বক্স অফিস হিট পি’কে

পিকে আয়া হ্যায় । পিকে মানে পান করে। সরাব (মদ) পান করা মাতাল। কাহিনীর শুরু হয় এইভাবে। অন্য এক গ্রহ থেকে উলংগ আমীর খান আসে। সেই গ্রহে ফিরে যাবার জন্য তার গলায় একটা সবুজ উজ্বল লকেট ছাড়া শরীরে কিছুই ছিল না। ভারতের রাজস্থানের কোন এক রেল লাইনের কাছে আমীর খান ল্যান্ড করে। সেখানে এক লোক এসে তার গলার সেই উজ্বল সবুজ লকেট ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আমীর খান লকেট বাঁচাতে যেয়ে ছিনতায়কারীর গলায় ঝুলানো ক্যাসেট প্লেয়ার/রেকর্ডার/রেডিও হাতে এসে যায়। আমীর খানের সব মুভিতে একটি শক্তিশালি ও গঠনমূলক বক্তব্য থাকে। পি’কে মুভিতেও একটি বক্তব্য আছে। তাহলো — সৃষ্টিকর্তা ও সৃষ্টিকর্তার বানানো সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা্র মাঝে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা।

মানুষের মনগড়া সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি করা হয়েছে ব্যবসার জন্য। মানুষের বিশ্বাসকে পূঁজি করে অনেকেই ধর্ম ব্যবসা করে । মানুষের আবেগকে পূঁজি করে মুনাফা করে। সমাজে যারা অন্ধভাবে এইসব ভন্ড প্রতারক ধর্ম ব্যবসায়ীদের অনুসরণ করে, বিশ্বাস করে তাদের চোখ খুলে দেওয়াই হচ্ছে এই “পী’কের মুভির উদ্দেশ্য।

ছিনতায় হয়ে যাওয়া এই উজ্বল সবুজ লকেটের খোঁজে আমীর খান ছিনতায়কারীর ক্যাসেট প্লেয়ার গলায় ঝুলিয়ে দৌড়াতে থাকে। একটি ট্রাকের সাথে একসিডেন্ট করে। ট্রাক ড্রাইভার তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। আমীর খান অর্থাৎ পিকে তখনও কথা বলা শেখেনি। ডাক্তারকে কোন জবাব দিতে পারেনা সে ফলে ডাক্তার মনে করে যে ট্রাকের সাথে একসিডেন্ট হবার ফলে আমীর খান স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ট্রাক ড্রাইভার নিজেকে অপরাধী মনে করে। সেজন্য আমীর খানকে সাথে রাখে। চকচকে কোন জিনিষ দেখলেই আমীর খান তা ভালভাবে দেখতে চায় ভাবে সেখানেই তার উজ্বল সবুজ লকেটটি লুকানো আছে। মেয়েদের শরীরের অলংকার দেখলেই সে ছুটে যায়। হাত ধরে দেখতে চায়। মেয়েরা বা মেয়েদের সাথে তাদের স্বামী ব্যাপারটা বুঝতে পারেনা। স্বাভাবিক কারনেই তারা আমীর খানকে লুচ্চা বা লম্পট মনে করে প্রহার করতে উদ্যোত হয়। ট্রাক ড্রাইভার মনে করে আমীর খান মেয়েদের সংগ পেতে চায়। তখন ট্রাক ড্রাইভার আমীর খানকে যৌনপল্লীতে নিয়া যায়। সেখানে যেয়ে একজন যৌনকর্মির দুই হাত ধরে আমীর খান সেই অঞ্চলের ভাষাকে নিজের ভেতরে ট্রান্সফার করে। যৌনকর্মী ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখতে পায় আমীর খান তার দুই হাত ধরে রেখেছে। আমীর খান মেয়েটিকে সিসটার ডাকলে মেয়েটি আমীর খানকে একটি থাপ্পড় দিয়ে বলে সিসটার হোগী তোর মাদার সেখান থেক আমীর খান বেড়িয়ে এলে কথা বলা শুরু করে। ট্রাক ড্রাইভার ভাবে আমীর খানের স্মৃতিশক্তি ফিরে পেতে এই যৌনকর্মী সহায়তা করেছে। তখন আমীর খান তার লকেট ছিনতায় হয়ে যাবার কথা ট্রাক ড্রাইভারকে জানায় ।

ট্রাক ড্রাইভাব বলে ছিনতায় হয়ে যাওয়া সব কিছুই দিল্লীতে বিক্রি হয়। তখন আমীর খান দিল্লীতে আসে এই লকেটের খোজে। এই লকেট ছাড়া সে তার গ্রহে ফিরে যেতে পারবেনা । লকেট খুজতে খুজতে রাজস্থান থেকে সে দিল্লীতে আসে। লক্ষ্য করে বিভিন্ন লোকের পড়নে বিভিন্ন ধরনের পোষাক । টাকার ব্যবহার। বিচার ব্যবস্থা। ধর্ম ব্যবসা। আইন শৃংখলারক্ষাকারীর বাহিনীর প্রচলিত রীতিনীতি । আর সমাজে শ্রেনীবিন্যাস। সত্য ও মিথ্যার মাঝে ভাসমান মানুষ। সমাজে মানুষের আবেগ নিয়া ধর্ম ব্যবসায়ীদের ধোঁকা, প্রতারণা খেলাধুলার মাধ্যমে মুনাফা অর্জন ও আরাম আয়েস। এই সময় জগগুর সাথে দেখা হয় আমীর খানের। জগগূ একজন টিভি সাংবাদিক। জগগু যখন বিদেশে ছিল তখন সরফরাজ নামের একটি পাকিস্তানী ছেলের সাথে তার প্রেম হয়। এই কথা জানতে পেরে জগগুর পিতার গুরুজী এক ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী বলে— পাকিস্তানী ছেলে তোমার মেয়েকে বিয়ে করবেনা। ছেড়ে চলে যাবে। সরফরাজকে জগগু বিয়ে করতে বলে। ম্যারেজ রেজিস্টার অফিসে ওরা প্রেরকের নামবিহীন একটি চিঠির কারণে একজন অন্যজনকে ভুল বুঝে। বিয়ে হয়না। দুইজনে দুইজনের দেশে ফিরে যায়। জগগুর পিতার গুরুজী ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী সঠিক বলে বিবেচিত হয়। একসময় পিকে এই ধর্ম ব্যবসায়ীর কাছেই তার উজ্বল সবুজ লকেটটি দেখতে পায়। ধর্ম ব্যবসায়ী সবাইকে বলে যে এই লকেটটি সে ভগবানের কাছ থেকে পেয়েছে। এই লকেটের মাধ্যমে ভগবান তাকে মন্দির স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে। সেজন্য সে সমাজের বিভিন্ন মানূষের কাছ থেকে টাকা আদায় করছে। রাজস্থানের সেই ট্রাক ড্রাইভার আমীর খানকে জানায় যে সে লকেট ছিনতাইকারীকে খুঁজে পেয়েছে এবং এই লকেটটি ৪০,০০০ রুপির বিনিময়ে এই ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ীকে বিক্রি করেছে। ছিনতাইকারীকে নিয়ে ট্রাক ড্রাইভার দিল্লী পৌছায়।

ট্রেন স্টেশনে আসতেই সন্ত্রাসীর বোমাতে ট্রেন উড়ে যায় আর সেই ট্রাক ড্রাইভার ও সেই ছিনতাইকারী দুইজনেই বোমার আঘাতে নিহত হয় এবং উজ্বল সবুজ লকেট বিক্রির প্রমান নিশ্চিন্ন হয়ে যায়। পরে আমীর খান জগগুর কাছে তার বিয়ের ঘটনা জানতে চায়। পাকিস্তানে সরফরাজকে ফোন করে জানতে পারে যে সরফরাজ বিয়ে করতে আসে কিন্তু জগগু তখন সেখানে ছিলনা। সেখানে সেই চিঠীটি পায় সে এবং সেটা পড়ার পরে সে পাকিস্তানে ফিরে যায়। এইভাবে ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ীর প্রেডিকশন বা ভবিষ্যতবানী মিথ্যা প্রমানিত হয়। আমীর খান উজ্বল সবুজ লকেট ফিরে পায় এবং তার গ্রহে ফিরে যায়।

যাবার আগে আমীর খান ভারতের সকল নাগরিকের কাছে বলে যায় যে সৃষ্টিকর্তা একজনই যে সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁকে যে নামেই ডাকা হোক না কেনো তাঁকে আলাদা আলাদা যত রকমের পোষাকই পড়ানো হোক না কেনো, তাঁকে যত ভিন্ন ভিন্ন মেকাপ দিয়া সাজানো হোক না কেনো, সে এক এবং অদ্বিতীয় থেকে যাবে। ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ীরা সৃষ্টিকর্তাকে বিভিন্ন নামে ডেকে, মানুষের ভেতরে বিভেদ সৃষ্টি করে মানুষের আবেগ নিয়া খেলা করে মুনাফা অর্জন করে। সৃষ্টিকর্তা একজন। যিনি এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। আর এই বিশ্বের সকল প্রানীকে সৃষ্টি করেছেন। আমরা যদি সৃষ্টিকর্তাকে ভালবাসি তাহলে তার সৃষ্টিকে ভালবাসবো। শ্রদ্ধা করবো। একে অন্যের যত্ন নেবো । একে অন্যকে রক্ষা করার জন্য পাশে এসে দাঁড়াবো তাহলেই আমরা এঁকে অন্যকে রক্ষা করতে পারবো। একজন মানুষ অসুস্থ হলে তাঁকে সেবা করার জন্য দরকার তার প্রিয়জনের পাশে থাকা। বাইরের একজন ভন্ড ধর্ম ব্যবসায়ী তাঁকে কিভাবে সুস্থ করবে? পৃথিবীতে এমন অনেক রোগ আছে যার কোন ওষুধ নাই। এমন অনেক রোগ আছে যা আপনজনের সেবাতে ভাল হয়ে যায় । এমন অনেক রোগ আছে যা আপনজনের ভালবাসা ও সেবাতে নিয়ন্ত্রনে থাকে। ভালবাসার চাইতে ভাল ওষুধ এখনও আবিস্কার হয়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.