ঢাকা: ৭ হাজার ১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১১টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল (জিওবি) থেকে ২ হাজার ১৭৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার যোগান দেয়া হবে। সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে দেয়া হবে ২৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। প্রকল্প সহায়তা পাওয়া যাবে ৪ হাজার ৮১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা।
মঙ্গলবার এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের এ ব্যাপারে ব্রিফ করেন।
সভায় ‘ন্যাচারাল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট (ইন্সটলেশন অব গ্যাস কমপ্রেসার) নামক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম প্রধান তিতাস ও নরসিংদী গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাসের চাপ দিন দিন কমে আসছে। ফলে এ দুটো গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন ও জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ দিন দিন কমে যাচ্ছে। গ্যাসের চাপ এভাবে কমে যেতে থাকলে আগামী ৩ থেকে ৭ বছরের মধ্যে এদুটো গ্যাসক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিড লাইনের চাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গ্যাস সরবরাহ করা আর সম্ভব হবে না। এ সমস্যার সমাধান পেতে এদুটো গ্যাসফিল্ডে মোট ছয়টি ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন করবে সরকার। ফলে গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি পাবে এবং উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাবে। কম্প্রেসর স্থাপনের এ প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুন মাস নাগাদ বাস্তবায়িত করবে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড।
এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬৮ কোটি টাকা। জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা মোট ব্যয়ের মধ্যে ৭২৯ কোটি টাকা দেবে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে। বাকি ১৩৯ কোটি টাকা সরকার দেবে।
গ্যাসের অপচয় ও সিস্টেম লস ঠেকাতে এখন থেকে সব গ্যাস সংযোগ প্রিপেইড মিটার ভিত্তিক করতে যাচ্ছে সরকার।
‘ন্যাচারেল গ্যাস ইফিসিয়েন্সি প্রজেক্ট (ইন্সটলেশন অব প্রিপেইড গ্যাস মিটার ফর জিডিসিএল) শীর্ষক অপর একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায় দুধাপে মোট ৬০ হাজার গৃহস্থালী প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার দেবে ৮১ কোটি টাকা, প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৫৪ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএস) জুলাই ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর কার্যক্রমকে আরো যুগোপযোগী ও আধুনিকায়নের জন্য ‘মর্ডানাইজেশন অব ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’ নামক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক সভায়।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের জন্য উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ চারটি রেসকিউ কমান্ড ভেহিকল কেনা হবে। এছাড়াও ৬০টন কেপাসিটির তিনটি এক্সকাভেটর, একটি হেভি ডিউটি ক্রেনও কেনা হবে। অগ্নিনির্বাপন ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য ১২টি টোয়িং ভেহিকল, ১১ হাজার লিটার ধারণক্ষমতা সম্পন্ন চারটি স্পেশাল ওয়াটার টেন্ডারও এ প্রকল্পের আওতায় ক্রয় করা হবে।
অগ্নিনির্বাপন ও উদ্ধার কাজে ব্যবহারের জন্য ইমার্জেন্সি টেন্ডার নামের পাঁচটি ও টার্নটেবল লেডার নামের চারটি অত্যাধুনিক গাড়িও এ প্রকল্পের মাধ্যমে কেনা হবে। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে অনুমোদিত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৯৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ২০১৭ সালের জুন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করবে।
বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালি, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, ফেনী, লক্ষীপুর ও নোয়াখালি এ নয়টি উপকূলীয় জেলার ৭৪টি উপজেলায় জনগণের জানমাল ও গবাদিপশু রক্ষায় ৫৫৬টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ করবে সরকার। এজন্য ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্র (এমডিএসপি)’ নামক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য দেবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে। এরই সঙ্গে ৫৫০ কিলোমিটার সাইক্লোন সেন্টার সংযোগকারী সড়ক নির্মাণ ও পুননির্মাণ করা হবে বলেও জানান পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
একনেক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় চট্টগ্রাম-সন্দীপ-হাতিয়া-বরিশাল উপকূলীয় রুটে সারা বছর যাত্রীবাহী নৌ-সার্ভিস বজায় রাখতে দুটি জাহাজ নির্মাণ করা হবে। বিআইডব্লিউটিসি ৫০০ ও ৭০০ যাত্রী ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এদুটি যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে ‘চট্টগ্রাম-সন্দীপ-হাতিয়া-বরিশাল উপকূলীয় রুটে দক্ষ যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণ’ প্রকল্প। ৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে।
‘বাংলাদেশের ১৩টি নদী বন্দরে প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার নির্মাণ’ নামে অপর একটি প্রকল্প নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর সম্পূর্ণ সরকারি খরচে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে।
‘মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম (৬ষ্ঠ পর্যায়)’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০১৯ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে।
সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। আজকের একনেক সভায় ‘ইকোনোমিক এমপাওয়ারমেন্ট অব দ্যা পোরেস্ট ইন বাংলাদেশ (ইইপি) দ্বিতীয় সংশোধিত’, রংপুর বিভাগে মৎস্য উন্নয়ন’, ‘সোনাইমুড়ি, কালিগঞ্জ, আড়াইহাজার এবং মঠবাড়িয়া উপজেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও হোস্টেল নির্মাণ’,‘ব্রুড ব্যাংক স্থাপন (৩য় পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পগুলোর অনুমোদন দেয়া হয়।