মালয়েশিয়ায় খাবারে বন্ধুত্বের নিমন্ত্রণ আযনূরায়

বুকিত বিনতাংয়ে এখন বেশ সরগরম রেস্টুরেন্ট আযনূরা। জালান চানকাতে অন্য যে কোন দেশীয় রেস্টুরেন্টের তুলনায় এটি বেশ ফিটফাট। মালয়েশিয়ার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র বুকিত বিনতাং। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকরা এখানে এসে পান খাঁটি বাংলাদেশি খাবারের স্বাদ।

বুকিত বিনতাংয়ে পর্যটকদের বাংলাদেশি খাবারের নিমন্ত্রণ জানানো রেস্টুরেন্ট আযনূরার মালিক দুই বাংলাদেশি তরুণের বন্ধুত্ব দীর্ঘদিনের।

মহসীন করিম বাদল স্টুডেন্ট ভিসায় ২০০৭ সালে প্রথম আসেন মালয়েশিয়ায়। তবে পড়াশোনার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি। আয় করে পড়াশোনা চালানো মালয়েশিয়াতে চাট্টিখানি কথা নয়। তাই পড়াশোনাকে বাক্সবন্দী করে চাকরিতে নেমে পড়েন ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার বাদল। কেএলসিসি’তে অবস্থিত চায়নিজ রেস্টুরেন্ট ‘অন দ্যা পার্কে’ ৩ বছর চাকরি করেন তিনি। সেখানে পরিচয় হয় লক্ষ্মীপুরের ছেলে নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। নূরের ইতিহাসও একই। এফটিএমএস কলেজে পড়াশোনা করতে এসে চাকরি শুরু করা। শুরু হয় দুজনের বন্ধুত্বের। দুজনেই অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসার খুটিনাটি বিষয়ে।

এরপর রেস্টুরেন্টের চাকরি ছেড়ে বুকিত বিনতাংয়ে ছোটোখাটো ব্যবসা শুরু করেন বাদল। তবে সেটা জমাতে ব্যর্থ হন তিনি। দেড় বছরের মতো এ ব্যবসা করে ব্যবসা ছেড়ে দেন বাদল। পরে নূর মোহাম্মদের সঙ্গে মিলে চলতি বছরের ২৩ মে শুরু করেন আযনূরার যাত্রা।

বাদল জানান, জালান চানকাতের এই স্থানে একুশে নামের আরও একটি বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট ছিলো। তবে এটি চলছিলো খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় একুশের ব্যর্থতা সহ আরও ব্যর্থতার কাহিনী দুই বন্ধুকে পেছনে ঠেলে দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু নতুন জায়গা নয়,  বুকিত বিনতাংয়েই ব্যবসাকে সফল করার জিদ চাপে দুই বন্ধু্র।

ভাড়া নেন একুশে রেস্টুরেন্টের জায়গাটিকেই। আগের পরিবেশ আমূলে পরিবর্তন করে, নতুন করে সংস্কার করে চালু করেন আযনূরা।

বাদল জানান, আযনূরায় বাংলাদেশি খাবারই মূখ্য। অার গ্রাহকদের চাহিদাও বাংলাদেশি খাবারে বেশি। ভিনদেশীরাও এসে বাংলাদেশি খোঁজেন। কারণ পর্যটকদের মধ্যে বিভিন্ন দেশীয় খাবারের স্বাদ নেয়ার আগ্রহ থাকে। আমরা সেটা পূরণের চেষ্টা করি।

অপর মালিক নূর মোহাম্মদ বলেন, গ্রাহকদের মানসম্মত ও দেশীয় খাবারের সত্যিকারের স্বাদ দেয়ার জন্যে ঢাকা থেকে অভিজ্ঞ বাবুর্চি নিয়ে আসা হয়েছে আযনূরাতে।

কিছুদিনের মধ্যেই আইসক্রীমের বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ফেমাসও পাওয়া যাবে আযনূরাতে, জানান দুই বন্ধু।

পর্যটক এলাকা বুকিত বিনতাংয়ে ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এই রেস্টুরেন্ট। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তের পর্যটকরা আযনূরাতে পাবেন বাংলাদেশের তেহারী, খিচুড়ি, কালাভুনার স্বাদ। তবে চাপাতি, পরোটার পাশাপাশি এখানে নান রুটি আর আর মাংসটাই বেশি চলে বলে জানান বাদল।

দেশী সব মাছই পাওয়া যায় আযনূরা। ইলিশ, রুই, কই থেকে শুরু করে বাইন মাছও রয়েছে। ভোজনরসিকদের জন্যে রয়েছে হরেক রকমের ভর্তার পদও।

আলু ভর্তা তো রয়েছেই সঙ্গে বেগুন, বড়বটি, শুটকি, পুঁই শাক, কচুর ভর্তাও পাওয়া যাবে। আর বাংলাদেশি মৌসুমী সব্জির ভর্তাতো হয়ই।

বর্তমানে রেস্টুরেন্টটিতে সব মিলিয়ে দেশী বিদেশি ২০ জন কর্মচারী কাজ করছেন। রান্নায় যে বেশ গুরুত্ব দিচ্ছেন মালিকরা তা বোঝানোর জন্যেই বললেন, শুধু রান্না ঘরেই কাজ করছেন ১০ জন।

মালয়েশিয়ায় যে কোনো রেস্টুরেন্টে ধুমপানটা খুব স্বাভাবিক। তবে সব ধরনের গ্রাহকের জন্যে উপযুক্ত করতে ধূমপান মুক্ত জায়গাও রাখা হয়েছে আযনূরাতে। রেস্টুরেন্টের প্রথম ভাগ ধুমপায়ীদের জন্যে। আর ভেতরে কাচ ঘেরা রুমটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।

নূর মোহাম্মদ বলেন, আমরা মালয়েশিয়াতে বাংলাদেশি খাবারের মান বোঝাতে চাই। বাংলাদেশি সংস্কৃতির অন্যতম অংশ খাবার। আর সেই খাবার বাংলাদেশিদের পরিচয় করিয়ে দেয় পুরো বিশ্বে।

তিনি বলেন, যেহেতু আগেও রেস্টুরেন্টে কাজ করেছি, তাই নিজেরাও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করারই সিদ্ধান্ত নেই। এখানে বাংলাদেশকেই পরিচিত করে তোলার চেষ্টা করেন দু’বন্ধু।

নিজেদের সংকেল্পের বিষয়ে স্পষ্ট দু’জনেই। এক সঙ্গেই বললেন, মালয়েশিয়াতে আমরা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট হিসেবে নামে এবং মানে নাম্বার ওয়ান হতে চাই। অনেক দূর নিয়ে যেতে চাই ব্যবসাকে। মালয়েশিয়াতে ঘুরতে আসা পর্যটকরা যেন বাংলাদেশি খাবার মানে আযনূরাকেই বোঝেন।

তারা বলেন, এখানে মানুষ খেতে আসে। দেশের মানুষদের মধ্যে একাত্মতা তৈরি হয়। এটা খাওয়া ছাড়াও বেশি পাওয়া। অনেক সময় প্রবাসী বাংলাদেশিরা খেলে তাদের জন্যে আমরা কিছু ছাড় দেই। দেশের মানুষকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি।

কুয়ালালামপুরের অন্যান্য খাবারের দোকানের তুলনায় এখানে দামটাও একটু হাতের নাগালে। সবসময় কিছু আনকমন আইটেম রাখার চেষ্টা করি, বলেন বাদল।

শুধু রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া নয়। পার্সেলও নেয়া যেতে পারে এখান থেকে। দেড় থেকে ২ হাজার লোকের অর্ডার নেয়ার প্রস্তুতি সবসময়ই থাকে রেস্টুরেন্টটির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.