সংযুক্ত আরব আমিরাতে আশির দশকেও বাংলা পত্রিকা পড়ার মতো লোকজন ছিল। ছিলো বাংলা ভাষীদের লেখালেখির চর্চা। তখন গুটি কয়েকজন লেখক লিখতেনও বাংলদেশ থেকে প্রকাশিত কিছু সাপ্তাহিক এ। সে সময় পাকিস্তানি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ‘ মালেক নিউজ এজেন্সি’র মাধ্যমে আমিরাতে বিভাগীয় শহরগুলোতে পাওয়া যেতো সেসব বাংলা পত্রিকা। সংবাদ বা সাংবাদিকতার বিবেচনা না থাকলেও প্রবাসীদের সুখ দুঃখ তুলে ধরা মানুষদের বেশ কদর ছিলো। একটা সময় পেরিয়ে বাংলদেশ থেকে দৈনিক পত্রিকাগুলো (প্রকাশের দুই দিন পর) আসা শুরু হলো। বাংলদেশি মালিকানাধীন আবু নাছেরের ‘ ইত্তেফাক নিউজ এজেন্সি ‘ প্রবাসীদের বাংলােদশ থেকে প্রকাশিত পত্রিকা পড়ার সুযোগ আরও সহজ করে দেয়। একই সাথে আমিরাতেও বেশকিছু বাংলা পত্রিকার অনিয়মিত প্রকাশনা আরও কিছু লেখক ও সংবাদ প্রেরক তৈরি করে। অনেকেই হয়েছেন নামকাওস্তার সাংবাদিক! সৃষ্টি হয়েছে প্রবাসী সাংবাদিকদের সংগঠন ( প্রসাস)। এতে করে বেড়েছে বাংলা পত্রিকার প্রতি প্রবাসীদের আগ্রহ। এরপর হালের পরিরর্তন। উন্নত প্রযুক্তির কল্যাণে প্রবাসীরা অনলাইনের মাধ্যমে পড়ছেন দৈনিক পত্রিকা। দিনের খবর দিনে পাওয়ায় প্রবাসে যেমন বেড়েছে পাঠক, তেমনি বেড়েছে ওসব খবর পৌঁছানোর কর্মী সংখ্যা। বলতে গেলে প্রবাসে সাংবাদিকতার এখন যৌবন কাল।
প্রারম্ভিক কথাগুলো মূলকথার যোগসূত্র। মূল কথায় আসতে সহজ হবে ভেবেই উপরোক্ত ইতিহাস টেনে আনা। কারণ যৌবনের থাকে অনেক প্রশ্ন-জিজ্ঞাসা! শ্রদ্ধেয় হারুনুর রশীদের (হারুন ভাই) আমিরাত ছেড়ে বাংলদেশে চলে যাবার খবর পেয়েই প্রথমেই হতাশ হলাম। এতো কাছাকাছি থেকেও এমন একটি খবর না পাওয়া সত্যিই দুঃখজনক। যাক, তবুও তিনি চলে যাবেন এটাই বাস্তবতা।
তার বিদায়ের প্রাক্কালে কিছু কথা জানাতে ও একটি প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছে হলো। তাই লিখতে বসা। তার আগে একটু করেই বলি, 2013 সালের 29 আগষ্ট প্রথম দেখা হয় হারুন ভাইয়ের সাথে। এরপর বিভিন্ন স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা হতো। না জানা অনেক বিষয় জেনেছি তার থেকে। অনেক সময় আড্ডা দিয়েছি তার সম্পাদিত মাসিক পত্রিকা বাংলা এক্সপ্রেস এর কার্যালয়ে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, আমিরাতে বাংলদেশ থেকে প্রকাশিত কোনো জাতীয় দৈনিক পত্রিকা হিসেবে ‘ বাংলদেশ প্রতিদিন ‘ এর বর্ষপূর্তির যে আয়োজন করেছি, হয়তো হারুন ভাইয়ের সহযোগিতা ছাড়া তা করা সম্ভব হতো না! একটি সফল অনুষ্ঠানের জন্য অনেক খেটেছেন তিনি। সব মিলিয়ে একজন অভিভাবক হিসেবে আমার পাশে পাওয়া মানুষটিকে জানিনা সেদিন কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলাম কিনা! তবে আজ আবার কৃতজ্ঞতা শিকার করছি।
এবার আসি মূল কথায়, আমিরাত প্রবাসী সংবাদকর্মীদের এক জায়গায় মিলিত করার জন্য সর্বপ্রথম ‘প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস)’ নামের সংগঠনটি জন্ম হয় নুরুল আবসার তৈয়বী’র হাত ধরে। আশি-নব্বই দশকের কথা। তখন তৈয়বী প্রবাসের আলো নামে আমিরাতে একটি পত্রিকা বের করতেন। এরপর কালক্রেম অনেক কমিটির হাত ঘুরে প্রসাস দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। একপক্ষের সভাপতি হন ‘আজকের সূর্যোদয়’র তখনকার প্রতিনিধি রফিকুল আলম। আর অন্যপক্ষের সভাপতি আমিরাত থেকে প্রকাশিত পত্রিকা ‘বাংলা এক্সপ্রেস’ সম্পাদক হারুনুর রশীদ। অবশ্য এর আগে তিনি ‘বাংলদেশ সংলাপ’ নামে একটি পত্রিকা বের করেছিলেন। রেজিস্ট্রেশন না পাওয়া সেটি বন্ধ হয়ে যায়। সে সময়কার কিছু লেখক ও সাংবাদিক নিজেদের প্রচেষ্টায় প্রসাসের দুটি পক্ষকে অনেক কষ্টে এক করতে পেরেছিলেন। এদের মধ্যে মনছুর নাদিম ভাইয়ের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করার মতো। দুটি পক্ষ এক হয়ে নতুন কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পান শিবলী আল সাদিক। অনেকটা পর্দার আড়ালে চলে যান দু ‘পক্ষকে এক করার কারিগররা ও সাবেক দুই সভাপতি।
শিবলী’র নেতৃত্বে প্রসাস চলে তিন বছরের মতো। পুনরায় যল্পনা কল্পনা শুরু হয়। অবশেষে 2014 সালের শেষের দিকে করা হয় প্রসাসের একটি আহ্বায়ক কমিটি। সর্বসম্মতিক্রমে আহ্বায়ক এর দায়িত্ব পান সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ।
তিন মাসের মধ্যে নতুন কমিটির নির্বাচন হবার কথা ছিলো। তিন মাস ঠিক পেরুলো, এলো 2015 সাল। কোন অগ্রগতি ছাড়াই কি তবে হারুন ভাইয়ের বিদায়! এভাবেই তাকে বিদায় দিতে হবে! সদ্য সদস্য হওয়া তরুণকর্মী হিসেবেই বহুদিনের একটাই আর্জি ছিলো। অকার্যকর প্রসাসের নাম বিশেষ পদবী নয়, চেয়েছিলাম কর্মদক্ষ সংগঠক ও কার্যকর পরিষদ বিশিষ্ট একটি কমিটি । বিদায় বেলা প্রশ্নটি করতেই হলো -হারুন ভাই, প্রসাসকে কার হাতে দিয়ে গেলেন?
অবশেষে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি, চলার পথে অনেক ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। ছোট হিসেবে ক্ষমা করে দেবেন। যেখানেই যান সুস্থ থাকুন, হাসি আনন্দে কাটুক আপনার আগামী। শুভ কামনা রইলো সতত।
কামরুল হাসান জনি
লেখক : সাংবাদিক