি ৫ই জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৪০% এরও কম ভোটার ওই দিন ভোট দিয়েছে। পুলিশ ও প্রতিবাদকারীদের মধ্যে সারা দেশে সহিংসতা চলছিল সেদিন। এদিকে একটি প্রাইভেট টিভি চ্যানেলে এক বিরোধী রাজনীতিকের বক্তব্য সমপ্রচারের পর, টিভি’র মালিককে পর্নোগ্রাফি প্রচারের বানোয়াট অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। একুশে টিভি নামের ওই চ্যানেলের চেয়ারম্যান আবদুস সালামকে দেশটির পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, এক নারী ২০১৪ সালের নভেম্বরে ওই চ্যানেলে তার পর্নোগ্রাফি ছবি প্রচার ও মানহানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন।
কিন্তু খালেদা জিয়ার ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য সমপ্রচারের পরই গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ নেয়া হয়। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে) একুশে টিভির চেয়ারম্যান আবদুস সালামের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে তাকে মুক্তি দিতে আহ্বান জানিয়েছে। সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর বব ডিয়েটজ বলেন, আমরা বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে ওই টিভির মালিক আবদুস সালামের মুক্তি ও চ্যানেলটি পুনরায় চালু করার আহ্বান জানাচ্ছি। এ ধরনের বানোয়াট অভিযোগ বিরোধী মতকে স্তব্ধ করে দেয়ার হাসিনা সরকারের সর্বশেষ পদক্ষেপ এবং এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ভাল লক্ষণ নয়।
আতিক/প্রবাস