হঠাৎ অবসরে ধোনি

মহেন্দ্র সিং ধোনিকে ‘পরশ পাথর’ এর সঙ্গে তুলনা করাই যায়। ক্যাপ্টেন কুল যেখানেই হাত দিয়েছেন, মাটিও যেন সোনা হয়ে গেছে। কী ব্যাটিং, কী উইকেট কিপিং -সব জায়গাতেই সফল। তবে ভারতীয় তারকার সবচেয়ে বড় সাফল্য তার নেতৃত্বে। অধিনায়ক হওয়ার পর তিনি ভারতকে প্রথম টি-২০ বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই দীর্ঘ ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ শিরোপা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছে। টেস্টে ভারতকে টানা ২১ মাস (নভেম্বর, ২০০৯- আগস্ট, ২০১১) র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বরে রেখেছিলেন। ভারতের সেরা এই অধিনায়ক গতকাল টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছেন। মেলবোর্ন টেস্টে টেস্ট ড্র হওয়ায় সিরিজ হেরে যাওয়ার পর অবসরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি। তবে ক্যাপ্টেন কুল গুডবাই জানিয়েছেন কেবলমাত্র টেস্ট ক্রিকেটকে, তিনি ওয়ানডে ও টি-২০ চালিয়ে যাবেন।

অধিনায়ক হিসেবে টি-২০ ও ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত পারফর্ম করার পর ২০০৮ সালে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ধোনিকে টেস্ট দলেরও দায়িত্ব দেয়। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। তবে ২০১১ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পর ইংল্যান্ড সফরের গিয়ে হোঁচট খান ধোনি। ওই সিরিজে টেস্টে ও ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ হয়ে যায় তারা। টেস্টের শীর্ষ স্থানও হারায় ভারত। এরপর বিদেশের মাটিতে আর কোনো টেস্ট সিরিজই জিততে পারেনি তার দল। আগেরবার অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে স্বাগতিকদের সঙ্গেও সিরিজ হারে ৪-০তে। তবে ঘরের মাঠে ধোনির দাপট ছিল দুর্দান্ত। কিন্তু বিদেশের মাটিতে ব্যর্থতার পর ধোনির অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে। শেবাগ, গম্ভীরের মতো তারকারাও দল থেকে বাদ পড়ার জন্য ধোনিকে দায়ী করেছিলেন। তবে যে যাই বলুক না কেন, ক্যাপ্টেন কুল সব সময় পাশে পেয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। কিন্তু শেষ বেলায় ভারত বোর্ডকে না জানিয়েই অবসরের ঘোষণা দেন। সে কারণে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দেবে বিরাট কোহলি।

মহেন্দ্র সিং ধোনিই ভারতের সেরা অধিনায়ক। তার নেতৃত্বে খেলা ৬০ টেস্টের মধ্যে ভারত হেরেছে মাত্র ১৮টি টেস্টে। ড্র ১৫টি। আর জয় ২৭টি। দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতেও ভালো সময়ই কাটিয়েছেন তিনি। ৯০ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৩৮.০৯ গড়ে করেছেন ৪,৮৭৬ রান। ৬টি সেঞ্চুরি রয়েছে তার। ধোনির সবচেয়ে বড় গুণ ছিল, যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি মাথা ঠাণ্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। মাঠে কখনো তিনি মাথা গরম করেননি। এ কারণেই তো সবার কাছে তিনি ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামে পরিচিত।

ভারতীয় ব্যাটিং জিনিয়াস শচীন টেন্ডুলকার ধোনির উদ্দেশ্যে তার টুইটারে লিখেছেন, ‘অসাধারণ এক টেস্ট ক্যারিয়ারের ইতি টানার জন্য অভিনন্দন। একসঙ্গে খেলার সময় খুব উপভোগ করেছি তোমার সঙ্গ। বন্ধু, এখন বিশ্বকাপ-২০১৫কে টার্গেট করো!’ সাবেক অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার বলেন, ‘ভারত অনেক বেশি মিস করবে ধোনি, কারণ সে ভারতীয় ক্রিকেটে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ধোনি খুবই চমৎকারভাবে উইকেট কিপিং করার পাশাপাশি অধিনায়কত্বের চাপও দারুণভাবে সামাল দিয়েছেন।’ ধোনির অবসরের কথা শুনে রীতিমতো অবাক ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিশান বেদি। তিনি বলেন, ‘ধোনির মধ্যে সত্যিই বিশেষ ধরনের ক্ষমতা রয়েছে। অবসরের জন্য তাকে শুভকামনা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *