ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন পাম্প

ডা. শাহাজাদা সেলিম

ডায়াবেটিস রোগটি হয় প্রধানত ইনসুলিনের ঘাটতির কারণে। ১৯২১ সালে আবিষ্কৃত ও ১৯২২ সালে ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন মাত্রায় ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ইনসুলিন ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত যেসব ইনসুলিন পাওয়া যাচ্ছে তা সবই ইনজেকশন হিসেবে চামড়ার নিচে নিতে হয়। দিনে একবার থেকে শুরু করে ৪-৫ বার ইনসুলিন সুইয়ের মাধ্যমে (সিরিঞ্জ বা কলম) গ্রহণ করা প্রয়োজন হতে পারে। ব্যাপারটি আগে অনেক বেশি বেদনাদায়ক ছিল; বর্তমানে ব্যথা কম হলেও কারও কারও জন্য ব্যাপারটি যন্ত্রণাদায়ক। ডায়াবেটিসের চিকিৎসার অন্যান্য আঙ্গিকের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ইনসুলিনের সিরিঞ্জ-কলমেরও উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তবুও এর হাত থেকে দীর্ঘদিন ধরে রেহাই পাওয়ার স্বপ্ন কোটি কোটি ডায়াবেটিস রোগীর। আধুনিক ইনসুলিন পাম্প এই স্বপ্নকে কিছুটা হলেও সফল করতে পেরেছে। ইনসুলিন পাম্প হলো মোবাইল সেটের মতো একটি যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত প্রোব। যন্ত্রটিতে ইনসুলিন রাখার একটি কার্টিসের মতো যাতে দ্রুত কাজ করতে পারে (রেপিড বা শর্ট অ্যাক্টিং) এমন ইনসুলিন রাখা হয়। এ ইনসুলিন যন্ত্রটিতে কম্পিউরাইজড পদ্ধতিতে নির্ধারিত পরিমাণে বিরতিহীনভাবে প্রোবের মাধ্যমে চামড়ার নিচের চর্বিতে পৌঁছতে থাকে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই এটি চলতে থাকে। খাদ্য গ্রহণের পর যখন রক্তের গ্লুকোজ বেড়ে যায়, তার আগে এ পাম্পটি এ গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত ইনসুলিন সরবরাহের জন্য সেট করা হয়। অতএব, ইনসুলিন পাম্প একই সঙ্গে আহারের আগে ও আহারের পরের রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করতে পুরোপুরি সক্ষম। এ পাম্প ব্যবহারের জন্য প্রতিবার (১-৪-৫ বার) প্রতিবার চামড়ার নিচে সুচ প্রবেশ করাতে হয় না। শুধু তাই নয়, অন্য বিভিন্ন রকম ইনসুলিন দিয়ে যতটুকু রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব পাম্পের মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি দক্ষতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যে সব রোগীর রক্তের গ্লুকোজ খুব বেশি উঠানামা করে তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ পদ্ধতি। অন্য অনেক ডায়াবেটিক রোগী, যাদের ডায়াবেটিসের কন্ট্রোল কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নেই, তাদের জন্যও এটি একটি চিকিৎসা পদ্ধতি। একই সঙ্গে যাদের নিজে থেকে প্রতিবার ইনসুলিন নেওয়ার শারীরিক বা মানসিক অবস্থা নেই, তাদের জন্যও একটি ভালো বিকল্প হতে পারে এটি। একটু ব্যয়বহুল হলেও পদ্ধতিটি যথেষ্ট কার্যকর।

ইনসুলিন পাম্প একই সঙ্গে প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর রক্তের গ্লুকোজ রেকর্ড করতে থাকে; যাকে কনটিনিউয়াস গ্লুকোজ মনিটরিং সিস্টেম, যা প্রতি মুহূর্তের শর্করা পরিমাপ বলা হয়ে থাকে। এই যন্ত্র অগ্ন্যাশয়ের মতোই রক্তে শর্করার উঠানামা মেপে কী পরিমাণ ইনসুলিন দরকার তা জানিয়ে দেবে ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সেই পরিমাণ ইনসুলিন দেহে ঢুকিয়ে দেবে।সিজিএম ও ইনসুলিন পাম্প ইনসুলিন ব্যবহারকারীদের দীর্ঘদিনের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করতে সক্ষম হয়েছে। আর সর্বাধুনিক এই চিকিৎসাপদ্ধতি আমাদের দেশেও পাওয়া যায়। তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে এটা নিতে হবে।

লেখক : ডায়াবেটিস ও হরমোন বিশেষজ্ঞ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *