কামরুল হাসান জনি
একটা সময় বাংলাদেশিরা আমিরাতে এত আচার অনুষ্ঠান বা উৎসব করতে পারতো না অথবা সুযোগের অভাবে করতো না। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে প্রবাসীদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে। হয়েছে অনেক অগ্রগতি। নিজেদের সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি আমিরাতের নানা অনুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করছে বাংলদেশ। বাংলদেশি কম্যুনিটির এই অগ্রগতি ও সফলতার জন্য সিংহভাগ দাবিদার তরুণরা। সুনিশ্চিত ভাবে বুঝাই যাচ্ছে, দিনকে দিন তাদের অংশগ্রহণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে দশ লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন! এদের অনেকেই ভাবেন দেশের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যেই বিভিন্ন বিভাগে গড়ে তুলেছেন নানা ধরনের সংগঠন। আমিরাতের সাতটি বিভাগেই বাংলাদেশিরা পরিচালনা করছেন বেশ কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। পাশাপাশি সক্রিয়তা বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলোর। ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে পালন করে যাচ্ছেন বাংলদেশের জাতীয় দিবসসহ নানা উৎসব।
তবে একটি বিষয় খুবই হতাশা জনক। বাংলাদেশিরা একত্রে বেশি দিন এক ছাদের নিচে টিকতে পারে না। একটি সংগঠনের ছায়া তলে থাকলেও নিজেদের মধ্যে গ্রুপিং আর রাজনীতিতে জড়িয়ে বিচ্ছেদ, বিভাজন থেকে শুরু হয় বিভক্তি। বিদ্রোহীরা আবার জন্ম দেয় নতুন নামে নতুন কোনো সংগঠন। কিছু দিন অতিবাহিত করে সেখানেও সৃষ্টি হয় পূর্বের মতোই একই কিচ্ছা কাহিনী! কথা সত্য, যারা নেতৃত্ব দেয় তাদের নিজস্ব কিছু চাহিদা থাকে, থাকে নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা। আবার কেউ কেউ নিজেদের জাহির করতে গিয়েও সৃষ্টি হয় ওসব ঘটনা। সহজ ভাষায় একটি কথা আছে, অপরাজনীতি চর্চা বা যেখানে সেখানে রাজনীতি প্রবেশ করলে সেখানকার শান্তি নষ্ট হয়, ভাঙ্গন ধরে সংগঠনে !
লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, প্রবাসে রাজনীতি করার কোনো নিয়ম না থাকলেও আমরা আইন ভঙ্গ করি। কারণ আমাদের পরিচয় একটাই ‘ জাতে বাঙ্গালী ‘। আমিরাতের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই আছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অঙ্গ সংগঠন আর হাতে গোনা স্বঘোষিত কিছু নেতা কর্মী। এদের কাজ কি? কি বা করছেন তারা? কতটুকু যোগ্যতা সম্পন্ন এরা? একজন সংবাদকর্মী হিসেবে হয়তো অনেক বিষয় খুব স্পষ্ট ভাবেই নজরে আসে। অনেক সময় বুঝার ক্ষমতা সম্পন্নদের বলি – ” দেশের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করুন। রাজনীতি করতে বাঁধা নেই, যদি তা হয় প্রবাসীদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে বা মানুষের কল্যাণে। শুধুমাত্র আচার অনুষ্ঠানে চেয়ার পাবার লোভে নয়, রাজনীতি করুন স্বচ্ছ।”
বস্তুতঃ প্রবাসের রাজনীতি বলতে কেবলই সংবর্ধনা, ক্রেস্ট দেয়া-নেয়া, বিভিন্ন দিবস পালনের নামে গান বাজনায় হালকা মনোরঞ্জন আর অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফটোশ্যুট করা। একটি হল রুমেই যার সীমাবদ্ধ পরিসর ! তবুও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে একে অন্যের সাংঘর্ষিক হয়ে ওঠেন তারা। সৃষ্টি হয় বিভাজন, পার্থক্য হয় মানুষে মানুষে। একদল অন্য দলের হয়ে যায় বড় মাপের দুশমন! শুধু সংগঠনের ব্যানারেই নয় দেশীয় রাজনীতির ইস্যু নিয়ে শ্রমিক ক্যাম্পগুলোতে হয় কথা কাটাকাটি, হাতাহাতি এক পর্যায়ে মারামারি এমনকি খুন-হত্যায়ও আমরা কম যাই না! অথচ প্রবাসে আমাদের সবচেয়ে বড় পরিচয় হবার কথা ‘আমরা বাংলাদেশি’। ভুলে যায়, নিজের পরিবার ও দেশের ভাগ্য বদলাতেই আমাদের এখানে আসা।
আর কত, সময় এসেছে! দল মত ভুলে সবাই ঐক্যবদ্ধ হওয়াটাই এখন অতীব জরুরী। কেননা আমরা এখানকার অভিবাসী। লক্ষ্য করুন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে আসা অভিবাসীরা কেমন ঐক্যবদ্ধ! কিভাবে তারা নিজেদের তুলে ধরছেন নিত্যদিন! তেমনি আমাদেরকেও জীবিকার পাশাপাশি ব্যক্তি স্বার্থের উর্দ্ধে থেকেই দেশের জন্যে, দেশ থেকে কর্মের সন্ধানে আসা মানুষদের জন্য ভাবতে হবে। দেশের সুনাম বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভক্তি নয়, প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ কম্যুনিটি, সহনশীল মনোভাব, পারস্পরিক সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আসুন, ঐক্যবদ্ধ হই। বিভেদ ভুলে হাতে হাত রেখে প্রত্যাশিত স্বপ্ন বাস্তবায়নে নেমে পড়ি। জানি আমরাই পারবো, দেশের কল্যাণে পরবাসে সমুন্নত রাখতে লাল-সবুজের মর্যাদা।
লেখক : প্রবাসী সাংবাদিক,
প্রতিনিধি : বাংলাদেশ প্রতিদিন