ভালবাসা ও ভালবাসা

ভালবাসা একটি শক্তিশালী শব্দ। আমি তোমাকে ভালবাসি – এই কথাতে অনেক শক্তি। অনেক ভালবাসা দিয়ে আমরা সন্তানদের লালন পালন করি যাতে ওরা মানসিকভাবে শক্তিশালী হয় এবং জীবনের প্রত্যাশিত ও অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়ে গঠনমূলকভাবে তা সমাধান করতে পারে। ভালবাসার অভাবে আত্মা মরে যায়। অনেক নিঃসন্তান মানুষ এতিমখানা থেকে বাচ্চাকে দতক নেয়। ভালবাসা দিয়ে নিজের সন্তানের মত করে তাদের লালন পালন করে। একজন এতিম যে অন্য মাবাবার কাছে বড় হয়েছে আর একজন মাবাবার কাছে বড় হওয়া শিশুর ভেতরে পার্থক্য থাকে। শিশুরা মাবাবার ভালবাসাকে “গ্রান্টেড” বা স্বাভাবিক জন্মগত অধিকার হিসাবে ভেবে নিয়ে বিকশিত হয়। অন্যদিকে এতিম খানা থেকে দত্তক নেওয়া শিশুর কাছে তার নতুন বাবামায়ের ভালবাসা – আশীর্বাদের মত অনেকের কাছে তা “করুণা” মনে হতে পারে অনেকের কাছে তা “আল্লাহ্‌র রহমত” মনে হতে পারে।
আমার মাবাবা – আমাকে তো ভালবাসবেই । যারা আমাকে দত্তক নিয়েছে তারা আমাকে ভালবাসতেও পারে অথবা না ভালবাসতে পারে।

সেদিন পত্রিকাতে পড়লাম একজন মা তার সাতজন শিশুকে হত্যা করেছে। আমি জানিনা কিভাবে করেছে। কেনো করেছে। এতগুলো বাচ্চা জন্ম দিতে অনেক সময়, শক্তি ও সম্পদের দরকার হয়েছে। নয় মাস সাতজন কে গর্ভে ধারণ করতে তেষট্টি মাস লেগেছে। সাত বার সেই বীভৎস যন্ত্রনা। মানুষের গলা কাটার মত যন্ত্রনার মত প্রসব বেদনা সহ্য করতে হয়েছে। সেই সাতজনকে বড় করতে অনেক সময় লেগেছে, অনেক ধৈর্য অনেক রাত্রি জাগরণ। জানিনা সেই মা কত রাত জেগেছে বা আদৌ জেগেছে কিনা। কিছুই জানিনা।

ফিরে আসি বাংলাদেশে। ফিরে আসি আমার শৈশবে। আমি সবার ছোট ছিলাম । সবাই আমাকে ভালবাসত। এই ভালবাসা আমি কিভাবে পরিমাপ করেছি ?? আমার অসুখের সময়ে মায়ের চোখে উৎকণ্ঠা দেখে বুঝেছি মা আমাকে ভালবাসেন। একবার আমি লেকে সাঁতার কাটছিলাম – আমি যতক্ষন লেকে ছিলাম আমার ভাই অন্যদিকে চোখ ফেরাননি। উনি হয়তো ভয় পেয়েছিলেন এই ভেবে যে আমি হয়তো ডুবে যাবো।  অথচ আমি মাছের মত সাঁতার জানি। তবু ভাইয়ের মনে ভয় – স্বাভাবিক ভয় যদি বোন ডুবে যায়। আমার ভাইয়ের মনে ভয় হবার আরো একটা কারন ছিল; তা হলো উনি নিজে ভাল সাঁতার জানতেন না। উনি ভাবছিলেন যদি আমি ডুবে যায় তাহলে উনি আমাকে বাঁচাতে পারবেন না। ভাইয়ের দায়িত্ব হলো বোনকে রক্ষা করা। উনি সেই দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সেটাই ছিল উনার উৎকণ্ঠার কারণ । লেকের পাড়ের উৎকণ্ঠিত ভাইকে দেখে আমি জেনেছি আমার ভাই আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমাকে কেউ কিছু বললে আমার আব্বা অনেক রাগ করতেন আমাকে রক্ষা করার জন্য ছুটে আসতেন। সেভাবে জেনেছি আব্বা আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমার অসুখের সময়ে আমার বোন তার স্কুল ফেলে রাতদিন আমার পাশে থেকেছেন, আমাকে সুস্থ করতে যাকিছু দরকার সব কিছু করেছেন। সেভাবেই আমি জেনেছি আমার বোন আমাকে ভালবাসেন। মা, বাবা, ভাই, বোনের ভালবাসা নিয়ে আমি বড় হয়েছি। স্বাভাবিক, সুস্থ, সুন্দর জীবন নিয়ে বড় হয়েছি। এই ভালবাসা আমাকে শক্তি যুগিয়েছে বেঁচে থাকার, পথ চলার, বিপদ থেকে উদ্ধার পাবার, ধর্য্য ও সাহসের সাথে বিপদের সময় নিজেকে শক্ত রেখে সামনে এগিয়ে চলার। ভালবাসা – জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ন উপাদান।

তারপর? তারপর আছে কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়া। কর্মক্ষেত্রে এসে আমি একজন সৎ ও কর্মঠ কর্মচারী হতে পেরেছি কারণ আমি আমার পরিবার থেকে এই সততা শিখে এসেছি। কর্মক্ষেত্রে আমি কেনো সৎ হবো? অনেকগুলো কারনেঃ

১ – যেহেতু আমি শ্রম বিক্রি করছি। শ্রমের বিনিময়ে আমাকে বেতন বা মজুরী দেওয়া হচ্ছে। আমার উপার্জন হালাল তখনই হবে যখন আমি যেকাজ করার জন্য এই কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছি সেই কাজ সততার সাথে সমাধা করবো

২ – এই মজুরীতে এই কাজ করার জন্য আমি কমিটেড অর্থাৎ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যদি আমি এই মজুরীতে কাজ নিয়ে কাজে ফাঁকি দিয়ে এই ফাকির অজুহাত হিসাবে বলি যে “এত খাটিয়ে নিচ্ছে সামান্য মজুরীর বিনিময়ে তাই ফাঁকি দিচ্ছি” তাহলে সে সিদ্ধান্ত আমার আগেই নেওয়া উচিৎ ছিল। ফাঁকির আসলে কোন অজুহাত নাই।

৩ – যদি আমি মনে করি আমাকে কম মজুরী দেওয়া হচ্ছে তাহলে আমার উচিৎ হবে অন্য কাজ খুঁজে নেওয়া, কাজ ছেড়ে দেওয়া ও কাজ ছাড়ার সময় বা পরে আগের কর্মে নিয়োগকারী সংস্থা বা মালিকের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা । কারণ ব্যবসা প্রতিষ্টানগুলো রেফারেন্স চায়।

৪ – নৈতিকভাবে যেকোন ব্যবসা প্রতিষ্টান টিকিয়ে রাখার জন্য সেই ব্যবসায়ে যারা পুঁজি বিনিয়োগ করে তাদের চাইতে সেই ব্যবসায়ে যারা শারীরিক পরিশ্রম বিনিয়োগ করে তারা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ন ।

পুঁজি ও শ্রম একে অন্যের পরিপূরক বা উৎপাদনের দুইটি গুরুত্বপূর্ন উপাদান। যদি ঠিক কাজের জন্য ঠিক শ্রমিক ঠিক শ্রম বিনিয়োগ না করে তাহলে বিনিয়োগকৃত পুঁজি মুনাফা লাভ নাও করতে পারে বা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সেজন্য মালিক ও শ্রমিক উভয়ের সঠিক মূল্যায়ন করা দরকার যাতে ব্যবসা টিকে থাকে। ব্যবসা টিকলে চাকুরী টিকবে আর চাকুরী টিকলে মুনাফা হবে আর মুনাফা হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সম্প্রসারনে স্বনির্ভর দেশ গড়ে উঠবে।

ভালবাসা যদি না থাকে তাহলে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকবেনা আর একে অন্যের সঠিক মূল্যায়ন করার মত ক্ষমতা বা অনুভূতি থাকবেনা। ভালবাসা – বন্ধনকে শক্তিশালী করে। সমাজকে শক্তিশালী করে। সুন্দর করে। নিরাপদ করে। ভালবাসা থেকে সংবেদনশীলতা আসে। সংবেদনশীলতা থেকে মানবতাবোধ। তখন নিজেকে ও অন্যকে নিরাপদ করার কথা শক্তিশালীভাবে ও গুরুত্বপূর্নভাবে ভাবনাতে আসে।

আমি যদি এটা করি তাহলে আমিও বিপদে পড়বো আমার সাথে অনেকেই বিপদে পড়বে। ড্রাইভ করতে গেলে আমার মাথা ঘুড়ে। আমি সেজন্য ড্রাইভ করিনা। অনেকেই প্রশ্ন করে ঃ তোমার গাড়ী নাই ? গাড়ী থাকা জরুরী না। আমি মরুভুমিতে বাস করিনা। আমি যেখানে বাস করি সেখানে গাড়ীর বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা আছে। আমি অনেকবার গাড়িতে চড়েছি (প্রাইভেট কার)। গাড়ী থাকা বা না থাকাতে সমস্যা হলো;

যদি আমি গাড়ী চালাতে যেয়ে মাথা ঘুরে দুর্ঘটনা করি তাহলে আমার সাথে হয়তো রাস্তায় অন্য অনেক মানুষের ক্ষতি করে ফেলতে পারি। সেজন্য আমি গাড়ি চালাই না। সেদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আমার এক ফেসবুক বন্ধু মারা গেছে। সে গাড়ীর সামনের সীটে বসে ছিল। মুখোমুখি অন্য একটি গাড়ীর সাথে দুর্ঘটনা ঘটে। আমার বন্ধুর পাশে বসা গাড়ীর ড্রাইভার সাথে সাথে মারা যায়। বন্ধুকে হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ারে নেওয়া হয়। খুব সম্ভব দুইদিন পরে সে মারা যায়।

আমি আমার নিজের জীবনকে ভালবাসি। আমি চাই আমার স্বাভাবিক মৃত্যু হোক। আমার আশে পাশের সবাইকে আমি ভালবাসি। আমি চাই তাদেরও স্বাভাবিক মৃত্যু হোক। আমি চাইনা আমার ভুলের কারণে কারু মৃত্যু হোক বা কেউ কস্ট পাক। আমি আমার আশেপাশের সবাইকে ভালবাসি। জীব, জন্তু, গাছ, পাখী, মানুষ সবাইকে ভালবাসি। বিশ্বাস করি। সবাই যে আমার মত “ভালবাসা” পেয়ে বিকশিত হয়েছে তা নয়। যারা ভালবাসাহীনভাবে বড় হয়েছে তারা ভালবাসা অনুভব করেনা। তারা ক্ষুধা অনুভব কর শুধু। জীব জন্তু ভালবাসা অনুভব করে। অনেক মানুষ ভালবাসা অনুভব করেনা।

কিছুদিন আগে আমি ভালবেসে প্রতারিত হয়েছি। এই প্রতারক ভালবাসার নিখুঁত অভিনয় করেছে। একজন মানুষ ভালবাসার অভিনয় করতে পারে কিন্তু নিজে ভালবাসতে পারেনা। এটা কিভাবে সম্ভব ? হ্যাঁ সেটা সম্ভব ।
এই প্রতারক হয়তো তার বাপকে দেখেছে মানুষ জবাই করতে বা মানুষকে প্রতারিত করতে বা মানুষের টাকা চুরি করতে বা দুর্নীতি করতে। সেখান থেকেই সে “প্রতারণা” করতে শিখেছে। ভালবাসার অভিনয় এই প্রতারকের কাছে একটা যন্ত্রের মত। নরম যন্ত্র । বা নরম হাতিয়ার।  বা সফট ওয়েপন Soft Weapon মানুষ যন্ত্র ব্যবহার করে কাটার জন্য। যেমন গাছ কাটা হয় আসবাব বানাবার জন্য। অথচ গাছ কি সুন্দর। সেই গাছ কেটে টুকরো টুকরো করা হয় আসবাব বানাবার জন্য। অনেক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্য একটি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হলো গাছ কাটা। বাজারে আসবাবারে চাহিদা আছে। গাছের উপরে মানুষ বসতে বা ঘুমাতে পারেনা। এই গাছ কাটার জন্য করাতের দরকার হয়। কেউ ইচ্ছা করলেই গাছ থেকে আসবাব বের হয়ে আসবেনা। নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে এই গাছকে যেতে হবে তারপর এই গাছ আসবাব হবে তারপর বাজারে বিক্রি হবে তারপর ক্রেতারা বা ভোক্তারা তা কিনে ব্যবহার করবে। এই প্রতারকের কাছে আমি ছিলাম একটি “গাছ”, ভালবাসার অভিনয় হলো ‘করাত” ; এই করাত দিয়ে বা ভালবাসার অভিনয় করে আমাকে কেটে সে আমাকে দিয়ে ঋন করিয়ে সেই টাকা নিয়ে পালিয়েছে।

কেনো ? সে পরিশ্রম করে টাকা আয় করতে পারতো। কোন মহিলার সাথে প্রেমের অভিনয় করে সেই মহিলাকে দিয়া ঋন করিয়ে সেই টাকা মেরে দেবার কোন দরকার ছিলনা । এই প্রতারকের জন্য যেহেতু একজন মানুষ সামান্য একটা “গাছ” তাই এই “গাছ” কে প্রেমের অভিনয় “করাত” দিয়ে কেটে টুকরো করে ফেলতে এই প্রতারকের কোন কস্ট হয়নি। যে পরিবেশে এই প্রতারক জন্মেছে সেই পরিবেশে প্রতিদিন মানুষকে প্রতারণা করা হয়। মানুষের কাছ থেকে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে মানুষকে পথের ভিখারী বানানো হয় । সে মাবাবাকে দেখেছে এইভাবেই মানুষের টাকা মেরে দিতে। প্রতারক সেটাই শিখেছে। সেটাই করেছে। সৎভাবে টাকা উপার্জনের কথা সে চিন্তা করতে পারেনা। যেহেতু তার পরিবারের কারুকে সে সৎভাবে উপার্জন করতে দ্যাখেনি। কিন্তু সৎভাবে উপার্জিত টাকা চুরি করতে প্রতারকের কোন সমস্যা হয়না। এই প্রতারকের বাপ তার এলাকার গৃহকর্মীদের উপরে যৌন নিপীড়নের মাধ্যমে ভোগ করে থাকে। বাংলাদেশের সমাজে গৃহকর্মীরা অরক্ষিত, অনিরাপদ, নিপীড়িত ও নির্যাতিত।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। যারা দেশকে ভালবাসেনি তারা নিজেকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল বা দেশে থেকেই শত্রুদের সাথে হাত মিলিয়েছিল যারা দেশকে ভালবেসেছিল তারা শত্রুদের হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। “ভালবাসা” না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ হতোনা। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারা দেশকে ভালবাসেনি । যাদের ভেতরে “ভালবাসা” অনুপস্থিত পরবর্তীকালে তারা দেশ শাসন করে ফলে বাংলাদেশ থেকে “ভালবাসা” ও দেশপ্রেম দেশান্তরী হয়ে যায়। যে সমাজে মানুষ মানুষকে ভালবাসেনা সে সমাজে হাজার হাজার মানুষকে গুলি করে মেরে ফেললেও অন্যান্য মানুষেরা কেউ কিছু বলেনা। সবাই চুপচাপ দ্যাখে। ভুলে যায়। কারণ সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের হৃদয়ে “ভালবাসা” অনুপস্থিত।

কিছু মানুষকে দেখা গেছে মানুষের মৃত্যু কামনা করে নেচে নেচে গান গেয়ে হৈ হুল্লোড় করে “ফাঁসী” চায় – “জবাই করার” দাবী জানাতে। সেই ঘটনা থেকেও জানা যায় যে বাংলাদেশে ভালবাসা অনুপস্থিত। ১৯৭১ সালের নয় মাস সম্পর্কে যাদের কোন ধারনা নাই তারা প্রতিদিন বাংলাদেশে গনহত্যা দ্যাখে। যারা প্রতিদিন গনহত্যা দ্যাখে তারা শুধু ১৯৭১ সালের গনহত্যার দুঃখে কাঁদে । বেশী কান্না করার ফলে এর পরের বছরগুলোর গনহত্যার জন্য ওদের চোখে অশ্রুর ব্যাপক ক্রাইসিস বা ঘাটতি দেখা দেয়। অশ্রুর ঘাটতিকে সম্ভবত খরা বলে। ফলে বাদবাকী ৪৩ বছরের গনহত্যার জন্য কান্নাকাটি করার পাবলিক নাই। ফলে ১৯৭১ এর পরের সকল গনহত্যা সবার কাছে একটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছে। আমি যাদের পছন্দ করিনা বা যাদের মতবাদ বা জীবন যাত্রার স্টাইল আমার পছন্দ নয় আমি তাদের সংগ পরিহার করতে পারি, আমি তাদের অনুসরণ না করতে পারি, কিন্তু আমি কি তাদের মৃত্যু কামনা করতে পারি??

আমি তাদের মৃত্যু কামনা করতে পারিনা। জাতীয় পর্যায়ে এক বিশাল জনসমাবেশে আমি বলতে পারিনা এক কল্পিত শ্রেনীর ফাঁসী চাই যেহেতু আমাকে কিছু টাকা দেওয়া হয়েছে সেটা বলার জন্য। একটা সমাজে যদি ” মানুষ  ধরে ধরে জবাই” করাকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে চালু করা যায় তাহলে আমি নিজেও একদিন জবাই হয়ে যেতে পারি কারণ এইটাকে আমি স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে চালু করার দাবী জানিয়েছি এবং আমার দাবীর কারনেই মানুষ জবাই একটি স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে সমাজে প্রতিষ্টিত হয়েছে। আমার ভাইকে বা বোনকে বা মাকে বা বাবাকেও জবাই করে ফেলতে পারে কারণ আমি চেয়েছি “আর কোন কথা নাই – অমুকের ফাঁসী চাই” অথবা “ধইরা ধইরা জবাই করো “ তবু এই দাবী করতে দেখা গেছে। ড্রাগস এর প্রভাবে প্রভাবান্বিত হয়ে বা অন্তরে “কসাই” বসবাস করার কারণে বা “ভালবাসা” অনুপস্থিত থাকার কারণে।

সমাজ তো পুকুরের মত। বাতাস ছাড়া আর কোনভাবেই এই পানি নড়াচড়া করেনা। পাতাল থেকে পুকুরের পানি আসে আর এই পানি যেহেতু পাতালের সাথে সংযোজিত কিন্তু অন্য কোন নদী বা খালের সাথে সংযোগ নাই তাই পুকুরের পানি বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া খুব ধীর। পুকুরের এক কিনারায় বিষ মেশালে পুরা পুকুরের পানিই বিষাক্ত হয়ে যায়। এই বিষ ক্ষয় হতে অনেক সময় লাগে। সেই সময়ে অনেকেই এই পুকুরের পানি ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সমাজের এক অঞ্চলে যদি একদল লোকে পিটিয়ে মেরে ফেলা, জবাই, গনহত্যা, চুরি, ডাকাতি, ধর্ষন ও দুর্নীতিকে অনুমোদন করে তাহলে সাড়া সমাজে সেটা স্বাভাবিক ঘটনা হিসাবে চালু হয়ে যাবে। গেছে। পাকিস্তানের শিশুদের গুলি করে মেরে ফেললে বাংলাদেশের মুসলমানেরা আকুল কান্নাতে ভেঙ্গে পড়ে। বাংলাদেশের আলেমদের হত্যা করা হলে বাংলাদেশের মানুষের চোখে খরা নামে। বাংলাদেশের বুকে “ভালবাসা” এখন করাত বা গাছ কাটার যন্ত্র। সেজন্য ভালবাসার অভিনয় করে টাকা কামায় করে প্রতারকেরা। ভালবাসতে পারেনা। ভালবাসা এখন এক হাতিয়ার – সফট ওয়েপন। ভালবাসাহীন বাংলাদেশের মানুষেরা যন্ত্রের মত বেঁচে থাকে। ওরা ভালবাসার অভিনয় করতে পারে অথচ ভালবাসতে পারেনা। ভালবাসা এক করাতের মত। গাছ কাটা করাত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *